নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন এবং সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রবিবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা দেন। ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে রিজভী বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন। জনমতকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তফসিল জারি করে পুরো দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে সরকার।
বুধবার সন্ধ্যায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে তফসিল প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি দিচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে রবি ও সোমবার ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে হরতাল ঘোষণা করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক।
অন্যদিকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ঘোষণা দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এ সময় দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হরতাল পালনের আহ্বান জানান তিনি।
তফসিল প্রত্যাখান করে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তার নেতাদের মুক্তি ও নেতাকর্মীদের হয়রানির প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর আগে, বুধবার নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সন্ধ্যা ৭টায় বিটিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারির ৭ তারিখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। যা যাচাই-বাছাই করা হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে। সেই সঙ্গে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক ১২ দলীয় জোটের
বাংলাদেশের ভোটাধিকার হরণ ও গণতন্ত্র হত্যার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন নিয়েছে মন্তব্য করে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, জনমত উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সরকারের পদত্যাগ ও অবৈধ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে অবরোধের সমর্থনে ১২ দলীয় জোটের বিক্ষোভ মিছিল শেষে জোট নেতারা এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে ১৯ ও ২০ নভেম্বর সরকারের পদত্যাগ ও তফসিল ঘোষণা বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন নেতারা। জোট নেতারা বলেন, দেশের প্রতিটি কাঠামোর ওপর সরকারের আঘাত ও লুটপাটের চিহ্ন আওয়ামী লীগের নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। তবে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় করতে না পারলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব অরক্ষিত হবে। দেশ রক্ষার প্রয়োজনে দেশবাসীকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, দেশ আমাদের। দেশের মালিক জনগণ, এই সরকারকে ক্ষমতায় রাখলে জনগণ মালিকানা হারাবে। এ সময় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান, লায়ন মো. ফারুক রহমান, জাতীয় পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট হান্নান আহমেদ খান বাবলু ও যুগ্ম মহাসচিব কাজী নজরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে।
তফসিল প্রত্যাখ্যান রবি ও সোমবার সারাদেশে হরতালের ডাক বিএনপির
জনপ্রিয় সংবাদ