ঢাকা ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা নজর কাড়ছে হস্ত ও কুটির শিল্প পণ্য

  • আপডেট সময় : ০৬:৩২:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর বসেছে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। যতই দিন গড়াচ্ছে জমজমাট হচ্ছে মেলাপ্রাঙ্গণ। মেলায় দেশি বিদেশি বড় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ক্রেতাদের নজর কাড়ছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও। মেলায় ঘুরে ঘুরে নতুন উদ্যোক্তাদের তৈরি নানান পণ্য কিনছেন ক্রেতারা।

মেলায় গৃহস্থালীর নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি দেশীয় কুটির শিল্প সামগ্রী, হস্তশিল্পের বিশেষ পণ্য, দেশীয় পোশাক, কসমেটিক্স, গৃহে ব্যবহৃত সাজ-সরঞ্জাম, চামড়াজাত পণ্য, খেলনা, স্টেশনারী, প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের গয়না। গতকাল শনিবার মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, চলতি বছর বাণিজ্যমেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), জয়িতা ফাউন্ডেশন এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) পৃথক চারটি স্টল নিয়েছে। এসব স্টলে শতাধিক উদ্যোক্তা সরাসরি তাদের পণ্য বিক্রির এবং ক্রয়াদেশ পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

এছাড়া তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং চামড়াজাত পণ্যের প্রচার ও প্রসারে রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (এলএফএমইএবি) আলাদা আলাদা স্টল নিয়েছে নিজেদের পণ্য প্রচার এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বলছেন, মেলার শুরুর দিন থেকেই তাদের স্টলে ভিড় করছেন ক্রেতারা। এসব স্টলে জায়গা করে নিয়েছে গৃহসজ্জার সামগ্রী, শতরঞ্জি, কুশিকাটার পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি পণ্য, মৃৎপণ্য, বিভিন্ন ধাতব পাত্র, মিনিয়েচার ও শুকনো খাবার প্রভৃতি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নে ১১ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছেন। এসব খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় পণ্য বিক্রিতে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন তারা। এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রধান কয়েকটি খাতের উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে সংস্থাটি।

তাদের মধ্যে রয়েছে চামড়ার জুতা, চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য, পাটজাত পণ্য, শতরঞ্জি, আসবাব, শুকনো খাদ্যসামগ্রী ও রিসাইক্লিং পণ্যের প্রতিষ্ঠান। এসএমই ফাউন্ডেশনের স্টলে ব্যাগ বাজারের স্বত্বাধিকারী তাহমিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সব পণ্য পাটের তৈরি। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছি। আমাদের কাছে পাটের তৈরি জুতা, ব্যাগসহ সব ধরনের পণ্য আছে। আমরা পলিথিনের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগ বিক্রি করছি। আকারভেদে দাম ২০-৪০ টাকা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) স্টলে পাট ও পাটজাত পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। রপ্তানি বৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে আলাদা আকর্ষণ পাটজাত পণ্যের স্টলগুলোতে। তাদের পণ্যের তালিকায় রয়েছে কার্পেট, জায়নামাজ ও ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য।

যা বিক্রিও হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। রায়হান নামে একজন উদ্যোক্তা বলেন, যদি পলিথিন দেশ থেকে ওঠে যায় তাহলে পরিবেশের জন্য ভালো। পাট আমাদের দেশের গর্ব। এটিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য। আমাদের দেশের পণ্য আমরা ব্যবহার করবো। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পোদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। বিসিকের নিবন্ধিত যেসব ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পোদ্যোক্তার এককভাবে মেলায় স্টল বা প্যাভিলিয়ন নেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের জন্য একটি বড় প্যাভিলিয়ন নিয়ে ছোট ছোট স্টলে ভাগ কর দিয়েছে বিসিক। এর মধ্যে রয়েছে শতরঞ্জি, টেবিল ম্যাট, পাপোস।

রয়েছে পর্দা, কুশন, বিছানার চাদর, লেডিস চাদর, চামড়ার ব্যাগ, থ্রি-পিস, জুয়েলারি পণ্য, নানা রকমের আচার, মাটির জিনিসপত্র, জুতা, কারুশিল্প, কাপড়ের, চামড়ার তৈরি ঘর সাজানোর নানা পণ্য। এ ছাড়াও শীতল পাটির ব্যাগ, পার্স, পার্টির ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, ম্যানি ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের চামড়াজাত পণ্যসহ শো-পিস, ল্যাম্প।। এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। উদ্যোক্তারা জানান, মেলায় মূলত অংশগ্রহণ করা হয় পণ্যের প্রচার, নতুন ক্রেতা তৈরি এবং ব্যবসার জন্য। মেলায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) স্টলে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছেন প্রি-টু-প্রো’র স্বত্বাধিকারী নাসরিন আক্তার সুমি এবং তার বোন নিশাত জাহান। নিশাত জাহান বলেন, এ ব্যবসার উদ্যোগ আমার বড় বোনের। আমরা বেইলি রোড থেকে এসেছি। আমাদের ফেসবুক পেজ আছে, কিন্তু দোকান নেই। বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়ে থাকি।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে হ্যান্ডব্যাগ, কলমদানি, জুয়েলারি বক্স, স্ট্যান্ড আছে। এছাড়া হ্যান্ড প্রিন্ট ব্লাউজ, খাদি কাপড়ের বিছানার চাদর, কাতান কাপড়ের শাড়ি, মাটির তৈজসপত্র আছে। এসব পণ্য আমাদের নিজস্ব ডিজাইনের। আশা করছি বিক্রি ভালো হবে। বাণিজ্য মেলায় ছোট উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রমোশনের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা কিছু প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে এসব স্টলে সরাসরি তাদের তৈরি পণ্য বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন ৪৬ জন উদ্যোক্তা। গৃহস্থালি ও নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন তারা। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন ক্রেতারাও।

