ঢাকা ০৯:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

ঢাকায় বসে গোপালগঞ্জে ব্যাংক ও মন্দিরে ডাকাতির পরিকল্পনা!

  • আপডেট সময় : ১২:১৩:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২
  • ৯৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় বসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একটি শাখা ও সদরের বাইটকামারি এলাকার একটি মন্দিরে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। এজন্য ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে একাধিকবার রেকি করে এসেছে ডাকাত দলের সদস্যরা। ব্যাংকের শাখাটি এক তলা ও পুরানো ভবনে হওয়ায় ডাকাতি করা সহজ হবে বলে পরিকল্পনা করেছিল তারা। আর বাইটকামারির মন্দিরে একটি কষ্টিপাথর ও স্বর্ণের পিঁড়ি রয়েছে বলে জানতে পেরেছিল ডাকাত দলের সদস্যরা। এজন্য ওই মন্দিরেও রেকি করে তারা। কিন্তু ব্যাংক ও মন্দিরে দুর্র্ধষ ডাকাতির আগেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ইব্রাহীম চৌধুরী (২৮), লোকমান হাকিম ওরফে লিটন শেখ (৪৪), রিপন খান (২৬) এবং মাহাবুব মিয়া ওরফে মাবুদ মিয়া (৩৯)। গত শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি করার সরঞ্জামাদি ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমান জানান, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ডাকাত চক্রের সদস্য। গ্রেফতারকৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি ও খুনের মামলা রয়েছে। তারা গোপালগঞ্জের একটি ব্যাংক ও মন্দিরে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য জানা এবং অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতার করা হবে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা প্রত্যেকেই আগে ভিন্ন ভিন্ন ডাকাত দলের সদস্য ছিল। জেলে গিয়ে তাদের একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। জেল থেকে বের হয়ে তারা নিজেরা একটি দল গঠন করে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃত ইব্রাহীম চৌধুরীর শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সম্প্রতি সে জেল থেকে বের হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে কৃষি ব্যাংকের শাখাটির নাজুক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। বিষয়টি নিয়ে সে লোকমান হাকিম ওরফে লিটন শেখের সঙ্গে পরামর্শ করে। লিটন শেখ তাকে ডাকাতি করার প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়। ব্যাংক ডাকাতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আগে অন্য সহযোগীদের সঙ্গে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় তারা।
গ্রেফতারকৃত মাহাবুব মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকছেদপুর এলাকায়। বর্তমানে সে আশুলিয়া এলাকায় বাস করেন। ২০০৬ সালে একটি খুনের মামলায় প্রায় সাত বছর জেলে ছিল। জেল থেকে বেরিয়ে সে ডাকাতি করে বেড়াতো। ২০১৮ সালে মাদারীপুরের রাজৈর থানায় একটি মেলায় ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এসসময় জেলে থাকার সময় তার সঙ্গে লোকমান হাকিম ওরফে লিটনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
মাহাবুবের ভাষ্য, তাদের সঙ্গে জেলে থাকা এক ব্যক্তি গোপালগঞ্জ সদরের বাইটকামারির একটি মন্দিরে একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি ও একটি স্বর্ণের তৈরি পিঁড়ি রয়েছে বলে জানায়। মাসখানেক আগে লোকমান জেল থেকে বের হয়ে তাকে ফোন করে ওই মন্দিরে ডাকাতি করার পরিকল্পনা জানায়। পরিকল্পনা মতো লোকমান নিজে ওই মন্দিরে গিয়ে রেকি করে আসে।
গ্রেফতারকৃত লোকমান জানিয়েছে, জেল থেকে বের হয়ে সে ইব্রাহীম, রিপন, মাহাবুবসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন একটি ডাকাত দল তৈরি করে। কোথায় ডাকাতি করলে একবারেই বেশি পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তারা কৃষি ব্যাংকের ওই শাখা ও মন্দিরে ডাকাতি করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে দলের সিনিয়র এক সদস্যের নির্দেশনায় রাজধানীতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ডাকাতি করতে এসে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই প্রতিরোধের অংশ হিসেবে তারা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পেশাদার ডাকাত দলের সদস্যদের নজরদারি শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদপুর থেকে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, এরা আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য। এক জেলা থেকে ডাকাতি করে এরা আরেক জেলায় চলে যায়। এছাড়া এই ডাকাত দলের সঙ্গে এর আগে গ্রেফতার হওয়া ডাকাত দলের অনেকের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে। এরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ডাকাতি করে বেড়াতো। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাকাত দলের প্রত্যেক সদস্যকেই আইনের আওতায় আনা হবলে জানান তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঢাকায় বসে গোপালগঞ্জে ব্যাংক ও মন্দিরে ডাকাতির পরিকল্পনা!

