ঢাকা ০২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫
স্বাস্থ্য প্রতিদিন

তামাক ছাড়তে সাহায্য করবেন যেভাবে

  • আপডেট সময় : ০৬:৩৭:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: তামাক ছাড়ার সময় একজন মানুষের শরীরে ও মনে নানা রকম পরিবর্তন আসে-ধৈর্যহীনতা, উদ্বেগ, মাথাব্যথা, মনমরা ভাব বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তামাক বা সিগারেট-বিড়ির আসক্তি শুধু একটি বদভ্যাস নয়, এটি এক মানসিক ও শারীরিক নির্ভরতা। চাইলেও এর থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু যখন আপনার কোনো প্রিয়জন-পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-এই অভ্যাস ত্যাগ করতে চান, তখন তাদের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সাহায্য ও সঙ্গই হতে পারে তাদের সাহস ও সাফল্যের ভিত্তি। জেনে নিন কীভাবে কাছের মানুষকে তামাক ছাড়তে সাহায্য করবেন-
১. সমালোচক নয়, সহানুভূতিশীল হোন: ধূমপান বা যেকোনো তামাকজাত পণ্য ছাড়ার চেষ্টা সহজ নয়। অনেকে অনেকবার চেষ্টা করেও সফল হন না। এ সময় তাদের তিরস্কার না করে সহানুভূতির চোখে দেখা উচিত। তাদের চেষ্টাকে উৎসাহিত করুন। তাকে জানান যে কাজটি কঠিন হলেও আপনি তার পাশে আছেন। কঠিন সময়ে এই কথাগুলোই হয়ে উঠতে পারে একধরনের মানসিক শাক্তি। যা ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দিবে না।
২. প্রক্রিয়াটিকে বোঝার চেষ্টা করুন: তামাক ছাড়ার সময় একজন মানুষের শরীরে ও মনে নানা রকম পরিবর্তন আসে-ধৈর্যহীনতা, উদ্বেগ, মাথাব্যথা, মনমরা ভাব বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব উপসর্গ সম্পর্কে আগে থেকেই জানা থাকলে আপনি তার আচরণকে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। এতে করে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সহানুভূতির সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। তামাক ছাড়তে প্রিয়জনকে সাহায্য করবেন যেভাবেতামাক ছাড়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, কাউন্সেলিং বা নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অনেক সময় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. ছোট ছোট অর্জনকে উদ্যাপন করুন: তামাক ছাড়ার পথে প্রতিটি ধাপই একটি বিজয়। হয়তো আপনার প্রিয়জন একদিন, এক সপ্তাহ বা এক মাস ধূমপান থেকে দূরে থাকতে পেরেছেন – এই অর্জনকে উদ্যাপন করুন। একটি ছোট উপহার, প্রিয় কোনো খাবার বা একটি প্রশংসাসূচক চিঠি তাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। এসব উৎসাহের মুহূর্ত তার জন্য হতে পারে বড় অনুপ্রেরণা।
