ঢাকা ১১:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

ঢাকার রাস্তা ফাঁকা

  • আপডেট সময় : ০১:৩৫:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই ২০২১
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে সারা দেশে শুরু হয়েছে সাত দিনের ‘কঠোর’ লকডাউনের বিধিনিষেধ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ রাজধানীর রাজপথ অনেকটাই ফাঁকা। সরকারি ও বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ছাড়া কিছু রিকশা-রিকশাভ্যান চলছে বিভিন্ন রাস্তায়। কিছু কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা গেলেও সংখ্যায় তা একেবারেই কম।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেক পোস্ট ছাড়াও কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। সকালে গুলশান, রামপুরা ও হাতিঝিল এলাকায় সেনাবাহিনীর টহলওদেখা গেছে।
সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সারাদেশেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ১০৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মাঠে রাখা হয়েছে। অফিস-আদালত, গণপরিবহন, শপিংমল বন্ধ রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে ঘরে থাকার।
রাস্তায় বেরিয়ে যুৎসই কারণ দেখাতে না পারায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকশ মানুষকে। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে যে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে, সে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছিল কয়েক দিন ধরেই।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, কেউ বিধি-নিষেধ ভঙ্গ করলে দ-বিধির ২৬৯ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তায় কোনো ব্যক্তিগত যানবাহনও চলবে না। চলতে পারবে শুধু রিকশা।
“যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে প্রথম দিনে ৫০০০ মামলা ও গ্রেপ্তার করতে হচ্ছে, আমরা তাও করব।”
দ-বিধির ২৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলা করে এমন কোনো কাজ করেন, যা জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক কোনো রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করেন, তাহলে তাকে ছয়মাস পর্যন্ত কারাদ-, বা অর্থদ-, অথবা উভয় দ- দেওয়া যাবে।
মানুষকে বিধিনিষেধ মানাতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি টহলে রয়েছে। মাইকে সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। এমন কঠোর হওয়ার প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়ে আছে গত কয়েকদিন ধরে। এক দিনে ৮ হাজার ৮২২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়েছে বুধবার, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বুধবার দৈনিক শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি চারজনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। হাসপাতালে রোগীর চাপও বেড়েছে এক সপ্তাহ আগের সময়ের তুলনায়। সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতেও কঠোর লকডাউনের আগে স্রোতের মত ঢাকা ছেড়েছে মানুষ। গত মধ্য মার্চে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এপ্রিলে বিধিনিষেধের ঘোষণা আসার পরও এমন ঘটেছিল।
গত সোমবার থেকে সীমিত বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও গত কয়েকদিনে যে যেভাবে পেরেছেন মরিয়া হয়ে রাজধানী ছেড়েছেন। বুধবারও গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফেরিতে, ট্রাকে করে গ্রামের বাড়ি গেছে বেপরোয়া মানুষ।
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। তবে প্রয়োজনে এর মেয়াদ বাড়তে পারে বলেও ইংগিত এসেছে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কথায়।
লকডাউনের প্রথম দিন সকালে মগবাজার মৌচাক, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, মীরপুর, আজিমপুর, বাড্ডা, রামপুরা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, হাতিরপুল ঘুরে মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট দেখা গেছে।
কাকরাইলের মোড়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা একটি সাদা প্রাইভেট কার থামিয়ে বলেন, ‘‘ভাই, কেন বের হয়েছেন? জানেন না লকডাউন চলছে? কেন নিজে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন, অন্যদেরকে বিপদে ফেলছেন?”
