মহানগর প্রতিবেদন : অনেক এলাকায় আগে রাস্তাঘাট কম থাকলেও বাড়ি বানানো যেত। রাজউকের নতুন ড্যাপ বাস্তবায়নে সে সুযোগ থাকছে না। আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজউকের এই প্ল্যান ভালো, তবে আরও বিবেচনা করা উচিত। রাজধানীতে নাগরিক সুবিধা অধিকতর করার বিষয়টি সামনে রেখে গত ২৩ আগস্ট সংশোধিত মাস্টারপ্ল্যান ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) গেজেট প্রকাশ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এতে নড়েচড়ে বসেছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা একে ব্যবসায়িক ক্ষতি হিসেবে মনে করছেন। আর রাজউক একে দেখছে ভবিষ্যতের সুন্দর বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা হিসেবে। পুরান ঢাকার দিকেও বিশেষ নজর দিতে চায় রাজউক।
ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ছোট জমির মালিকরা বিশেষ করে কয়েকজন মিলে জায়গা কিনে রাখা মালিকরা কতটা লাভবান হবেন? তিন কাঠার জমিতে সর্বোচ্চ ছয়তলা ভবন হলে তা নিজেদের মাঝে কতটা ভাগ-বাটোয়ারা করতে পারবেন সেই চিন্তার রেখা অনেকের কপালে। দিন দিন নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েই চলেছে, যা পুষিয়ে নেওয়া যেত বহুতল ভবনের মাধ্যমে। কিন্তু ড্যাপের নতুন আইনে সে সুযোগ অনেকটাই কমে আসছে।
রাজধানীর মেরাদিয়া এলাকায় জায়গা কিনেছেন ওবায়দুল হক নামের একজন চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে তিন কাঠা জায়গা কিনেছি ভবিষ্যতে বাড়ি করার ইচ্ছায়। কিন্তু ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে আমাদের সেই বাড়ি বানানোর ইচ্ছা স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে।’
আবাসন ব্যবসায়ী ভিআইপি ল্যান্ডমার্কের এমডি মো. বিল্লাল হোসেন জানান, ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ছোট জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, আর বড় জমির মালিকরা আরও লাভবান হবেন। এটা একধরনের শ্রেণিবৈষম্য। একই সঙ্গে হাইরাইজ ভবনের সংখ্যাও কমে যাবে। মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, অনেকে বেশি দাম দিয়ে জায়গা কিনে রেখেছেন কয়েকজন মিলে ভবন তৈরি করার আশায়। কিন্তু এখন তারা ১০ তলার জায়গায় ৫ তলা ভবন করলে তাতে কিছু মানুষ থাকতে পারবে, আর বাকিরা বঞ্চিত হবে। ড্যাপ বাস্তবায়নের ফলে মূল শহরে জমির দাম কমবে, অন্যদিকে দূরদূরান্তে বাড়বে জমির দাম- এমনটাই মনে করেন ভিআইপি ল্যান্ডমার্কের এমডি।
রাজধানীবাসীর সামাজিক সুবিধা বিবেচনায় রেখে ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, নাগরিকদের সামাজিক বিষয়গুলোর প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে নতুন ড্যাপে। এলাকাভিত্তিক পার্ক, জলাশয়, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ড্যাপ অনুযায়ী উঁচু ভবন অবশ্যই করা যাবে, সেক্ষেত্রে ভবনের চারপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা খালি রাখতে হবে। বড় জায়গায় ভবন তৈরি করলে অবশ্যই ভবন মালিকরা লাভবান হবেন। পুরান ঢাকার দিকে ইঙ্গিত করে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, সেখানে রাস্তাঘাটের ভালো সুবিধা নেই। তবে ভবিষ্যতে যেন এই সুবিধাগুলো থাকে সে উদ্দেশ্যে কাজ করছে রাজউক। ভবিষ্যতে ছোট জমিতে বাড়ি বানানোর অনুমোদন দেওয়া নাও হতে পারে জানিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ছোট জমির মালিকদের একাধিকজনকে একত্রে ভবন তৈরির জন্য উৎসাহিত করা হবে। এটা করা হবে মূলত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে সুন্দর পরিবেশে নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়ার লক্ষ্যে বিদ্যমান নানা সমস্যা কমানো, ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে লেক, খাল ও নদীকে সংযুক্ত করে যোগাযোগের মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা এবং বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা নিরসন, বিনোদনমূলক পার্ক করাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা স্থান পেয়েছে রাজউক ঘোষিত সংশোধিত ড্যাপে।-
ঢাকায় স্বল্প জমিতে একক বাড়ি বানানো যাবে না
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