নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হামলার ঘটনায় নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন ইউপি সচিবরা। হামলা ও হয়রানির শিকার হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে উপযুক্ত সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ জানালেন তারা। তাই নির্বিঘেœ ও নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেদের নিরাপত্তায় চার দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউপি সচিব কল্যাণ তহবিল আহ্বায়ক কমিটি।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এসময় সম্প্রতি খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইকবাল হোসেনসহ সারা দেশে ইউপি সচিবদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কমিটির আহ্বায়ক মীর আবদুল বারেক বলেন, ‘ইউপি সচিব ইকবাল হোসেনকে বাড়ি থেকে অফিসে ডেকে এনে তার ওপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালানো হয়েছে, যা কেবল গর্হিত অপরাধ নয়ই, একই সঙ্গে মানবাধিকারের লঙ্ঘনও। তার এক হাত ভেঙে গেছে। অথচ অভিযুক্ত চেয়ারম্যান এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ইউপি সচিবদের জন্য অপমানজনক। আমরা এর নিন্দা জানাই।’ ইউপি সচিবদের কাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ সরকারি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইকবাল হোসেনের মতো আরও অনেক ইউপি সচিব প্রতিনিয়ত হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মতিউল আলম, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হুমায়ুন কবির, ময়মনসিংহের আব্দুল আউয়াল ও কবির উদ্দিন, নরসিংদীর শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইলের আবু সাঈদ ও কিশোরগঞ্জের আলমগীরসহ আরও অনেক ইউপি সচিবের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সংবাদ মাধ্যমে এসব হামলা ও নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে নির্যাতনের শিকার ইউপি সচিবকে অন্য ইউনিয়ন পরিষদে সরিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনো প্রশাসনিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
ক্রমাগতভাবে হামলার শিকার হলেও অধিকাংশ ইউপি সচিব নিরাপত্তার অভাবে মামলা-মোকাদ্দমায় জড়াতে চান না বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউপি সচিবরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দা না হওয়ায় সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত থাকেন। কোনো কোনো ইউপি সচিব প্রাথমিকভাবে অভিযোগ দায়ের করলেও স্থানীয় প্রভাব ও প্রশাসনিক চাপে পড়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় সঙ্গত কারণেই সারা দেশের ইউপি সচিবরা বিশেষভাবে শঙ্কিত ও বিক্ষুব্ধ।
ইউপি সচিবদের চার দাবি: ১. মিথ্যাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনার জন্য কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে অনতিবিলম্বে বরখাস্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ২. ইউপি সচিবরা হামলা বা নির্যাতনের শিকার হলে প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করবে। ৩. ক্ষতিগ্রস্ত ইউপি সচিবের চিকিৎসা ব্যয় বহনসহ প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার বাধা থাকবে। ৪. প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা/জেলা প্রশাসক দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং ভিকটিমের পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সচিব কল্যাণ তহবিল আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, আলতাফ হোসেন, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, মো. আলী মামুন মৃধা, আব্দুস সামাদ, লিটন চন্দ্র সমাদ্দার, মো. গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।