৪. বিকল্প অভ্যাস গড়তে সাহায্য করুন: ধূমপানের অভ্যাস অনেক সময় নির্দিষ্ট সময় বা আবেগের সঙ্গে জড়িত থাকে-যেমন চাপের মুহূর্তে, চায়ের সঙ্গে, বা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে। এই জায়গাগুলোর পরিবর্তে বিকল্প কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। ধরুন, চায়ের সময় গল্প করুন, চাপের সময়ে হাঁটতে বের হন, অথবা তার হাতে দিন স্ট্রেস বল বা হেলদি স্ন্যাকস।
৫. নেতিবাচকতা থেকে দূরে রাখুন: যদি কেউ তার চারপাশে ধূমপানরত বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাহলে সেখানে তার পক্ষে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি তার পরিবেশে ইতিবাচকতা আনতে পারেন-ধূমপানবিরোধী সিনেমা দেখা, ধূমপানমুক্ত জায়গায় ঘোরাফেরা করা বা স্বাস্থ্যসচেতন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো।
৬. প্রয়োজন হলে পেশাদার সহায়তা নিতে উৎসাহ দিন: তামাক ছাড়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, কাউন্সেলিং বা নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অনেক সময় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আপনার প্রিয়জন যদি নিজে থেকে এই সাহায্য নিতে না চান, তাহলে আপনি পরামর্শ দিতে পারেন, যেন তিনি এটা নেতিবাচকভাবে না নেন। আপনি চাইলে তার সঙ্গে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টেও যেতে পারেন। তামাক ছাড়তে প্রিয়জনকে সাহায্য করবেন যেভাবেতামাক ছাড়ার চেষ্টা অনেক সময় ব্যর্থ হতে পারে, আবার শুরু করার পর হঠাৎ করে পুরনো অভ্যাসে ফিরে যেতেও পারে।
৭. ধৈর্য ধরুন: তামাক ছাড়ার চেষ্টা অনেক সময় ব্যর্থ হতে পারে, আবার শুরু করার পর হঠাৎ করে পুরনো অভ্যাসে ফিরে যেতেও পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে চেষ্টা বৃথা। সঠিক সাপোর্ট পেলে মানুষ আবার উঠে দাঁড়াতে পারে। তাই কখনো তাকে হতাশ করবেন না। বরং বলুন, ‘তুমি চেষ্টা করেছো, এটাই বড় ব্যাপার। চলো আবার শুরু করা যাক।’
ভালোবাসার স্পর্শেই আসে পরিবর্তন। তাই তামাক ছাড়ার পথে আপনার প্রিয়জনের সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে আপনার ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ধৈর্য। সত্যি তাদের পাশে কেউ আছে – এই মানসিক শক্তি তাকে ধূমপানের অন্ধকার পথ থেকে মুক্ত আলোয় নিয়ে আসতে পারে। তাই শুধু ‘ছেড়ে দাও’ না বলে বলুন ‘আমি তোমার সঙ্গে আছি।’

