ঢাকা ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

ঢাবিতে হয়নি, ‘আফসোস নেই’ পঞ্চাশোর্ধ্ব বেলায়েতের

  • আপডেট সময় : ০১:৪০:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ৫৫ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও সাধ পূরণ হল না গাজীপুরের বেলায়েত শেখের।
গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার যে ফল ঘোষণা হয়েছে, সেখানে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত ৬ হাজার ১১১ জনের মধ্যে তার নাম আসেনি।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেলায়েত টেলিফোনে একটি সংবাদসংস্থাকে বলেন, “ঢাবিতে হয় নাই, এতে আমার কোনো আফসোস নাই, ভাগ্যের উপর কিছু নাই। এই বয়সে ইয়াংদের সঙ্গে চেষ্টা করেছি, এটাই বড় অর্জন।”
শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিম খ- এলাকার পঞ্চাশোর্ধ বেলায়েত শেখ পেশায় একজন সংবাদকর্মী। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন তিনি। সেজন্য প্রস্তুতিও নেন।
গত ১৯ মে নিজের ফেইসবুক আইডিতে বেলায়েত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রকাশ করলে তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়।
৫৫ বছর বয়সে ‘ভর্তিযুদ্ধে’ নামায় বহু মানুষ তাকে যেমন শুভেচ্ছা জানান, তেমনি উৎসাহও দেন লেগে থাকার জন্য। গত ১১ জুন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বেলায়েত বলেছিলেন, ‘ইয়াংদের’ সঙ্গে পরীক্ষা তিনি ‘ভালোই’ দিয়েছেন। তবে ফলাফলটা শেষ পর্যন্ত ভালো হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বেলায়েত শেখ ১২০ নম্বরের মধ্যে ২৬ দশমিক ০২ নম্বর পেয়েছেন। এমসিকিউ অংশে উত্তীর্ণ না হওয়ায় তার লিখিত অংশের উত্তরপত্র মূল্যায়ন হয়নি। তিনি এমসিকিউ অংশের বাংলায় ১৫ নম্বরের মধ্যে দুই, ইংরেজিতে ১৫ নম্বরের মধ্যে ২ দশমিক ৭৫, সাধারণ জ্ঞানে ৩০ নম্বরের মধ্যে ৩ দশমিক ২৫ পেয়েছেন। এ ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ২০ নম্বরের মধ্যে ১৮ দশমিক ০২ পেয়েছেন।
রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার কথা জানিয়ে বেলায়েত বলেন, “আরও তিনটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেব। সেখানে চান্স না পেলে পাইভেটে পড়ব। তবুও পড়ালেখা চালিয়ে যাব।ৃ সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আমার। তবে প্রাইভেটে পড়ার খরচ নিয়ে একটু টেনশনে আছি।”
স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বেলায়েতের সংসার। কাজ করেন দৈনিক করতোয়া প্রত্রিকায় শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে। আগ্রহের কমতি না থাকলেও আর্থিক দুরবস্থা ও বাবার অসুস্থতার কারণে ১৯৮৩ সালে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া থেকে ছিটকে গিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন বেলায়েত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে নিজের ‘অপূর্ণতা’ তিনি পূরণ করতে চেয়েছিলেন ভাই-বোনদের মাধ্যমে, পরবর্তীতে সন্তানদের দিয়ে। কিন্তু তা পূরণ না হওয়ায় আক্ষেপ নিয়ে তিনিই আবার পড়ালেখা শুরু করেন। ২০১৭ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ নিয়ে তিনি এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেন। ২০২১ সালে রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৮ পেয়ে পাস করেন এইচএসসি (ভোকেশনাল)। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির মাঠে নামেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঢাবিতে হয়নি, ‘আফসোস নেই’ পঞ্চাশোর্ধ্ব বেলায়েতের

আপডেট সময় : ০১:৪০:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ৫৫ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও সাধ পূরণ হল না গাজীপুরের বেলায়েত শেখের।
গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার যে ফল ঘোষণা হয়েছে, সেখানে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত ৬ হাজার ১১১ জনের মধ্যে তার নাম আসেনি।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেলায়েত টেলিফোনে একটি সংবাদসংস্থাকে বলেন, “ঢাবিতে হয় নাই, এতে আমার কোনো আফসোস নাই, ভাগ্যের উপর কিছু নাই। এই বয়সে ইয়াংদের সঙ্গে চেষ্টা করেছি, এটাই বড় অর্জন।”
শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিম খ- এলাকার পঞ্চাশোর্ধ বেলায়েত শেখ পেশায় একজন সংবাদকর্মী। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন তিনি। সেজন্য প্রস্তুতিও নেন।
গত ১৯ মে নিজের ফেইসবুক আইডিতে বেলায়েত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রকাশ করলে তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়।
৫৫ বছর বয়সে ‘ভর্তিযুদ্ধে’ নামায় বহু মানুষ তাকে যেমন শুভেচ্ছা জানান, তেমনি উৎসাহও দেন লেগে থাকার জন্য। গত ১১ জুন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বেলায়েত বলেছিলেন, ‘ইয়াংদের’ সঙ্গে পরীক্ষা তিনি ‘ভালোই’ দিয়েছেন। তবে ফলাফলটা শেষ পর্যন্ত ভালো হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বেলায়েত শেখ ১২০ নম্বরের মধ্যে ২৬ দশমিক ০২ নম্বর পেয়েছেন। এমসিকিউ অংশে উত্তীর্ণ না হওয়ায় তার লিখিত অংশের উত্তরপত্র মূল্যায়ন হয়নি। তিনি এমসিকিউ অংশের বাংলায় ১৫ নম্বরের মধ্যে দুই, ইংরেজিতে ১৫ নম্বরের মধ্যে ২ দশমিক ৭৫, সাধারণ জ্ঞানে ৩০ নম্বরের মধ্যে ৩ দশমিক ২৫ পেয়েছেন। এ ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ২০ নম্বরের মধ্যে ১৮ দশমিক ০২ পেয়েছেন।
রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার কথা জানিয়ে বেলায়েত বলেন, “আরও তিনটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেব। সেখানে চান্স না পেলে পাইভেটে পড়ব। তবুও পড়ালেখা চালিয়ে যাব।ৃ সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আমার। তবে প্রাইভেটে পড়ার খরচ নিয়ে একটু টেনশনে আছি।”
স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বেলায়েতের সংসার। কাজ করেন দৈনিক করতোয়া প্রত্রিকায় শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে। আগ্রহের কমতি না থাকলেও আর্থিক দুরবস্থা ও বাবার অসুস্থতার কারণে ১৯৮৩ সালে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া থেকে ছিটকে গিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন বেলায়েত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে নিজের ‘অপূর্ণতা’ তিনি পূরণ করতে চেয়েছিলেন ভাই-বোনদের মাধ্যমে, পরবর্তীতে সন্তানদের দিয়ে। কিন্তু তা পূরণ না হওয়ায় আক্ষেপ নিয়ে তিনিই আবার পড়ালেখা শুরু করেন। ২০১৭ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ নিয়ে তিনি এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেন। ২০২১ সালে রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৮ পেয়ে পাস করেন এইচএসসি (ভোকেশনাল)। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির মাঠে নামেন তিনি।