পরে সংবাদমাধ্যমকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ঘর থেকে বের হওয়ার যুক্তসঙ্গত কারণ না দেখালে মামলা, জেল-জরিমান মুখে পড়তে হবে। কোনো ছাড় আমরা দিচ্ছি না, কড়াকড়ি করছি।”
আজিমপুর চৌরাস্তায় এক পুলিশ কর্মকর্ত জানান, সকাল থেকেই ব্যারিকেড দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। ‘অতি প্রয়োজন’ ছাড়া কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। মোটরসাইকেলে দুজন যাত্রী দেখলে একজনকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কেন তারা বের হয়েছেন তাও জানতে চাওয়া হচ্ছে।
লকডাউনে যান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে নিষেধ থাকলেও রিকশায় বাধা নেই। সকাল থেকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে রিকশা চালকরা বসে থাকলেও যাত্রী পাচ্ছেন না। তার মধ্যে চলছে বৃষ্টি। মালিবাগ মোড়ে রিকশা চালক হোসেন আলী বলেন, ‘‘ স্যার গত কয়েকটা দিন ভালো কামাই হয়েছে। কিন্তু আইজ সকাল থেকে খ্যাপ পাই নাই। কীভাবে চলমু?”
রিকশাচালকরা জটলা করে বসে থাকলে মাঝে মধ্যে পুলিশ সদস্যরা হুইসেল বাজিয়ে তাদের সর্তক করছেন। অফিস আদালত বন্ধ থাকলেও শিল্পকারখানাগুলো ‘নিজস্ব ব্যবস্থায়’ চালু রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। সকালে পোশাক শ্রমিকদের অনেককে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যতে দেখা যায়। তাদেরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হচ্ছে।
সকালে মীরপুরে কারখানায় যাওয়ার পথে পোশাককর্মী তাছলিমা বেগম বললেন, ‘‘লকডাউন হোক আর যাই থাকুক, কাজে তো যেতে হবে। রিকশা ভাড়া দিয়ে তো পোষাবে না। তাই হেঁটে যাচ্ছি।”
অলি-গলি ফুটপাতে কিছু দোকানপাটও খোলা দেখা গেল। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে।
খাবারের দোকানগুলোতেও মানুষজনকে ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না। শান্তিনগর বাজারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কিছুক্ষণ পর পর বাজার ঘুরে দেখছেন সবাই মাস্ক পড়ছে কিনা, কোনো দোকানে জটলা আছে কিনা।
সেখানে দেখা গেল তরকারি-শাক-সবজি নিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছেন কয়েকজন বিক্রেতা। তাদের একজন কলিমউদ্দিন বললেন, ‘‘ কাস্টমার কম। লকডাউনের কারণে আমরা বাজারের ভেতরে না গিয়ে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় বসে বিক্রি করছি।”
ঢাকায় রাস্তায় বেরিয়ে গ্রেপ্তার কয়েকশ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ রাস্তায় বের হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কেবল ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগেই ১৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে তেজগাঁও থানা এলাকায় ৩০ জন, শিল্পাঞ্চল থানা ৮ জন, মোহাম্মদপুর ২৬ জন, আদাবর থানা ১৮ জন, শেরে বাংলা নগর থানা ৪০ জন এবং হাতিরঝিল থানা পুলিশ ৪২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল গ্রেপ্তারের এই তথ্য জানিয়ে বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাহতাব উদ্দিন জানান, কঠোর লকডাউনের মধ্যে ‘অপ্রয়োজনে’ বের হওয়ায় তার এলাকার বিভিন্ন থানায় দুপুর পর্যন্ত একশর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বলেন, “এই পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় হয়েছে ৯৯ হাজার টাকা। আরও আটক হচ্ছে এবং সংখ্যা আপডেট হচ্ছে।” মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের সাতজনকে জরিমানা করা হয়েছে। বাকিদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রমনা বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, সকালে রমনা থানার সুগন্ধা মোড় থেকে দুজন এবং শাহবাগ মোড় থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে সরকারি আদেশ অমান্য করায় দ-বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মাহিন ফারাজী বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত ১০ জনকে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে রায়েরবাজার থেকে ৭ জন এবং তিন রাস্তার মোড় থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
