নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর ছয়টা বিধিনিষেধ শুরু হওয়ায় এসব জেলা থেকে ঢাকায় ঢুকতে পারছে না কোনো গাড়ি। প্রশাসনের কড়াকড়ি নজরদারির কারণে ঢাকার প্রবেশমুখেই থামতে হচ্ছে দূরপাল্লার যানগুলোকে। এজন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে এসব গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশে আসা যাত্রীদের। এছাড়া বিধিনিষেধের কারণে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়িও যেতে পারছে না তাদের গন্তব্য।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে শত শত গাড়ি আটকে আছে। এর ফলে প্রবেশপথগুলোতে তৈরি হয়েছে যানজট। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, ‘লকডাউনের কারণে অন্য জেলা থেকে আসা গণপরিবহনগুলোকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধে ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় মঙ্গলবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। জেলাগুলো হলো- মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ। ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত এসব জেলায় মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সকাল থেকেই রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে কঠোর অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে পুলিশকে।
গাজীপুরের ওপর দিয়ে উত্তরবঙ্গসহ কয়েকটি অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। সকাল থেকে লকডাউন কার্যকর রাখতে পুলিশ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে। গণপরিবহন থেকে শুরু করে কোনো যানবাহনই চলাচল করতে দিচ্ছে না পুলিশ। এছাড়া ঢাকা থেকে কোনো গাড়িকেও বের হতে দেয়া হচ্ছে না। যানবাহন না পেয়ে ঢাকায় আসা মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুরের প্রতিটি প্রবেশ পথেই পুলিশ কঠোর অবস্থায় রয়েছে।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিদ্ধান্ত জানানোর পর রেলপথ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রেন এসব জেলার উপর দিয়ে চললে থামবে না। বিআইডব্লিউটিএ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও দূরপাল্লার সব বাস, লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া লোকজন প্রবেশপথগুলোতে আটকা পড়েছেন। উপায় না পেয়ে অনেকে পায়ে হেঁটেই রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় হাইওয়ে ও থানা-পুলিশ আলাদা চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের গতিরোধ করছে। যানবাহনগুলো পুলিশ ঘুরিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে। উপায় না পেয়ে বাস থেকে নেমে কেউ হেঁটে কেউবা রিকশায় উঠে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কৌশিক। চার দিনের ছুটি নিয়ে রবিবার গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে যান তিনি। গতকাল বিধিনিষেধের খবর শুনে ছুটি শেষ হওয়ার আগেই রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু গাজীপুরে আসার পর ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ি ঢুকতে না দেয়ায় তিনি গাড়ি থেকে নেমে যান। কিছুদূর হাঁটার পর বিকল্প যানে আসার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গাড়ি পেয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। কৌশিকের মতো অনেকেই গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
এদিকে বিধিনিষেধের কারণে ঢাকা থেকেও কোনো গাড়ি বেরোতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যশোরে যাওয়ার জন্য গাবতলীতে অপেক্ষা করছিলেন রাসেল। তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে আমাকে যশোর যেতে হবে। কিন্তু হঠাৎ লকডাউন ঘোষণায় দূরপাল্লার বাস বন্ধ। এখন কিভাবে যাবো বুঝতে পারছি না। কিছু করার নাই যেভাবেই হোক আমাকে যেতে হবে। ঈদের সময় যেভাবে গিয়েছি সেভাবেই যাবো।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের দারুস সালাম অঞ্চলের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা দূরপাল্লার গাড়ি যেতে দিচ্ছি না। এছাড়া লকডাউন ঘোষণা করা জেলাগুলোর উপর দিয়ে আসা কোনো যাত্রীবাহী পরিবহনকেও ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।’
ঢাকায় ঢুকছে না দূরপাল্লার গাড়ি, বেরোতেও কড়াকড়ি
ট্যাগস :
ঢাকায় ঢুকছে না দূরপাল্লার গাড়ি
জনপ্রিয় সংবাদ