ঢাকা ০৫:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যায় ৭ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে চার্জশিট

  • আপডেট সময় : ০১:২৮:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলায় সাত মাদক কারবারির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চার্জশিটে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি নিয়ে বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ইন্সপেক্টর আখতার মোর্শেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় চার্জিশিটে সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চারজনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন।

অপরদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সুজন সরকার, তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদারকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

সাম্য এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক দায়িত্বে ছিলেন। চলতি বছরের ১৩ মে রাতে সাম্য ও তার বন্ধুরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে যান। সেখানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী কবুতর রাব্বিকে হাতে ট্রেজারগান নিয়ে দেখতে পান সাম্য। তিনি তাকে থামতে বললে রাব্বি দৌড়ে পালান।

সাম্য ও তার বন্ধুরা তাকে ধাওয়া করে গোল পুকুর এলাকার কাছে ধরে ফেলে। তখন উভয়পক্ষের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে মেহেদী ও তার সহযোগীরা এসে সাম্যর ওপর হামলা চালায়। কবুতর রাব্বির হাতে থাকা সুইচ গিয়ার ছুরি দিয়ে সাম্যের উরুতে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সহপাঠীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তদন্তে উঠে এসেছে, মেহেদী হাসান ছিলেন উদ্যানে গাঁজা বিক্রেতাদের প্রধান। রিপন, কবুতর রাব্বি ও পাপেলসহ অন্যরা তার কাছ থেকে মাদক নিয়ে বিক্রি করতেন এবং বিক্রির টাকা জমা দিতেন। সাম্য ও তার বন্ধুরা ওই এলাকায় মাদক বিক্রি না করতে নিষেধ করায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এর জেরেই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।

মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ চার্জশিটে বলেছেন, ‌‌সাম্য হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আসামিরা একসঙ্গে আক্রমণ চালিয়ে ভিকটিমকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩/৩০২/৩২৩/৫০৬/৩৪ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

অপরাধ বিষয়ে কাজ করা আইনজীবিরা বলছেন, দণ্ডবিধির এই ধারাগুলোর মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি মিলে বেআইনি সংঘ গঠন করে কাউকে আঘাত, হত্যা ও ভয় দেখানোর অপরাধে অভিন্ন অভিপ্রায়ে দায়ী হওয়া বোঝায়।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় সন্দেহভাজন সুজন সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। তিনি সাম্যকে আহত অবস্থায় দেখতে পান এবং পরদিন ফেসবুক লাইভে ঘটনাটি নিয়ে মন্তব্য করেন। তবে তদন্তে জানা যায়, তিনি ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন এবং কাকতালীয়ভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

একইভাবে তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদার নামে তিনজন পথচারী আহত হলেও তাদের কারো সঙ্গে মূল আসামিদের পরিচয় ছিল না। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, তারা মাদক ব্যবসায়ী দল বা ভুক্তভোগীর (ভিকটিম) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।

নিহত হওয়ার ঘটনার পরদিন ১৪ মে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) মহানগর গয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

এসি/আপ্র/০৮/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যায় ৭ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে চার্জশিট

আপডেট সময় : ০১:২৮:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলায় সাত মাদক কারবারির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চার্জশিটে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি নিয়ে বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ইন্সপেক্টর আখতার মোর্শেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় চার্জিশিটে সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চারজনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন।

অপরদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সুজন সরকার, তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদারকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

সাম্য এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক দায়িত্বে ছিলেন। চলতি বছরের ১৩ মে রাতে সাম্য ও তার বন্ধুরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে যান। সেখানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী কবুতর রাব্বিকে হাতে ট্রেজারগান নিয়ে দেখতে পান সাম্য। তিনি তাকে থামতে বললে রাব্বি দৌড়ে পালান।

সাম্য ও তার বন্ধুরা তাকে ধাওয়া করে গোল পুকুর এলাকার কাছে ধরে ফেলে। তখন উভয়পক্ষের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে মেহেদী ও তার সহযোগীরা এসে সাম্যর ওপর হামলা চালায়। কবুতর রাব্বির হাতে থাকা সুইচ গিয়ার ছুরি দিয়ে সাম্যের উরুতে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সহপাঠীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তদন্তে উঠে এসেছে, মেহেদী হাসান ছিলেন উদ্যানে গাঁজা বিক্রেতাদের প্রধান। রিপন, কবুতর রাব্বি ও পাপেলসহ অন্যরা তার কাছ থেকে মাদক নিয়ে বিক্রি করতেন এবং বিক্রির টাকা জমা দিতেন। সাম্য ও তার বন্ধুরা ওই এলাকায় মাদক বিক্রি না করতে নিষেধ করায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এর জেরেই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।

মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ চার্জশিটে বলেছেন, ‌‌সাম্য হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আসামিরা একসঙ্গে আক্রমণ চালিয়ে ভিকটিমকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩/৩০২/৩২৩/৫০৬/৩৪ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

অপরাধ বিষয়ে কাজ করা আইনজীবিরা বলছেন, দণ্ডবিধির এই ধারাগুলোর মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি মিলে বেআইনি সংঘ গঠন করে কাউকে আঘাত, হত্যা ও ভয় দেখানোর অপরাধে অভিন্ন অভিপ্রায়ে দায়ী হওয়া বোঝায়।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় সন্দেহভাজন সুজন সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। তিনি সাম্যকে আহত অবস্থায় দেখতে পান এবং পরদিন ফেসবুক লাইভে ঘটনাটি নিয়ে মন্তব্য করেন। তবে তদন্তে জানা যায়, তিনি ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন এবং কাকতালীয়ভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

একইভাবে তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদার নামে তিনজন পথচারী আহত হলেও তাদের কারো সঙ্গে মূল আসামিদের পরিচয় ছিল না। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, তারা মাদক ব্যবসায়ী দল বা ভুক্তভোগীর (ভিকটিম) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।

নিহত হওয়ার ঘটনার পরদিন ১৪ মে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) মহানগর গয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

এসি/আপ্র/০৮/১১/২০২৫