বিদেশের খবর : এক দিনের সফর শেষে তাইওয়ান ছেড়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। গতকাল বুধবার তিনি আমেরিকান এয়ারফোর্সের একটি বিমানে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে তাইওয়ান ছেড়ে যান। তাইওয়ান ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে এক টুইটে চীনকে সতর্ক করে পেলোসি বলেছেন, ‘কোনো ভুল করবেন না। বর্তমানে ও আগামী কয়েক দশকের জন্য আমেরিকা তাইওয়ানের জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছে।’ এর আগে তিনি তার সফর সম্পর্কে আরেকটি টুইটে বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধিদল তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের বিশেষ সুযোগ পেয়েছে। আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে আমেরিকা ও তাইওয়ান অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারে, আমাদের নিরাপত্তা অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং আমাদের ভাগাভাগি করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে পারে।’ প্রসঙ্গত, চীনের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে মঙ্গলবার তাইওয়ানে যান পেলোসি। ২৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা তাইওয়ান সফর করলেন। তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র নয়, বরং নিজেদের বিচ্ছিন্ন অঞ্চল বলে দাবি করে আসছে চীন। তাই পেলোসির তাইওয়ান সফরকে যুদ্ধের প্ররোচনা বলে অভিযোগ করছে বেইজিং।
সামরিক অভিযানের ঘোষণা চীনের
এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, পেলোসির সফরের প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের বিভিন্ন স্থানে লক্ষ্যযুক্ত সামরিক অভিযান পরিচালনা করবে বেইজিং। আলাদাভাবে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড বলেছে যে মঙ্গলবার রাত থেকেই তাইওয়ানের কাছে যৌথ সামরিক অভিযান ও মহড়া পরিচালনা করবে তারা। ইস্টার্ন কমান্ড জানিয়েছে, এই সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হবে পুরো তাইওয়ানকে ঘিরে। দ্বীপটির উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে সমুদ্রে বিমান ও যুদ্ধজাহাজ মহড়ায় অংশ নেবে। এসব মহড়ায় দূরপাল্লার লাইভ ফায়ারিং ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও থাকবে। ৪ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত এই মহড়া চলবে। তবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষিত সামরিক অভিযানে লক্ষ্যবস্তু কী হবে এবং ইস্টার্ন কমান্ডের মহড়া থেকে এটি আলাদা হবে কি না, তার বিশদ বিবরণ দেয়নি বেইজিং। এদিকে বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যানসহ চারটি যুদ্ধজাহাজ পূর্ব তাইওয়ানের কাছে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বহরে আরও রয়েছে মিসাইল ক্রুজার ও ডেস্ট্রয়ার।
চীনের মহড়া আকাশ ও নৌ পথ অবরোধের সামিল: তাইওয়ান
তাইওয়ানের আশপাশের অঞ্চলে চীনের সামরিক মহড়ার পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশটির সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটির সফরের প্রতিক্রিয়ায় এই মহড়ার পরিকল্পনা করে বেইজিং। খবর বিবিসি। তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘এ ধরনের সামরিক মহড়া তাইওয়ানের আঞ্চলিক স্থান আক্রমণ করার মতো। একইসঙ্গে তাইওয়ানের আকাশ ও সমুদ্রের স্থান অবরোধ করার সামিল।’ চীনে অবস্থানরত বিবিসির প্রতিনিধি স্টিফেন ম্যাকডোনেল বেইজিংয়ের মহাড়ার পরিকল্পনার একটি ম্যাপির ছবি টুইট করেন। যা দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ন্যান্সি পেলোসি চলে যাওয়ার পরে আজ বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) এবং রোববারের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে চীনের এই মহড়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, ‘এটি একটি অপ্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া। নিজ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তাইওয়ান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘তাইওয়ানের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে এমন যেকোনো পদক্ষেপের প্রতিহত করবে’ দেশটির সামরিক বাহিনী। এদিকে বেইজিং জানিয়েছে, তাদের মহড়া চলাকালে বিদেশি বিমান বা জাহাজ এই এলাকায় প্রবেশ করা উচিত হবে না।
তাইওয়ান সফর শেষ ন্যান্সি পেলোসির, সামরিক অভিযানের ঘোষণা চীনের
ট্যাগস :
তাইওয়ান সফর শেষ ন্যান্সি পেলোসির
জনপ্রিয় সংবাদ