পণ্যের দাম ও মান নিয়েও সন্তুষ্ট তারা। ক্রেতারা বলছেন, এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। এতে একদিকে যেমন উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন, অন্যদিকে তারাও পণ্যে বৈচিত্র্য খুঁজে পাচ্ছেন। দামও তুলনামূলক কম। এসব স্টলে জায়গা করে নিয়েছে উদ্যোক্তাদের ব্লক, বাটিক, চামড়াজাত ও পাটজাত পণ্য, শুকনো খাদ্যসামগ্রীসহ রিসাইক্লিং পণ্যের প্রতিষ্ঠান। অপ্সরী বুটিকসের স্বত্বাধিকারী পলি বলেন, বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বড় স্টল নিয়ে ছোট ছোট অংশ ভাগ করে একাধিক উদ্যোক্তাকে পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছে।

এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। প্রথমবারের মত বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়েছে বিজিএমইএ। একই সঙ্গে এলএফএমইএবি হাজির হয়েছে। তাদের আশা মেলার মাধ্যমে ইতিবাচক সাড়া মিলবে। প্রতিবারের মতো এবারও বছরের শুরুতে পূর্বাচলের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে আয়োজন করেছে মাসব্যাপী এই মেলার। মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।

তবে ছুটির দিনে ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকছে। মেলায় প্রবেশের টিকিট মূল্য ৫০ টাকা, ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা। মেলায় প্রবেশের প্রধান ফটকের দুই পাশে টিকিটের বুথ বসানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো টিকিট কাটা যাচ্ছে অনলাইনে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বায়ুদূষণের কারণে দেশে প্রতি বছর এক লাখেরও বেশি মৃত্যু

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা নজর কাড়ছে হস্ত ও কুটির শিল্প পণ্য

আপডেট সময় : ০৬:৩২:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর বসেছে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। যতই দিন গড়াচ্ছে জমজমাট হচ্ছে মেলাপ্রাঙ্গণ। মেলায় দেশি বিদেশি বড় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ক্রেতাদের নজর কাড়ছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও। মেলায় ঘুরে ঘুরে নতুন উদ্যোক্তাদের তৈরি নানান পণ্য কিনছেন ক্রেতারা।

মেলায় গৃহস্থালীর নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি দেশীয় কুটির শিল্প সামগ্রী, হস্তশিল্পের বিশেষ পণ্য, দেশীয় পোশাক, কসমেটিক্স, গৃহে ব্যবহৃত সাজ-সরঞ্জাম, চামড়াজাত পণ্য, খেলনা, স্টেশনারী, প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের গয়না। গতকাল শনিবার মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, চলতি বছর বাণিজ্যমেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), জয়িতা ফাউন্ডেশন এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) পৃথক চারটি স্টল নিয়েছে। এসব স্টলে শতাধিক উদ্যোক্তা সরাসরি তাদের পণ্য বিক্রির এবং ক্রয়াদেশ পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

এছাড়া তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং চামড়াজাত পণ্যের প্রচার ও প্রসারে রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (এলএফএমইএবি) আলাদা আলাদা স্টল নিয়েছে নিজেদের পণ্য প্রচার এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বলছেন, মেলার শুরুর দিন থেকেই তাদের স্টলে ভিড় করছেন ক্রেতারা। এসব স্টলে জায়গা করে নিয়েছে গৃহসজ্জার সামগ্রী, শতরঞ্জি, কুশিকাটার পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি পণ্য, মৃৎপণ্য, বিভিন্ন ধাতব পাত্র, মিনিয়েচার ও শুকনো খাবার প্রভৃতি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নে ১১ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছেন। এসব খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় পণ্য বিক্রিতে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন তারা। এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রধান কয়েকটি খাতের উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে সংস্থাটি।

