নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক লিফট, র্যাম্প, হুইল চেয়ার, দ্রুত হাই কমোড টয়লেটের ব্যবস্থা করাসহ ছয় দফা দাবিতে ঢাবি মেডিকেল সেন্টারে অনশন শুরু করেছে সেন্টারটিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া অসুস্থ এক শিক্ষার্থী।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্ম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মহিউদ্দিন রনি নামের ওই শিক্ষার্থী অনশনে বসেন।
এর কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পায়ের চিকিৎসা নিতে গিয়ে নানা অসুবিধা ও অব্যবস্থাপনার শিকার হন মহিউদ্দিন।
আগামী ১২ ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি পূরণের নিশ্চয়তা, এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু না করলে আমরণ অনশনেরও ঘোষণা দেন তিনি। যোগাযোগ করা হলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমি গত কয়েকদিন যাবৎ এখানে চিকিৎসার জন্য পড়ে আছি। এখানে নেই কোনো নিয়মিত চিকিৎসা সেবা, নেই কোনো ওয়ার্ডবয়। আমার পায়ের সমস্যার কারণে লো কমোড টয়লেট ব্যবহার করতে পারছি না। কিন্তু শতবর্ষের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কোনো হাই কমোড নেই! ভাবা যায় এগুলো!
মহিউদ্দিন বলেন, বাথরুমের জন্য আমার বন্ধুরা এসে টিএসসিতে নিয়ে যায়। আমাকে হাই কমোডের জন্য এত বড় ভোগান্তির শিকার হতে হবে অসুস্থ না হলে জানতামই না। এটা শুধু আমার একার সমস্যা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর সমস্যা এটা।
ভুক্তভোগী এ শিক্ষার্থী বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি প্রয়োজনে একটি পা স্যাক্রিফাইস করার জন্য প্রস্তত আছি তবুও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন না দেখে যাবো না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল ফি জমা না দিয়ে পরীক্ষার হলে বসতে পারে না জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, গ্রামের দুই হাজার মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকেও যেসব সুবিধা, ৫০ হাজার ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীদের এই কমিউনিটি সার্ভিস সেন্টারে কেন ন্যূনতম সুবিধা থাকবে না? কেন এখানে এলেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব রোগের মহৌষধ বলে প্যারাসিটামল দিয়ে দেওয়া হবে?
মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমার দাবি না মানা হলে আমি যদি মরেও যাই তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন আমার লাশ নিয়ে ভিসির সামনে নিয়ে বলে, আপনার একজন শিক্ষার্থী চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে।
তিনি সুস্থ হওয়ার আগে, রমজানে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকতেই ছয় দফা দাবি নিশ্চিত করার দাবি জানান মহিউদ্দিন। নয়তো আমরণ অনশনে বসে যাবেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. হাফেজা জামান বলেন, রনির অনশনের বিষয়টি আমি জানতাম না। গতকাল (শুক্রবার) আমি ওর সমস্যাগুলো শুনেছি। যেসব বিষয় আমার হাতে আছে সেগুলো দ্রুত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আর বাকি বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব করে দেওয়ার কথা বলেছি। ঢাবি মেডিকেল সেন্টারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের আওতায়। এ বিষয়ে মুহাম্মদ সামাদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।
শিক্ষার্থীর দাবিগুলো হলো: ১. মেডিকেল সেন্টারের প্রবেশপথে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করা। ২. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক লিফট, র্যাম্প, হুইল চেয়ার ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া। ৩. মেয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্র্বতীকালীন শারীরিক সমস্যার সব চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় টিকা দেওয়া। ৪. দ্রুত প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় মেশিন স্থাপন। ৫. দ্রুত মেডিকেল সেন্টার কর্তৃক নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া ও ক্যান্টিন স্থাপন নিশ্চিত করা। ৬. অতিদ্রুত হাইকমোড তথা হাইলি ডেকোরেটেড স্যানিটেশন সিস্টেমে টয়লেট, বাথরুম তৈরি করা।
ঢাবির মেডিকেলে ৬ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীর অনশন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