সারা দেশে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথমদিনে বিধি-নিষেধ মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে পুলিশের মত র‌্যাবও বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে। বারডেমের সামনে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, “সকাল থেকে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যাদেরকে পেয়েছি অধিকাংশই প্রয়োজনে বের হয়েছেন। কেউ চিকিৎসার জন্য বের হয়েছেন, কেউবা বিদেশ যাবেন।”
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে বলা হয়, এর বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিধি-নিষেধ ভেঙে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে মামলা দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে গ্রেপ্তারও করা হবে।
প্রথমদিনে রাজধানীতে ২২২ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা : কঠোর লকডাউনের প্রথমদিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারী ২২২টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এতে জরিমানা করা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকা। রেকারিং করা হয়েছে ৪৬টি গাড়ি, আর জব্দ করা হয়েছে ছয়টি। বেশিরভাগ মামলাই করা হয়েছে ওয়ারী, রমনা ও মতিঝিল বিভাগে। এ তিনটি বিভাগে যথাক্রমে ৭০ হাজার, ৫৮ হাজার ১০০ ও ৪৫ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) দুপুর ১টা পর্যন্ত অভিযানের পর এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় ডিএমপির আটটি বিভাগ। অভিযানে ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ২৪৯ জনকে, সাজা দেয়া হয়েছে আটজনকে। ৫৬ জনকে ৬ হাজার ২০৭ টাকা এবং ১০টি দোকানকে ৩৪ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রমনা বিভাগে দুজনকে জরিমানা করা হয়েছে ৪০০ টাকা করে। ৩৩টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৫৮ হাজার ১০০ টাকা, রেকারিং করা হয়েছে দুটি গাড়ি। লালবাগ বিভাগে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৮ জনকে। তিনজনকে জরিমানা করা হয়েছে ৩০০ টাকা। এছাড়াও ২৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ২৫ হাজার ৬০০ টাকা।
মতিঝিল বিভাগ থেকে আটক দুই ব্যক্তিকে মোট জরিমানা করা হয়েছে ১১০০ টাকা ও ৯টি দোকানকে মোট জরিমানা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়াও ১৯টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা। ওয়ারী বিভাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকে। ১৬ ব্যক্তির কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়াও ১৫টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। তেজগাঁও বিভাগ থেকে আটক করা হয়েছে ১৬৭ জনকে। মিরপুর বিভাগ থেকে ৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে ও ৩০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার ৬০০। ৯৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ২৫ হাজার, রেকারিং দেয়া হয় ১১টি গাড়ি ও ৪টি গাড়ি জব্দ করা হয়। গুলশান বিভাগ থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে ও ৮ জনকে জরিমানা করা হয় ২ হাজার সাত টাকা। ২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ৬১ হাজার। উত্তরা বিভাগ থেকে ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তিনজনকে জরিমানা করা হয় ৭০০ টাকা। এছাড়াও একটি দোকানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১১টি গাড়ির মামলায় ১২ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩৩টি গাড়ি রেকারিং করা হয়।
