প্রত্যাশা ডেস্ক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া থামাতে ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে তলবের পাল্টায় একই রকম পদক্ষেপ নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর কূটনৈতিক ভাষায় জবাব দিয়েছে নয়া দিল্লি।
ভারত বলেছে, এটা খুবই দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ সরকারের নিয়মিত বিবৃতিগুলোতে ভারতকে ক্রমাগত নেতিবাচকভাবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে; অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রশ্নে তারা আমাদের দোষারোপ করে যাচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশের এসব বিবৃতিই বিরাজমান নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
শেখ হাসিনা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেগুলোর পেছনে ‘ভারতের কোনো ভূমিকা নেই’ মন্তব্য করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে এর সঙ্গে দিল্লিকে জড়ালে ‘ইতিবাচক’ কোনো ফল আসবে না।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নুরুল ইসলামকে তলব করে দিল্লির এই অবস্থান জানিয়ে দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল পরে এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক, গঠনমূলক ও পরস্পরের জন্য মঙ্গলজনক একটি সম্পর্ক চায় ভারত; সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও সে কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গতবছর ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সেই অনুরোধের কোনো জবাব ভারত দেয়নি।
ভারতে বসে শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট হয়।
বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর থামানোর আহ্বান জানালেও সেজন্য শেখ হাসিনাকেই দায়ী করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একই বার্তা দেয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ভারতকে আমরা লিখিতভাবে অনুরোধ করেছি যে, শেখ হাসিনাকে বিরত রাখার জন্য, যেন উনি এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি না দেন। এটা বাংলাদেশের বিপক্ষে যাচ্ছে। আমরা এটার জবাব পাইনি এখনও।
তাদের কয়েকদিনের কার্যকলাপের কারণে আমরা আজ (বুধবার) আরেকবার প্রতিবাদপত্র দিয়েছি। হাই কমিশনার এই মুহূর্তে নেই, ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে ডেকে তার হাতে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছে। আমরা আবারও অনুরোধ করেছি, তাকে যেন বিরত রাখা হয়।
এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে যে মন্তব্যগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো তিনি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে করেছেন, যাতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। এগুলোকে ভারত সরকারের অবস্থানের সঙ্গে মেলানো হলে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে না। ভারত সরকার যখন পরস্পরের জন্য মঙ্গলজনক সম্পর্কের প্রচেষ্টা চালাবে, তখন আমরা আশা করব, পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে বাংলাদেশও একই ধরনের মনোভাব দেখাবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলা হয়।