ঢাকা ১১:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

তরল বলবিদ্যায় আদর্শ কফি তৈরির কৌশল আবিষ্কার

  • আপডেট সময় : ০৫:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

লাইফস্টাইল ডেস্ক: কফি তৈরি করা অনেকের কাছে শুধুই একটি দৈনন্দিন অভ্যাস। কিন্তু গবেষকদের চোখে এটি নিছক বিজ্ঞান। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার বিজ্ঞানীরা তরল বলবিদ্যা ব্যবহার করে আদর্শ ‘পোর-ওভার’ কফি তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেছেন। তাদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে ছোটখাটো পরিবর্তন এনে স্বাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। এর পাশাপাশি বিষয়টি কফির অপচয়ও কমায়।

কফির কাপে বিজ্ঞান: সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার মতো কফি উৎপাদনকারী দেশগুলোতে আবহাওয়ার সমস্যা এবং শুল্ক বাড়ার কারণে কফির দাম বেড়েছে। ফলে প্রতিদিন কফি পান এখন আর অভ্যাস নয়; যেন এক ধরনের বিলাসিতা। ঠিক এই সময়ে একদল কফিপ্রেমী পদার্থবিজ্ঞানী ও তরল বলবিদ্যা বিশেষজ্ঞ কফি তৈরির এক যুগান্তকারী পদ্ধতি নিয়ে হাজির হয়েছেন। সেই পদ্ধতি কফির গুঁড়াকে আরও কার্যকরীভাবে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলবে।

অন্যরা যেখানে লাতে আর্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, সেখানে এই বিজ্ঞানীরা মনোযোগ দিলেন কফি তৈরির মূল যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে। তাদের লক্ষ্য ছিল, শুধু নান্দনিকতা নয়, বরং কফির স্বাদ ও কার্যকারিতা উন্নত করা। অধ্যাপক আর্নল্ড ম্যাথিজসেন ইউএসএ টুডেকে জানান, তাদের ল্যাবের কফি স্টেশনে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল খুব সাধারণভাবে। যেখানে প্রতিদিন বিজ্ঞান আর ক্যাফেইন মিলিত হতো। পোরিং বা ঢালার কৌশল নিয়ে শুরু হওয়া সেই সাধারণ ভাবনা দ্রুতই সুসংগঠিত পরীক্ষায় রূপ নেয়। সেসব একদল ক্যাফেইন আসক্ত বিজ্ঞানী তাদের ল্যাব নোটবুকে নিপুণভাবে নথিভুক্ত করেন।

অদৃশ্যকে দেখার কৌশল: কফি গুঁড়া অস্বচ্ছ হওয়ায় এর ভেতরে কী ঘটছে, তা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন ছিল। ভেতরে তরল পদার্থের আচরণ বুঝতে, বিজ্ঞানীরা কফি গুঁড়ার বদলে স্বচ্ছ সিলিকা জেল ব্যবহার করে একটি কৃত্রিম পোর-ওভার ফিল্টার তৈরি করেন। এরপর একটি লেজার লাইট দিয়ে এটিকে আলোকিত করে একটি হাই-স্পিড ক্যামেরা দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি ধারণ করা হয়। কাস্টম পাইথন ও ম্যাটল্যাব কোড ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়, কীভাবে পানির ধারা এই কৃত্রিম কফি স্তরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করছে।

রহস্যময় ‘তুষারধস’: তাদের এই আবিষ্কার এক গুরুত্বপূর্ণ রহস্য উন্মোচন করেছে। তারা দেখতে পান, কফির স্তরের ওপর নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পানি ঢাললে গুঁড়া কফির মধ্যে একটি দানাদার তুষারধস তৈরি হয়। এই আন্দোলন কফি গুঁড়াকে নাড়াচাড়া করে এবং আরও বেশি অংশকে পানির সংস্পর্শে নিয়ে আসে, যা স্বাদের সর্বোচ্চ নির্যাস নিশ্চিত করে।