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্বাস্থ্য প্রতিদিন

তামাক ছাড়তে সাহায্য করবেন যেভাবে

আপডেট সময় : ০৬:৩৭:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: তামাক ছাড়ার সময় একজন মানুষের শরীরে ও মনে নানা রকম পরিবর্তন আসে-ধৈর্যহীনতা, উদ্বেগ, মাথাব্যথা, মনমরা ভাব বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তামাক বা সিগারেট-বিড়ির আসক্তি শুধু একটি বদভ্যাস নয়, এটি এক মানসিক ও শারীরিক নির্ভরতা। চাইলেও এর থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু যখন আপনার কোনো প্রিয়জন-পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-এই অভ্যাস ত্যাগ করতে চান, তখন তাদের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সাহায্য ও সঙ্গই হতে পারে তাদের সাহস ও সাফল্যের ভিত্তি। জেনে নিন কীভাবে কাছের মানুষকে তামাক ছাড়তে সাহায্য করবেন-
১. সমালোচক নয়, সহানুভূতিশীল হোন: ধূমপান বা যেকোনো তামাকজাত পণ্য ছাড়ার চেষ্টা সহজ নয়। অনেকে অনেকবার চেষ্টা করেও সফল হন না। এ সময় তাদের তিরস্কার না করে সহানুভূতির চোখে দেখা উচিত। তাদের চেষ্টাকে উৎসাহিত করুন। তাকে জানান যে কাজটি কঠিন হলেও আপনি তার পাশে আছেন। কঠিন সময়ে এই কথাগুলোই হয়ে উঠতে পারে একধরনের মানসিক শাক্তি। যা ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দিবে না।
২. প্রক্রিয়াটিকে বোঝার চেষ্টা করুন: তামাক ছাড়ার সময় একজন মানুষের শরীরে ও মনে নানা রকম পরিবর্তন আসে-ধৈর্যহীনতা, উদ্বেগ, মাথাব্যথা, মনমরা ভাব বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব উপসর্গ সম্পর্কে আগে থেকেই জানা থাকলে আপনি তার আচরণকে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। এতে করে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সহানুভূতির সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। তামাক ছাড়তে প্রিয়জনকে সাহায্য করবেন যেভাবেতামাক ছাড়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, কাউন্সেলিং বা নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অনেক সময় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. ছোট ছোট অর্জনকে উদ্যাপন করুন: তামাক ছাড়ার পথে প্রতিটি ধাপই একটি বিজয়। হয়তো আপনার প্রিয়জন একদিন, এক সপ্তাহ বা এক মাস ধূমপান থেকে দূরে থাকতে পেরেছেন – এই অর্জনকে উদ্যাপন করুন। একটি ছোট উপহার, প্রিয় কোনো খাবার বা একটি প্রশংসাসূচক চিঠি তাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। এসব উৎসাহের মুহূর্ত তার জন্য হতে পারে বড় অনুপ্রেরণা।
৪. বিকল্প অভ্যাস গড়তে সাহায্য করুন: ধূমপানের অভ্যাস অনেক সময় নির্দিষ্ট সময় বা আবেগের সঙ্গে জড়িত থাকে-যেমন চাপের মুহূর্তে, চায়ের সঙ্গে, বা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে। এই জায়গাগুলোর পরিবর্তে বিকল্প কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। ধরুন, চায়ের সময় গল্প করুন, চাপের সময়ে হাঁটতে বের হন, অথবা তার হাতে দিন স্ট্রেস বল বা হেলদি স্ন্যাকস।
৫. নেতিবাচকতা থেকে দূরে রাখুন: যদি কেউ তার চারপাশে ধূমপানরত বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাহলে সেখানে তার পক্ষে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি তার পরিবেশে ইতিবাচকতা আনতে পারেন-ধূমপানবিরোধী সিনেমা দেখা, ধূমপানমুক্ত জায়গায় ঘোরাফেরা করা বা স্বাস্থ্যসচেতন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো।
৬. প্রয়োজন হলে পেশাদার সহায়তা নিতে উৎসাহ দিন: তামাক ছাড়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, কাউন্সেলিং বা নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অনেক সময় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আপনার প্রিয়জন যদি নিজে থেকে এই সাহায্য নিতে না চান, তাহলে আপনি পরামর্শ দিতে পারেন, যেন তিনি এটা নেতিবাচকভাবে না নেন। আপনি চাইলে তার সঙ্গে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টেও যেতে পারেন। তামাক ছাড়তে প্রিয়জনকে সাহায্য করবেন যেভাবেতামাক ছাড়ার চেষ্টা অনেক সময় ব্যর্থ হতে পারে, আবার শুরু করার পর হঠাৎ করে পুরনো অভ্যাসে ফিরে যেতেও পারে।
৭. ধৈর্য ধরুন: তামাক ছাড়ার চেষ্টা অনেক সময় ব্যর্থ হতে পারে, আবার শুরু করার পর হঠাৎ করে পুরনো অভ্যাসে ফিরে যেতেও পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে চেষ্টা বৃথা। সঠিক সাপোর্ট পেলে মানুষ আবার উঠে দাঁড়াতে পারে। তাই কখনো তাকে হতাশ করবেন না। বরং বলুন, ‘তুমি চেষ্টা করেছো, এটাই বড় ব্যাপার। চলো আবার শুরু করা যাক।’
ভালোবাসার স্পর্শেই আসে পরিবর্তন। তাই তামাক ছাড়ার পথে আপনার প্রিয়জনের সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে আপনার ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ধৈর্য। সত্যি তাদের পাশে কেউ আছে – এই মানসিক শক্তি তাকে ধূমপানের অন্ধকার পথ থেকে মুক্ত আলোয় নিয়ে আসতে পারে। তাই শুধু ‘ছেড়ে দাও’ না বলে বলুন ‘আমি তোমার সঙ্গে আছি।’