নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় ফের সংঘাতে জড়িয়েছে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রদল মিছিল বের করলে তাদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় উভয়পক্ষের হাতেই লাঠিসোটা দেখা যায়। মিছিলের শুরুতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘ছাত্রদলের অ্যাকশন- ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। তাদের সেই মিছিল কিছুদূর এগোতেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন ছাত্রদল পিছু হটে। ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা হাইকোর্টের ভেতরে ঢুকে যায়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, স্ট্যাম্প নিয়ে হাইকোর্টের সামনে অবস্থান নেয়। ওই এলাকায় তারা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষের সময় দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি ব্যবহার হয় আগ্নেয়াস্ত্রও। সংঘর্ষের সময় হাইকোর্ট এলাকায় শোনা গেছে কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ। আগ্নেয়াস্ত্র ছাত্রলীগের বলে দাবি করেছে ছাত্রদল। তবে ছাত্রলীগ বলছে, এমন করার সুযোগ নেই। সংঘর্ষে ছাত্রদলের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। এ সময় হাইকোর্ট এলাকায় নিজেদেরই পাঁচ কর্মীকে ছাত্রদল ভেবে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হটাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হেলমেট পরে চাপাতি, দা, লাঠি, রড, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পসহ দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দিক থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ার শব্দও শোনা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকা, শহীদ মিনার, টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, শাহবাগ, পলাশী এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ঢাকা কলেজের নেতাকর্মী। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আক্তার হোসেন বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা করে। ছাত্রদলের ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জন্য আমাদের আহত নেতাকর্মীদের হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলার সময় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, সন্ত্রাসের মেগা সিরিয়ালের যে সূচনা এটা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল করেছে। আজও ছাত্রদল আগের চেয়ে বেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার চেষ্টা করেছে। ছাত্রদল অত্যাধুনিক অস্ত্র বহন ও ব্যবহার করেছে। ছাত্রদল শুধু ক্যাম্পাসকে নয় রাষ্ট্রের অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গা সুপ্রিম কোর্টেও অস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ভিতরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্লোগান দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সাদ্দাম হোসেন এড়িয়ে যান। তবে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে আজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিল। ক্যাম্পাসের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। ক্যাম্পাস এলাকায় ছাত্রদলের কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। টিএসসি এলাকায় যার হাতে অস্ত্র দেখা গেছে সে ছাত্রলীগের কর্মী কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে সাদ্দাম বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মীর এরকম অস্ত্র ব্যবহার বা রাখার সুযোগ নেই। অন্যদিকে আদালত এলাকায় ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক মিছিল বের করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট ও কেন্দ্রীয় সংগঠনের নেতা এবং আইনজীবীরা। এ সময় হামলার প্রতিবাদে ‘সুপ্রিম কোর্টে হামলা কেন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। এ সময় ছাত্রলীগের ধাওয়ায় তারা দোয়েল চত্বর হয়ে সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেট মোড়ে অবস্থান নেয়। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট এবং দোয়েল চত্বরসহ মাজার গেটের দিকেও ধাওয়া করে। এ সময় দুপক্ষের হাতেই লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। এদিকে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অন্তত ৬-৭ জন নেতাকর্মীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে সম্প্রতি রাজপথে আন্দোলন করছে ছাত্রদল। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার ছাত্রদল মিছিল নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেয় ছাত্রলীগ। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে ছাত্রদলের বেশ কিছু নেতকার্মী আহত হন।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মিছিলে হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টায় মীর মোশাররফ হোসেন হলের গেট থেকে শুরু করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে এই বিক্ষোভ মিছিল শেষ হয় বলে সংগঠনটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রদল নেতা সৈকত ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং সেইসঙ্গে হুঁশিয়ারি করে বলেন, অচিরেই এই হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হলে সারাবাংলার ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই গণধোলাই দেওয়ার মাধ্যমে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, জাবি ছাত্রদলের সদ্যসাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম সৈকত নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলে সাবেক সহ-সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বিপ্লব, ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম সাগর, সেলিম রেজা, আবদুল কাদির মার্জুক, রাকিবুল ইসলাম শুভ, আরিফুজ্জান আরিফ, ইকবাল হোসাইন, জুয়েল তালুকদার, নাইমুল হাছান কৌশিক, আমিন আল রাজী, আহম্মদ উল্লাহ, শরিফুল ইসলাম, হোসাইন আল রাশেদ বাদল, মো. হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, ছাত্রদলকে প্রতিরোধ করতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে অবস্থান নেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের একটি অংশ মোটরসাইকেলে একের পর এক মহড়া দেন। ছাত্রদলের মিছিলের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, তারা ক্যাম্পাসের বাইরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ক্যাম্পাস সংলগ্ন লেনের বিপরীত লেনে বিক্ষোভ করেছে বলে তথ্য পেয়েছি। ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকা- ও সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সদা প্রস্তুত। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় আমরা শাখা ছাত্রলীগ এসব অছাত্র-কুছাত্র, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে প্রতিহত করতে ও ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাবিতে ফের মুখোমুখি ছাত্রদল-ছাত্রলীগ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