উচ্চতা যোগ করে গতি: বেশি উচ্চতা থেকে পানি ঢাললে এর গতি বাড়ে; যা তুষারধস তৈরি করে। এই গতি নিশ্চিত করে; যেন কফি কণার সর্বাধিক সারফেস এরিয়া পানির সংস্পর্শে আসে।

নিরবচ্ছিন্ন ধারা: পানি ঢালার সময় যেন ধারাটি ফোঁটা ফোঁটা না হয়ে যায়। পানি মসৃণ ও নিরবচ্ছিন্ন ধারা হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ফোঁটা ফোঁটা পড়লে তুষারধস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কফির নির্যাস অসমান হয়।

হাঁসের গলার মতো কেটলির নল: এই বিশেষ ধরনের কেটলি পানি ঢালার হার এবং ধারার পুরুত্ব নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিরবচ্ছিন্ন ধারা তৈরি করার এটিই সহজ উপায়।

স্বাদের সর্বোচ্চ ব্যবহার: পরীক্ষাগুলো প্রমাণ করেছে, ধীর ও নিয়ন্ত্রিত গতিতে পানি ঢাললে বেশি সুস্বাদু কফি তৈরি হয়।

নির্যাস কতটা হয়েছে, তা মাপতে বিজ্ঞানীরা তৈরি হওয়া কফি থেকে জল বাষ্পীভূত করে অবশিষ্ট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের ওজন পরিমাপ করেন। এটি প্রমাণ করে, কফি ঢালার পদ্ধতি সরাসরি প্রভাবিত করে কতটুকু কফি কাপে আসছে। যদিও এই ল্যাবের স্বাভাবিক কাজ ছিল তরল প্রবাহে ব্যাকটেরিয়ার আচরণ নিয়ে গবেষণা করা। তবু কফি নিয়ে তাদের এই পরীক্ষা একটি সুস্বাদু ও সম্পর্কিত উপায়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই বিজ্ঞানীরা এখন কফি বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী করে তুলছেন। সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান ফায়ার সার্ভিস ডিজির

তরল বলবিদ্যায় আদর্শ কফি তৈরির কৌশল আবিষ্কার

আপডেট সময় : ০৫:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

লাইফস্টাইল ডেস্ক: কফি তৈরি করা অনেকের কাছে শুধুই একটি দৈনন্দিন অভ্যাস। কিন্তু গবেষকদের চোখে এটি নিছক বিজ্ঞান। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার বিজ্ঞানীরা তরল বলবিদ্যা ব্যবহার করে আদর্শ ‘পোর-ওভার’ কফি তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেছেন। তাদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে ছোটখাটো পরিবর্তন এনে স্বাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। এর পাশাপাশি বিষয়টি কফির অপচয়ও কমায়।

কফির কাপে বিজ্ঞান: সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার মতো কফি উৎপাদনকারী দেশগুলোতে আবহাওয়ার সমস্যা এবং শুল্ক বাড়ার কারণে কফির দাম বেড়েছে। ফলে প্রতিদিন কফি পান এখন আর অভ্যাস নয়; যেন এক ধরনের বিলাসিতা। ঠিক এই সময়ে একদল কফিপ্রেমী পদার্থবিজ্ঞানী ও তরল বলবিদ্যা বিশেষজ্ঞ কফি তৈরির এক যুগান্তকারী পদ্ধতি নিয়ে হাজির হয়েছেন। সেই পদ্ধতি কফির গুঁড়াকে আরও কার্যকরীভাবে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলবে।

