ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

তথ্য ও মানবাধিকার কমিশনে শূন্যতায় ‘সরকারের অবহেলা’ দেখছে টিআইবি

  • আপডেট সময় : ০৯:৪১:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আট থেকে দশ মাস ধরে অকার্যকর তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। সংস্থাটি বলেছে, এই দুই প্রতিষ্ঠানের শূন্যতা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের প্রতি সরকারের অবহেলার একটি ‘অগ্রহণযোগ্য’ উদাহরণ। সরকারের জন্য এটি ‘বিব্রতকর রেকর্ড’ হয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন গঠন সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। অথচ দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের কাছাকাছি সময় পার হয়ে গেলেও কমিশন দুটি গঠনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। কেন দীর্ঘকাল যাবৎ তা গঠিত হচ্ছে না, তার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও নেই। তিনি বলেন, কমিশন দুটি অতীতে যত ‘অকার্যকরতারই’ পরিচয় দিক, প্রায় এক বছর নেতৃত্বশূন্য রাখার ‘বিব্রতকর রেকর্ড’ স্থাপনের পাশাপাশি সরকার তার অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মানবাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতির প্রতি নির্বিকার অবহেলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন নেতৃত্বহীন অবস্থায় রাখা শুধু দুঃখজনক নয়, রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা ছাড়া এই শূন্যতার ফলে নাগরিকদের তথ্যে অভিগম্যতা ও মানবাধিকার নিশ্চিতের ন্যূনতম সুযোগও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদলে পরিবর্তনের ঢেউয়ের মধ্যে ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদসহ সব সদস্য। তার আগে সেপ্টেম্বরে পদত্যাগ করেন প্রধান তথ্য কমিশনার ও আরো এক কমিশনার। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর শীর্ষ পদগুলো শূন্য হওয়ায় তখন থেকেই অকার্যকর এ দুই কমিশন। এরপর আট থেকে দশ মাস পার হলেও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কিংবা প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে কেউ দায়িত্ব পায়নি। ফলে ভুক্তভোগীরা সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “প্রায় এক বছর তথ্য কমিশন না থাকা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং তথ্যপ্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকারকে উপেক্ষা করার শামিল। তথ্য কমিশন না থাকায় সরকারি তথ্য না পেলে তার সমাধানে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়েছে।
কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি জানিয়েছিল, তা মূলত ফাঁকাবুলিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের নজির আগে কখনও দেখা যায়নি, এমনকি বিশ্বে অন্য কোথাও এ নজির নেই।

অবিলম্বে কমিশন গঠনের দাবি তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময়ে মানবাধিকার কমিশন শুধু কাগুজে প্রতিষ্ঠান হয়েছিল। সেই সরকার পতনের পর মানবাধিকার কমিশন শক্তিশালীভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে এমন প্রত্যাশা থাকলেও, বাস্তবতা আরো হতাশাজনক হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনহীন অবস্থায় রয়েছে দেশ। আইনগত বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও এত দীর্ঘ সময় কমিশন গঠন করতে ব্যর্থতা দেশে মানবাধিকার নিশ্চিতে সরকারের সদিচ্ছার ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমন এক সময়ে যখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখন দেশের নিজস্ব মানবাধিকার কমিশন শূন্য রাখা দ্বিচারিতার পরিচায়ক।

বিবৃতিতে টিআইবি গণতন্ত্র, সুশাসন, তথ্য প্রকাশ ও মানবাধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি পালনে অবিলম্বে তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।, সেইসঙ্গে উভয় কমিশনের কার্যক্রমকে স্বাধীন, দক্ষ ও জনগণের আস্থাযোগ্য করতে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

তথ্য ও মানবাধিকার কমিশনে শূন্যতায় ‘সরকারের অবহেলা’ দেখছে টিআইবি

আপডেট সময় : ০৯:৪১:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আট থেকে দশ মাস ধরে অকার্যকর তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। সংস্থাটি বলেছে, এই দুই প্রতিষ্ঠানের শূন্যতা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের প্রতি সরকারের অবহেলার একটি ‘অগ্রহণযোগ্য’ উদাহরণ। সরকারের জন্য এটি ‘বিব্রতকর রেকর্ড’ হয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন গঠন সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। অথচ দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের কাছাকাছি সময় পার হয়ে গেলেও কমিশন দুটি গঠনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। কেন দীর্ঘকাল যাবৎ তা গঠিত হচ্ছে না, তার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও নেই। তিনি বলেন, কমিশন দুটি অতীতে যত ‘অকার্যকরতারই’ পরিচয় দিক, প্রায় এক বছর নেতৃত্বশূন্য রাখার ‘বিব্রতকর রেকর্ড’ স্থাপনের পাশাপাশি সরকার তার অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মানবাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতির প্রতি নির্বিকার অবহেলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন নেতৃত্বহীন অবস্থায় রাখা শুধু দুঃখজনক নয়, রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা ছাড়া এই শূন্যতার ফলে নাগরিকদের তথ্যে অভিগম্যতা ও মানবাধিকার নিশ্চিতের ন্যূনতম সুযোগও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদলে পরিবর্তনের ঢেউয়ের মধ্যে ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদসহ সব সদস্য। তার আগে সেপ্টেম্বরে পদত্যাগ করেন প্রধান তথ্য কমিশনার ও আরো এক কমিশনার। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর শীর্ষ পদগুলো শূন্য হওয়ায় তখন থেকেই অকার্যকর এ দুই কমিশন। এরপর আট থেকে দশ মাস পার হলেও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কিংবা প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে কেউ দায়িত্ব পায়নি। ফলে ভুক্তভোগীরা সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “প্রায় এক বছর তথ্য কমিশন না থাকা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং তথ্যপ্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকারকে উপেক্ষা করার শামিল। তথ্য কমিশন না থাকায় সরকারি তথ্য না পেলে তার সমাধানে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়েছে।
কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি জানিয়েছিল, তা মূলত ফাঁকাবুলিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের নজির আগে কখনও দেখা যায়নি, এমনকি বিশ্বে অন্য কোথাও এ নজির নেই।

অবিলম্বে কমিশন গঠনের দাবি তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময়ে মানবাধিকার কমিশন শুধু কাগুজে প্রতিষ্ঠান হয়েছিল। সেই সরকার পতনের পর মানবাধিকার কমিশন শক্তিশালীভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে এমন প্রত্যাশা থাকলেও, বাস্তবতা আরো হতাশাজনক হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনহীন অবস্থায় রয়েছে দেশ। আইনগত বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও এত দীর্ঘ সময় কমিশন গঠন করতে ব্যর্থতা দেশে মানবাধিকার নিশ্চিতে সরকারের সদিচ্ছার ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমন এক সময়ে যখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখন দেশের নিজস্ব মানবাধিকার কমিশন শূন্য রাখা দ্বিচারিতার পরিচায়ক।

বিবৃতিতে টিআইবি গণতন্ত্র, সুশাসন, তথ্য প্রকাশ ও মানবাধিকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি পালনে অবিলম্বে তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।, সেইসঙ্গে উভয় কমিশনের কার্যক্রমকে স্বাধীন, দক্ষ ও জনগণের আস্থাযোগ্য করতে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।