কেউ অর্ধেক, কেউবা পুরো সাটার খুলেই চালাচ্ছেন দোকান : কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সকল প্রতিষ্ঠান, দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে জরুরি সেবার মধ্যে পড়ে না এমন অনেক দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে। কেউ পুরো সাটার খুলে, কেউ বা অর্ধেক সাটার খুলে দোকান চালাচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এর মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাত মসজিদ হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর এলাকায় বিধিনিষেধ মানার চিত্র নেই বললেই চলে। এসব এলাকার সড়কে প্রতিদিনের মতো শত শত মানুষ চলাচল করছেন। শিশুরা বাইরে খেলাধুলায় ব্যস্ত। বয়স্কদের সময় কাটছে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে। সাত মসজিদ হাউজিং এলাকার মূল ফটকটি হাউজিং কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রেখেছেন। তবে সেটি আবার রিকশা বা প্রাইভেট কার এলে দিব্যি খুলেও দেয়া হচ্ছে। হাউজিং এলাকার ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেখানকার প্রতিটি খাবার হোটেলই খোলা রয়েছে। প্রতিদিনের মতো হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। পাশেই খোলা হার্ডওয়ার, প্রসাধনী ও ডেকোরেটরের দোকান। মানুষের উপচেপড়া ভিড় এলাকার ইউসেফ স্কুলের সামনে। সেখানে খাবার হোটেল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান এবং রাস্তায় শত শত মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। উজ্জল হোসেন নামের একজন পথচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয়দের মাঝে করোনার ভয় নেই। এমনকি সরকারি নির্দেশনারও তোয়াক্কা করেন না তারা। উজ্জলের ভাষায়, ‘এটা তো বেড়িবাঁধ পাড়ের এলাকা। এই এলাকায় পুলিশ বা আর্মি ওইভাবে আসবে না, তাই সবাই বাইরে। দোকানও সব খোলা।’ এলাকার পশ্চিম দিকের সড়কের অবস্থা আরও বেহাল। জনচলাচল একেবারেই স্বাভাবিক এবং সব ধরনের দোকানপাটও খোলা। স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইকবাল বলেন, ‘এই এলাকা এমনই। এখানকার মানুষ অসুস্থ হইলে ডাক্তারের কাছে কম যায়। বেশি যায় কবিরাজের কাছে। এগোরে করোনার ভয় দেখাইয়া লাভ নাই।’
একই চিত্র পাশ্র্ববর্তী চাঁদ উদ্যান এলাকায়। খাবার হোটেল, চায়ের দোকান, বিরিয়ানির দোকানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এলাকাটিতে সব ধরনের দোকানপাটই খোলা। কিছু দোকানের সাটার অর্ধেক খোলা রাখা হয়েছে। ক্রেতারা মাথা নিচু করে দোকানে প্রবেশ করছেন। সাধারণ দিনের মতোই বিক্রি হচ্ছে জুতা, কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী। নবীনগর এলাকার সড়কের বেহাল দশা। ফলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পৌঁছানোও বেশ ভোগান্তির। আর সে সুযোগটাই নিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। খোলা আছে সব দোকানপাট। আর দোকান খোলা থাকার সুবাদে স্থানীয় বাসিন্দারাও অবস্থান করছেন বাইরে। এদিকে শ্যামলি এলাকায় অর্ধেক সাটার খুলে ফটোকপির দোকান চালু রাখতে দেখা গেছে। পুরো সাটার খুলে স্বাভাবিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কামরাঙ্গীরচরের দোকানিরা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করল…

ঢাকার রাস্তা ফাঁকা

আপডেট সময় : ০১:৩৫:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে সারা দেশে শুরু হয়েছে সাত দিনের ‘কঠোর’ লকডাউনের বিধিনিষেধ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ রাজধানীর রাজপথ অনেকটাই ফাঁকা। সরকারি ও বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ছাড়া কিছু রিকশা-রিকশাভ্যান চলছে বিভিন্ন রাস্তায়। কিছু কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা গেলেও সংখ্যায় তা একেবারেই কম।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেক পোস্ট ছাড়াও কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। সকালে গুলশান, রামপুরা ও হাতিঝিল এলাকায় সেনাবাহিনীর টহলওদেখা গেছে।
সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সারাদেশেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ১০৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মাঠে রাখা হয়েছে। অফিস-আদালত, গণপরিবহন, শপিংমল বন্ধ রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে ঘরে থাকার।