অন্যরা যেখানে লাতে আর্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, সেখানে এই বিজ্ঞানীরা মনোযোগ দিলেন কফি তৈরির মূল যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে। তাদের লক্ষ্য ছিল, শুধু নান্দনিকতা নয়, বরং কফির স্বাদ ও কার্যকারিতা উন্নত করা। অধ্যাপক আর্নল্ড ম্যাথিজসেন ইউএসএ টুডেকে জানান, তাদের ল্যাবের কফি স্টেশনে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল খুব সাধারণভাবে। যেখানে প্রতিদিন বিজ্ঞান আর ক্যাফেইন মিলিত হতো। পোরিং বা ঢালার কৌশল নিয়ে শুরু হওয়া সেই সাধারণ ভাবনা দ্রুতই সুসংগঠিত পরীক্ষায় রূপ নেয়। সেসব একদল ক্যাফেইন আসক্ত বিজ্ঞানী তাদের ল্যাব নোটবুকে নিপুণভাবে নথিভুক্ত করেন।

অদৃশ্যকে দেখার কৌশল: কফি গুঁড়া অস্বচ্ছ হওয়ায় এর ভেতরে কী ঘটছে, তা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন ছিল। ভেতরে তরল পদার্থের আচরণ বুঝতে, বিজ্ঞানীরা কফি গুঁড়ার বদলে স্বচ্ছ সিলিকা জেল ব্যবহার করে একটি কৃত্রিম পোর-ওভার ফিল্টার তৈরি করেন। এরপর একটি লেজার লাইট দিয়ে এটিকে আলোকিত করে একটি হাই-স্পিড ক্যামেরা দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি ধারণ করা হয়। কাস্টম পাইথন ও ম্যাটল্যাব কোড ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়, কীভাবে পানির ধারা এই কৃত্রিম কফি স্তরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করছে।

রহস্যময় ‘তুষারধস’: তাদের এই আবিষ্কার এক গুরুত্বপূর্ণ রহস্য উন্মোচন করেছে। তারা দেখতে পান, কফির স্তরের ওপর নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পানি ঢাললে গুঁড়া কফির মধ্যে একটি দানাদার তুষারধস তৈরি হয়। এই আন্দোলন কফি গুঁড়াকে নাড়াচাড়া করে এবং আরও বেশি অংশকে পানির সংস্পর্শে নিয়ে আসে, যা স্বাদের সর্বোচ্চ নির্যাস নিশ্চিত করে।

উচ্চতা যোগ করে গতি: বেশি উচ্চতা থেকে পানি ঢাললে এর গতি বাড়ে; যা তুষারধস তৈরি করে। এই গতি নিশ্চিত করে; যেন কফি কণার সর্বাধিক সারফেস এরিয়া পানির সংস্পর্শে আসে।

নিরবচ্ছিন্ন ধারা: পানি ঢালার সময় যেন ধারাটি ফোঁটা ফোঁটা না হয়ে যায়। পানি মসৃণ ও নিরবচ্ছিন্ন ধারা হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ফোঁটা ফোঁটা পড়লে তুষারধস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কফির নির্যাস অসমান হয়।

হাঁসের গলার মতো কেটলির নল: এই বিশেষ ধরনের কেটলি পানি ঢালার হার এবং ধারার পুরুত্ব নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিরবচ্ছিন্ন ধারা তৈরি করার এটিই সহজ উপায়।

স্বাদের সর্বোচ্চ ব্যবহার: পরীক্ষাগুলো প্রমাণ করেছে, ধীর ও নিয়ন্ত্রিত গতিতে পানি ঢাললে বেশি সুস্বাদু কফি তৈরি হয়।

নির্যাস কতটা হয়েছে, তা মাপতে বিজ্ঞানীরা তৈরি হওয়া কফি থেকে জল বাষ্পীভূত করে অবশিষ্ট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের ওজন পরিমাপ করেন। এটি প্রমাণ করে, কফি ঢালার পদ্ধতি সরাসরি প্রভাবিত করে কতটুকু কফি কাপে আসছে। যদিও এই ল্যাবের স্বাভাবিক কাজ ছিল তরল প্রবাহে ব্যাকটেরিয়ার আচরণ নিয়ে গবেষণা করা। তবু কফি নিয়ে তাদের এই পরীক্ষা একটি সুস্বাদু ও সম্পর্কিত উপায়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই বিজ্ঞানীরা এখন কফি বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী করে তুলছেন। সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