আপডেট সময় : ১২:১৩:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় বসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একটি শাখা ও সদরের বাইটকামারি এলাকার একটি মন্দিরে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। এজন্য ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে একাধিকবার রেকি করে এসেছে ডাকাত দলের সদস্যরা। ব্যাংকের শাখাটি এক তলা ও পুরানো ভবনে হওয়ায় ডাকাতি করা সহজ হবে বলে পরিকল্পনা করেছিল তারা। আর বাইটকামারির মন্দিরে একটি কষ্টিপাথর ও স্বর্ণের পিঁড়ি রয়েছে বলে জানতে পেরেছিল ডাকাত দলের সদস্যরা। এজন্য ওই মন্দিরেও রেকি করে তারা। কিন্তু ব্যাংক ও মন্দিরে দুর্র্ধষ ডাকাতির আগেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ইব্রাহীম চৌধুরী (২৮), লোকমান হাকিম ওরফে লিটন শেখ (৪৪), রিপন খান (২৬) এবং মাহাবুব মিয়া ওরফে মাবুদ মিয়া (৩৯)। গত শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি করার সরঞ্জামাদি ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমান জানান, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ডাকাত চক্রের সদস্য। গ্রেফতারকৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি ও খুনের মামলা রয়েছে। তারা গোপালগঞ্জের একটি ব্যাংক ও মন্দিরে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য জানা এবং অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতার করা হবে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা প্রত্যেকেই আগে ভিন্ন ভিন্ন ডাকাত দলের সদস্য ছিল। জেলে গিয়ে তাদের একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। জেল থেকে বের হয়ে তারা নিজেরা একটি দল গঠন করে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃত ইব্রাহীম চৌধুরীর শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সম্প্রতি সে জেল থেকে বের হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে কৃষি ব্যাংকের শাখাটির নাজুক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। বিষয়টি নিয়ে সে লোকমান হাকিম ওরফে লিটন শেখের সঙ্গে পরামর্শ করে। লিটন শেখ তাকে ডাকাতি করার প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়। ব্যাংক ডাকাতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আগে অন্য সহযোগীদের সঙ্গে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় তারা।
গ্রেফতারকৃত মাহাবুব মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকছেদপুর এলাকায়। বর্তমানে সে আশুলিয়া এলাকায় বাস করেন। ২০০৬ সালে একটি খুনের মামলায় প্রায় সাত বছর জেলে ছিল। জেল থেকে বেরিয়ে সে ডাকাতি করে বেড়াতো। ২০১৮ সালে মাদারীপুরের রাজৈর থানায় একটি মেলায় ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এসসময় জেলে থাকার সময় তার সঙ্গে লোকমান হাকিম ওরফে লিটনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
মাহাবুবের ভাষ্য, তাদের সঙ্গে জেলে থাকা এক ব্যক্তি গোপালগঞ্জ সদরের বাইটকামারির একটি মন্দিরে একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি ও একটি স্বর্ণের তৈরি পিঁড়ি রয়েছে বলে জানায়। মাসখানেক আগে লোকমান জেল থেকে বের হয়ে তাকে ফোন করে ওই মন্দিরে ডাকাতি করার পরিকল্পনা জানায়। পরিকল্পনা মতো লোকমান নিজে ওই মন্দিরে গিয়ে রেকি করে আসে।
গ্রেফতারকৃত লোকমান জানিয়েছে, জেল থেকে বের হয়ে সে ইব্রাহীম, রিপন, মাহাবুবসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন একটি ডাকাত দল তৈরি করে। কোথায় ডাকাতি করলে একবারেই বেশি পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তারা কৃষি ব্যাংকের ওই শাখা ও মন্দিরে ডাকাতি করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে দলের সিনিয়র এক সদস্যের নির্দেশনায় রাজধানীতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ডাকাতি করতে এসে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই প্রতিরোধের অংশ হিসেবে তারা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পেশাদার ডাকাত দলের সদস্যদের নজরদারি শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদপুর থেকে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, এরা আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য। এক জেলা থেকে ডাকাতি করে এরা আরেক জেলায় চলে যায়। এছাড়া এই ডাকাত দলের সঙ্গে এর আগে গ্রেফতার হওয়া ডাকাত দলের অনেকের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে। এরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ডাকাতি করে বেড়াতো। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাকাত দলের প্রত্যেক সদস্যকেই আইনের আওতায় আনা হবলে জানান তিনি।