নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোটের মাঠে তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলছেন, সেটা ছিল নিছকই ‘কথার পিঠে কথা’।
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের তৃতীয় দিনে ফের ‘তলোয়ার’ প্রসঙ্গ উঠলে তিনি ওই ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
সকালে ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) নেতারা সিইসির ওই বক্তব্যের সমালোচনা করলে নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমকে পাল্টা দোষারোপ করেন হাবিবুল আউয়াল।
ভোটের মাঠে কেউ শক্তি প্রদর্শন করলে প্রতিরোধ করার পরামর্শ দিয়ে সংলাপের প্রথম দিন রোববার সিইসি বলেছিলেন, “আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকেও কিন্তু রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
“আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কী করব? কাজেই আমরা সাহায্য করব। পুলিশের উপর, সরকারের উপর আমাদের কমান্ড থাকবে।”
তার ওই বক্তব্য ‘সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার মত’ বলে সমালোচনা ওঠে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিবৃতি দিয়ে ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।
মঙ্গলবার ইসলামী ঐক্যজোট নেতারা সেই প্রসঙ্গ টেনে সিইসির কথার সমালোচনা করেন। পরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, সংবাদমাধ্যমে তার বক্তব্যটি ‘ভুলভাবে’ প্রচার করা হয়েছে; সিইসি হিসেবে ‘প্রকৃত অর্থে’ তিনি ওই কথা বোঝাননি। “আমার এক ভাই বলেছেন- একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। পরশু আমি বলেছিলাম যে, কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন।
“এটা আপনাদের বুঝতে হবে, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই কথাটি কখনো মিন করে বলতে পারেন না। আমি হয়ত অল্প শিক্ষিত; অল্প শিক্ষিত হলেও এ ধরনের কথা বলতে পারেন না।”
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “এটা হচ্ছে কথার পিঠে কথা। এটা কখনো একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিন করতে পারে না। … ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে ‘হিউমার’ বা কৌতুক করে বলা।
“এটাকে জাতীয় পর্যায়ে- একেবারে অকাট্য সত্য, যেন একটা ঐশী বাণী হিসেবে প্রচার করে, অনেক ধরনের ব্যানার দিয়ে- যেটাতে আমরা…।”
সংবাদমাধ্যমে তথ্য সরবরাহে নির্বাচন কমিশনের ‘উদার নৈতিক’ অবস্থানের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, যতগুলো সম্মেলন বা আলোচনা হয়েছে, তাতে কোনো রাখঢাক করা হয়নি। বড় স্ক্রিনে কথা ও ছবি প্রচার করা হয়।
“কিন্তু কেন মিডিয়া এটা করলেন? এটা কী বুঝে না, না-বুঝে? উনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা খুবই আছে। কিন্তু এটা করে আমার মর্যাদাকে একেবাবেই ক্ষুণ্ন করে দেওয়া হয়েছে এবং আপনারাও এটা বিশ্বাস করছেন। আমার বাবা বেঁচে থাকলে উনিও বিশ্বাস করতেন যে, আমার ছেলে এমন বাজে পরামর্শ দিল কেন? আমার মা বেঁচে থাকলেও বিশ্বাস করতেন।
“ওরা সবাই পেপার পড়তেন। পেপার পড়ে তারা হয়তো বলতেন ‘বাবু’ এত খারাপ পরামর্শ দিলে কেন? তো আমি এজন্য এটাই বলব- কখনও কখনও আমরা ভুল করে ফেলি। এর জন্য অনুতপ্ত। আমি হিউমার করতে গিয়েছিলাম; এটাই আসল।”
‘তলোয়ার-রাইফেল’ প্রসঙ্গটি সংবাদমাধ্যমে ‘বস্তুনিষ্ঠভাবে’ প্রচার করা হয়নি দাবি করে খেদ প্রকাশ করেন হাবিবুল আউয়াল।
“ওটাকে ওইভাবে প্রচার না করে কিছুটা বস্তুনিষ্ঠভাবে যদি বলা হত- ‘উনি হিউমার করে বলেছেন’; তাহলে আমার হয়ত…।
“আমি এটা বলেছি, এটা আপনারাও (ঐক্যজোট) বিশ্বাস করেছেন। এজন্য বলেছেন আমি যেন এ ধরনের কথা না বলি। কিন্তু এটা আমি মিন করে বলিনি। যাক আমাকে ক্ষমা করবেন এজন্য। ক্ষমা করবেন।”
ইসি সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে জানান সিইসি।
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রসঙ্গ : নির্বাচনকালীন সরকারের আকার নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা নিজেদের দাবি সংলাপে তুলে ধরলে তা সরকারের কাছে উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনীর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়ে ১১ দফা সুপারিশ জানান। এর মধ্যে একটি সুপারিশে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে পরবর্তী সরকার গঠন পর্যন্ত বিদ্যমান সরকার শুধু রুটিন কাজ করবে এবং নির্বাচনকালীন সরকারের আকার সীমিত রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “এই প্রস্তাবের সাথে আমরা একমত পোষণ করছি না, দ্বিমতও পোষণ করছি না; এটা রাজনৈতিক বিষয়। এই দাবিগুলো আপনারা করবেন। এই বক্তব্য আপনারা সরকারের কাছে উপস্থাপন করুন। আমাদের দায়িত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।”
রাজনৈতিক দলগুলোকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে নির্বাচনী মাঠে আসার পরামর্শ দেন হাবিবুল আউয়াল। “রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব- আপনারা আন্তঃদলীয় সংলাপ করেন। মিটিং করেন। কিছু প্রশ্নে মোটাদাগে একমত হওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ এটা কিন্তু বড় ধরনের সমস্যা। কেন্দ্রে কেন্দ্র সহিংসতা হয়।
“অর্থ ও পেশী শক্তির চক্রের সমাধান করা। আমাদের সমবেত প্রচেষ্টা না থাকলে নির্বাচন কমিশন একার পক্ষে এটা সমাধান করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।”
মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি সংলাপে যোগ দেয়নি। দুপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সংলাপে অংশ নেয়। আর বিকালে সাম্যবাদী দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ হয়।
তলোয়ার-রাইফেল ছিল নিছক কথার পিঠে কথা, তবু অনুতপ্ত সিইসি
ট্যাগস :
তলোয়ার-রাইফেল ছিল নিছক কথার পিঠে কথা
জনপ্রিয় সংবাদ