নিজস্ব প্রতিবেদক: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসছে এবং তার অধীনে নির্বাচন না হচ্ছে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ হওয়া সেনাদের স্মরণে বিএনপির আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষ জেগে উঠেছে, মানুষ জেগে উঠছে। আজকে দেয়ালের লেখা পড়েন, মানুষের চোখের ভাষা দেখেন। দেখবেন এই সরকারের প্রতি মানুষের শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা। এই মুহূর্তে সকলে চায়, এই সরকারের পরিবর্তন।’
শুধু বিএনপির জন্য নয়, দেশ ও জনগণকে রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দল সমস্ত সংগঠন সমস্ত ব্যক্তি এক হয়ে, এই দেশের মানুষের জন্য এই দেশকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
‘কেউ এখানে নিরাপদ? এখানে বিএনপি নিরাপদ নয়, এখানে জাসদ নিরাপদ নয়, এখানে অন্যান্য ধর্ম পালন করে তারাও নিরাপদ নয়। এখানে আলেমরাও নিরাপদ নয়। কেউ নিরাপদ নয়। এ জন্য আজকে সকলকে একতাবদ্ধ হতে হবে।’
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনা যেন আর কোনোদিন ঘটতে না পারে। এ জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগস্ট মাস থেকে আমরা যখন চাল ডাল তেল লবণের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করতে শুরু করেছি তখন থেকে তারা গুলি করে হত্যা করতে শুরু করেছে। আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী আন্দোলনকারীকে প্রকাশ্যে রাজপথে গুলি করে মেরেছে।’
‘ইতোমধ্যে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, এখনো আমাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী জেলে রয়েছেন। এই ভয়াবহ একটি অবস্থা দুর্বিষহ একটি অবস্থা। এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নাও। তিনি বলেছেন রাজপথেই ফয়সালা করতে হবে। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও, বেগম খালেদা জিয়া স্লোগান দিয়েছিলেন। সেই স্লোগান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সেগুলোকে একসঙ্গে নিয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
বিএনপি নেতা মেজর হাফিজের উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মেজর হাফিজ খুব সুন্দর কথা বলেছেন। প্রতিবছর শুধু শোক দিবস পালন করব। প্রতিবছর শুধু রোদন করব, তাতে কোনো লাভ হবে না। আজকে বেরিয়ে আসতে হবে, কোথায় আমাদের সেই তরুণ, কোথায় আমাদের সেই যুবক, কোথায় আমাদের সেই ছাত্ররা যারা এই দেশে ইতিহাস তৈরি করেছে। যারা প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে সামনে এসেছে, আজকে তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে; দেশকে বাঁচাতে।’
‘১৯৭১ সালে যেমন যুদ্ধ করেছি, নিজের দেশকে রক্ষা করার জন্য, স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য, আজকে ঠিক একইভাবে এদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য এবং মানুষকে বাঁচানোর জন্য, আমার অস্তিত্বকে রক্ষা করার জন্য, আমার স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য, আমার সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’
গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে লিখতে পারে না, সত্য প্রচার করতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানুষ প্রতিবাদ করতে পারে না। এ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আর এই দায়িত্ব শুধু বিএনপির একার নয়, সকল দেশপ্রেমিক দল ও নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সবাই একজোট হলে কোনো স্বৈরাচারী সরকার টিকে থাকতে পারে না। ইতিহাস তাই বলে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিএনপি’র মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ বক্তব্য দেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