নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবসের হরতাল। জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া হরতাল দুপুর ১২টায় পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। হরতালের শুরুতে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগ, কাঁটাবন, গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় মিছিল করেন সমর্থকরা। পরে পল্টন মোড়ে জোটের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে মিছিল, স্লোগান ও গান-বাজনা করেন। এ সময় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে গাড়ি চালক, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টায় পল্টন মোড়ে জোট নেতারা হরতাল ‘সফল’ হয়েছে জানিয়ে রাস্তা ছেড়ে দেন।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতালে কোনো প্রভাব পড়েনি প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের কাজে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়িও চোখে পড়েনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সকাল সাড়ে ৮ টার মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা গেছে। অনেক মন্ত্রীও নির্দিষ্ট সময়ে কার্যালয়ে উপস্থিত হন এবং কর্মকর্তাদের কাছে হরতালের খোঁজ খবর নেন। এদিন সচিবালয়ের সামনে আবদুল গণি রোডে গাড়ি চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়নি। তবে সকালে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এজন্য এক ও দুই নম্বর গেটের মাঝামাঝি দর্শনার্থী অপেক্ষা কক্ষ দর্শনার্থী শূন্য দেখা গেছে। সচিবালয়ের লিফটগুলোর সামনেও ভিড় স্বাভাবিক দেখা গেছে। সচিবালয়ে গাড়ির সংখ্যা সকালে তুলনামূলক কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, আজকে হরতাল সেটা রাস্তা-ঘাট দেখে বুঝা যায় না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, হরতালের শুরুতে শাহবাগ ও পল্টন এলাকায় মিছিল করেন বাম জোটের নেতারা। এরপর বিভিন্ন এলাকা থেকে জোটের নেতাকর্মীরা পল্টন মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৮টার পর পল্টন মোড়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে ও সবদিকে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধের চেষ্টা করেন। এতে কিছুটা সফলও হন। তবে, পুলিশের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সীমিত আকারে যান চলাচল অব্যাহত থাকে। এছাড়া পল্টন মোড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে কয়েক দফা পুলিশ, গাড়ি চালক ও আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। তবে, রাজধানী থেকে জোটের কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। এর বাইরে হরতালের সমর্থনে উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোগে পল্টন মোড়ে অবস্থান নিয়ে গান-বাজনা করেন নেতাকর্মীরা। এদিকে বাম জোটের হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্তক অবস্থান থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে পল্টন এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি পল্টন মোড়ে পুলিশের জল-কামানসহ বিক্ষোভ দমনের কয়েকটি গাড়ি অবস্থান করতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এবার জনগণ হরতালে যেভাবে নৈতিক সমর্থন করেছে, এতে কিছু ঘাটতি আছে। কিন্তু এই জালিম সরকারের কানে নৈতিক সমর্থন যায় না। তাদের কানে পানি পৌঁছাতে হলে রাস্তায় নেমে শক্তি ও সমর্থন দিতে হবে। বামপন্থীরা আজকের কর্মসূচি শেষ করলেও আন্দোলন শেষ করছে না। আগামী দিনে বাম সংগঠন ও অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষ, যারা মুক্তিযুদ্ধের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, দ্বি-দলীয় রাজনীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তির পক্ষে আছে তাদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধসহ ঘেরাও কর্মসূচি দেব। তিনি বলেন, আসুন এই সফল হরতালের পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘরে ফিরে যাই। আগামী দিনে বৃহত্তর কর্মসূচি দেব, আন্দোলন গড়ে তুলব। জিনিসপত্রের দাম না কমানো পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।
হরতাল চলাকালে রাজধানীর শাহবাগসহ দেশের কয়েক জায়গায় বাম জোটের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আজ শাহবাগে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ হামলা করেছে, এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৩ ছাত্রনেতা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া সারাদেশে আরও কয়েক জায়গায় হামলা, নাটোরে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রিন্স বলেন, গতকাল রাতে যেসব ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদেরকে রাতে খাবার দেওয়া হয়নি। যারা দেখা করতে গিয়েছিল, তাদেরকেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তবে, আমি দেখা করতে গেলে পুলিশ আমার সঙ্গে সৌজন্য ব্যবহার করেছে। পুলিশ আমাকে বলেছে- হরতালের দাবি যৌক্তিক, কিন্তু আমরা তো পোশাক পরা। কাল যেহেতু কর্মসূচি, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরকে এখন ছাড়তে পারব না। আমি প্রশ্ন করতে চাই, এখন পর্যন্ত কেন তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হলো না। বিক্ষোভ সমাবেশে বাম জোটের নেতা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, মোশরেফা মিশু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢিলেঢালাভাবে শেষ হলো বাম জাটের হরতাল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ


