রাস্তায় বেরিয়ে যুৎসই কারণ দেখাতে না পারায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকশ মানুষকে। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে যে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে, সে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছিল কয়েক দিন ধরেই।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, কেউ বিধি-নিষেধ ভঙ্গ করলে দ-বিধির ২৬৯ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তায় কোনো ব্যক্তিগত যানবাহনও চলবে না। চলতে পারবে শুধু রিকশা।
“যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে প্রথম দিনে ৫০০০ মামলা ও গ্রেপ্তার করতে হচ্ছে, আমরা তাও করব।”
দ-বিধির ২৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলা করে এমন কোনো কাজ করেন, যা জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক কোনো রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করেন, তাহলে তাকে ছয়মাস পর্যন্ত কারাদ-, বা অর্থদ-, অথবা উভয় দ- দেওয়া যাবে।
মানুষকে বিধিনিষেধ মানাতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি টহলে রয়েছে। মাইকে সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। এমন কঠোর হওয়ার প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়ে আছে গত কয়েকদিন ধরে। এক দিনে ৮ হাজার ৮২২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়েছে বুধবার, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বুধবার দৈনিক শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি চারজনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। হাসপাতালে রোগীর চাপও বেড়েছে এক সপ্তাহ আগের সময়ের তুলনায়। সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতেও কঠোর লকডাউনের আগে স্রোতের মত ঢাকা ছেড়েছে মানুষ। গত মধ্য মার্চে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এপ্রিলে বিধিনিষেধের ঘোষণা আসার পরও এমন ঘটেছিল।
গত সোমবার থেকে সীমিত বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও গত কয়েকদিনে যে যেভাবে পেরেছেন মরিয়া হয়ে রাজধানী ছেড়েছেন। বুধবারও গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফেরিতে, ট্রাকে করে গ্রামের বাড়ি গেছে বেপরোয়া মানুষ।
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। তবে প্রয়োজনে এর মেয়াদ বাড়তে পারে বলেও ইংগিত এসেছে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কথায়।
লকডাউনের প্রথম দিন সকালে মগবাজার মৌচাক, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, মীরপুর, আজিমপুর, বাড্ডা, রামপুরা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, হাতিরপুল ঘুরে মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট দেখা গেছে।
কাকরাইলের মোড়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা একটি সাদা প্রাইভেট কার থামিয়ে বলেন, ‘‘ভাই, কেন বের হয়েছেন? জানেন না লকডাউন চলছে? কেন নিজে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন, অন্যদেরকে বিপদে ফেলছেন?”
পরে সংবাদমাধ্যমকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ঘর থেকে বের হওয়ার যুক্তসঙ্গত কারণ না দেখালে মামলা, জেল-জরিমান মুখে পড়তে হবে। কোনো ছাড় আমরা দিচ্ছি না, কড়াকড়ি করছি।”
আজিমপুর চৌরাস্তায় এক পুলিশ কর্মকর্ত জানান, সকাল থেকেই ব্যারিকেড দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। ‘অতি প্রয়োজন’ ছাড়া কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। মোটরসাইকেলে দুজন যাত্রী দেখলে একজনকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কেন তারা বের হয়েছেন তাও জানতে চাওয়া হচ্ছে।
লকডাউনে যান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে নিষেধ থাকলেও রিকশায় বাধা নেই। সকাল থেকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে রিকশা চালকরা বসে থাকলেও যাত্রী পাচ্ছেন না। তার মধ্যে চলছে বৃষ্টি। মালিবাগ মোড়ে রিকশা চালক হোসেন আলী বলেন, ‘‘ স্যার গত কয়েকটা দিন ভালো কামাই হয়েছে। কিন্তু আইজ সকাল থেকে খ্যাপ পাই নাই। কীভাবে চলমু?”