তাদের মধ্যে রয়েছে চামড়ার জুতা, চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য, পাটজাত পণ্য, শতরঞ্জি, আসবাব, শুকনো খাদ্যসামগ্রী ও রিসাইক্লিং পণ্যের প্রতিষ্ঠান। এসএমই ফাউন্ডেশনের স্টলে ব্যাগ বাজারের স্বত্বাধিকারী তাহমিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সব পণ্য পাটের তৈরি। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছি। আমাদের কাছে পাটের তৈরি জুতা, ব্যাগসহ সব ধরনের পণ্য আছে। আমরা পলিথিনের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগ বিক্রি করছি। আকারভেদে দাম ২০-৪০ টাকা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) স্টলে পাট ও পাটজাত পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। রপ্তানি বৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে আলাদা আকর্ষণ পাটজাত পণ্যের স্টলগুলোতে। তাদের পণ্যের তালিকায় রয়েছে কার্পেট, জায়নামাজ ও ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য।

যা বিক্রিও হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। রায়হান নামে একজন উদ্যোক্তা বলেন, যদি পলিথিন দেশ থেকে ওঠে যায় তাহলে পরিবেশের জন্য ভালো। পাট আমাদের দেশের গর্ব। এটিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য। আমাদের দেশের পণ্য আমরা ব্যবহার করবো। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পোদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। বিসিকের নিবন্ধিত যেসব ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পোদ্যোক্তার এককভাবে মেলায় স্টল বা প্যাভিলিয়ন নেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের জন্য একটি বড় প্যাভিলিয়ন নিয়ে ছোট ছোট স্টলে ভাগ কর দিয়েছে বিসিক। এর মধ্যে রয়েছে শতরঞ্জি, টেবিল ম্যাট, পাপোস।

রয়েছে পর্দা, কুশন, বিছানার চাদর, লেডিস চাদর, চামড়ার ব্যাগ, থ্রি-পিস, জুয়েলারি পণ্য, নানা রকমের আচার, মাটির জিনিসপত্র, জুতা, কারুশিল্প, কাপড়ের, চামড়ার তৈরি ঘর সাজানোর নানা পণ্য। এ ছাড়াও শীতল পাটির ব্যাগ, পার্স, পার্টির ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, ম্যানি ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের চামড়াজাত পণ্যসহ শো-পিস, ল্যাম্প।। এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। উদ্যোক্তারা জানান, মেলায় মূলত অংশগ্রহণ করা হয় পণ্যের প্রচার, নতুন ক্রেতা তৈরি এবং ব্যবসার জন্য। মেলায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) স্টলে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছেন প্রি-টু-প্রো’র স্বত্বাধিকারী নাসরিন আক্তার সুমি এবং তার বোন নিশাত জাহান। নিশাত জাহান বলেন, এ ব্যবসার উদ্যোগ আমার বড় বোনের। আমরা বেইলি রোড থেকে এসেছি। আমাদের ফেসবুক পেজ আছে, কিন্তু দোকান নেই। বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়ে থাকি।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে হ্যান্ডব্যাগ, কলমদানি, জুয়েলারি বক্স, স্ট্যান্ড আছে। এছাড়া হ্যান্ড প্রিন্ট ব্লাউজ, খাদি কাপড়ের বিছানার চাদর, কাতান কাপড়ের শাড়ি, মাটির তৈজসপত্র আছে। এসব পণ্য আমাদের নিজস্ব ডিজাইনের। আশা করছি বিক্রি ভালো হবে। বাণিজ্য মেলায় ছোট উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রমোশনের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা কিছু প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে এসব স্টলে সরাসরি তাদের তৈরি পণ্য বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন ৪৬ জন উদ্যোক্তা। গৃহস্থালি ও নিত্যব্যবহার্য নানা পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন তারা। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন ক্রেতারাও।

পণ্যের দাম ও মান নিয়েও সন্তুষ্ট তারা। ক্রেতারা বলছেন, এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। এতে একদিকে যেমন উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন, অন্যদিকে তারাও পণ্যে বৈচিত্র্য খুঁজে পাচ্ছেন। দামও তুলনামূলক কম। এসব স্টলে জায়গা করে নিয়েছে উদ্যোক্তাদের ব্লক, বাটিক, চামড়াজাত ও পাটজাত পণ্য, শুকনো খাদ্যসামগ্রীসহ রিসাইক্লিং পণ্যের প্রতিষ্ঠান। অপ্সরী বুটিকসের স্বত্বাধিকারী পলি বলেন, বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বড় স্টল নিয়ে ছোট ছোট অংশ ভাগ করে একাধিক উদ্যোক্তাকে পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছে।

এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। প্রথমবারের মত বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়েছে বিজিএমইএ। একই সঙ্গে এলএফএমইএবি হাজির হয়েছে। তাদের আশা মেলার মাধ্যমে ইতিবাচক সাড়া মিলবে। প্রতিবারের মতো এবারও বছরের শুরুতে পূর্বাচলের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে আয়োজন করেছে মাসব্যাপী এই মেলার। মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।

তবে ছুটির দিনে ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকছে। মেলায় প্রবেশের টিকিট মূল্য ৫০ টাকা, ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা। মেলায় প্রবেশের প্রধান ফটকের দুই পাশে টিকিটের বুথ বসানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো টিকিট কাটা যাচ্ছে অনলাইনে।