নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় এই বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালে একদিনে ঢাকায় ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল বলে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান। সোমবার সকাল থেকে টানা বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, নিচু এলাকায় ঘর-বাড়িতেও পানি উঠে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, বনানী-কাকলী, ধানমন্ডি-২৭, শান্তিনগর, মহাখালী, কল্যাণপুর, শ্যামলী ও পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ৩২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বরিশালে। অধিকাংশ এলাকায় মাঝারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার রাতেই দুর্বল হয়ে পড়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রোদেলা আবহাওয়ার দেখা মিলেছে রাজধানীতে। সমুদ্র ও নদীবন্দরে সতর্কতা সংকেত নামিয়ে আনা হয়েছে। নৌ যান চলাচল শুরুর ঘোষণা এসেছে। পাশাপাশি দুর্যোগ কবলিত এলাকার ক্ষতচিহ্নও ভেসে উঠতে শুরু করেছে। আর আশ্রয় কেন্দ্র থেকেও ফিরতে শুরু করেছে মানুষ।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক বুধবার : আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, প্রতিটি সাইক্লোনের গতি প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন থাকে। একটার সঙ্গে আরেকটা মেলানো যাবে না। একেকটার বৈশিষ্ট্য একেকরকম। “সিত্রাং গতকাল (সোমবার) রাতেই উপকূল অতিক্রম করেছে। এখন স্থল নি¤œচাপ হিসেবে রয়েছে। এটা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। মঙ্গলবার বিকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং বুধবার থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
সমুদ্রবন্দরের তিন নম্বর সতর্ক সংকেতও শিগগির নামিয়ে নিতে বলা হবে জানিয়ে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, “বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, এরপর ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে আসে। একেক উপকূলের দিকে যখন আসে, তখন গতিও একেক রকম হয়। সাগর থেকে যখন এটা বাংলাদেশের দিকে আসে, একটু দিক পরিবর্তন করেছে। “আমরা জনগণকে বিভ্রান্ত করার মত কোনো পূর্বাভাস দিই না। সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া হয়, যাতে সতর্কতা, প্রস্তুতি ও মোকাবেলা করা যায়। এবার সঠিকভাবে তা করা হয়েছে।”
গত ২০ অক্টোবর আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। পরদিন সেটি পরিণত হয় সুস্পষ্ট লঘুচাপে। ২২ অক্টোবর সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে নি¤œচাপে পরিণত হয়। নি¤œচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে গভীর নি¤œচাপে রূপ নেয় পর দিন। ২৩ অক্টোবর এটি রূপ নেয় ঘূর্ণিঝড়ে। মাঝারি শক্তি নিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’; তবে তেজকটালের মধ্যে এই ঝড় আসায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে ভেসেছে উপকূল। সোমবার রাত ৯টায় ঝড়টি ভোলার পাশ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে বলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়। সম্পূর্ণ ঘূর্ণবায়ুটি উপকূলে উঠে আসতে ৩-৪ ঘণ্টা লাগে। মঙ্গলবার দুপুরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে সেটি অবস্থান করছিল নেত্রকোণা ও তৎসংলগ্ন এলাকায়। সন্ধ্যার মধ্যে সেটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে বলে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে গেলেও মঙ্গলবার রাজধানীতে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল, সেখানেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বভাসে বলা হয়েছে- রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি বাড়তে পারে।
উপড়েপড়া দুই শতাধিক গাছ অপসারণ ডিএনসিসির : ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’- এর অগ্রভাগের প্রভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। কোথাও কোথায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
গতকাল মঙ্গলবার এসব গাছ রাস্তা থেকে অপসারণ করেছে ডিএনসিসি। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সিত্রাংয়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে ডিএনসিসি। এরই মধ্যে প্রধান প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে উপড়েপড়া ছোট-বড় প্রায় দুই শতাধিক গাছ ভোরের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। ফলে সকাল থেকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অবশিষ্ট জলাবদ্ধতা দূর করতে ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নির্দেশে প্রকৌশল বিভাগ, বর্জ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো গভীর রাত থেকে কাজ করছে। জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কুইক রেসপন্স টিমের মাধ্যমে যেসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে সেই সব অঞ্চলের পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। যদিও সোমবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টি হওয়ায় পানি অপসারণে কিছুটা সময় লেগেছে। কোথাও কোনো পানি জমে থাকলে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপের মাধ্যমে ছবি তুলে লোকেশন উল্লেখ করে জানানোর জন্য নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ডিএনসিসি।
ঢাকায় এক যুগের রেকর্ড বৃষ্টিপাত
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