রিকশাচালকরা জটলা করে বসে থাকলে মাঝে মধ্যে পুলিশ সদস্যরা হুইসেল বাজিয়ে তাদের সর্তক করছেন। অফিস আদালত বন্ধ থাকলেও শিল্পকারখানাগুলো ‘নিজস্ব ব্যবস্থায়’ চালু রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। সকালে পোশাক শ্রমিকদের অনেককে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যতে দেখা যায়। তাদেরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হচ্ছে।
সকালে মীরপুরে কারখানায় যাওয়ার পথে পোশাককর্মী তাছলিমা বেগম বললেন, ‘‘লকডাউন হোক আর যাই থাকুক, কাজে তো যেতে হবে। রিকশা ভাড়া দিয়ে তো পোষাবে না। তাই হেঁটে যাচ্ছি।”
অলি-গলি ফুটপাতে কিছু দোকানপাটও খোলা দেখা গেল। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে।
খাবারের দোকানগুলোতেও মানুষজনকে ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না। শান্তিনগর বাজারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কিছুক্ষণ পর পর বাজার ঘুরে দেখছেন সবাই মাস্ক পড়ছে কিনা, কোনো দোকানে জটলা আছে কিনা।
সেখানে দেখা গেল তরকারি-শাক-সবজি নিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছেন কয়েকজন বিক্রেতা। তাদের একজন কলিমউদ্দিন বললেন, ‘‘ কাস্টমার কম। লকডাউনের কারণে আমরা বাজারের ভেতরে না গিয়ে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় বসে বিক্রি করছি।”
ঢাকায় রাস্তায় বেরিয়ে গ্রেপ্তার কয়েকশ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ রাস্তায় বের হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কেবল ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগেই ১৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে তেজগাঁও থানা এলাকায় ৩০ জন, শিল্পাঞ্চল থানা ৮ জন, মোহাম্মদপুর ২৬ জন, আদাবর থানা ১৮ জন, শেরে বাংলা নগর থানা ৪০ জন এবং হাতিরঝিল থানা পুলিশ ৪২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল গ্রেপ্তারের এই তথ্য জানিয়ে বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাহতাব উদ্দিন জানান, কঠোর লকডাউনের মধ্যে ‘অপ্রয়োজনে’ বের হওয়ায় তার এলাকার বিভিন্ন থানায় দুপুর পর্যন্ত একশর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বলেন, “এই পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় হয়েছে ৯৯ হাজার টাকা। আরও আটক হচ্ছে এবং সংখ্যা আপডেট হচ্ছে।” মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের সাতজনকে জরিমানা করা হয়েছে। বাকিদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রমনা বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, সকালে রমনা থানার সুগন্ধা মোড় থেকে দুজন এবং শাহবাগ মোড় থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে সরকারি আদেশ অমান্য করায় দ-বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মাহিন ফারাজী বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত ১০ জনকে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে রায়েরবাজার থেকে ৭ জন এবং তিন রাস্তার মোড় থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
সারা দেশে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথমদিনে বিধি-নিষেধ মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে পুলিশের মত র‌্যাবও বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে। বারডেমের সামনে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, “সকাল থেকে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যাদেরকে পেয়েছি অধিকাংশই প্রয়োজনে বের হয়েছেন। কেউ চিকিৎসার জন্য বের হয়েছেন, কেউবা বিদেশ যাবেন।”
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে বলা হয়, এর বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিধি-নিষেধ ভেঙে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে মামলা দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে গ্রেপ্তারও করা হবে।
প্রথমদিনে রাজধানীতে ২২২ গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা : কঠোর লকডাউনের প্রথমদিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারী ২২২টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এতে জরিমানা করা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকা। রেকারিং করা হয়েছে ৪৬টি গাড়ি, আর জব্দ করা হয়েছে ছয়টি। বেশিরভাগ মামলাই করা হয়েছে ওয়ারী, রমনা ও মতিঝিল বিভাগে। এ তিনটি বিভাগে যথাক্রমে ৭০ হাজার, ৫৮ হাজার ১০০ ও ৪৫ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) দুপুর ১টা পর্যন্ত অভিযানের পর এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় ডিএমপির আটটি বিভাগ। অভিযানে ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ২৪৯ জনকে, সাজা দেয়া হয়েছে আটজনকে। ৫৬ জনকে ৬ হাজার ২০৭ টাকা এবং ১০টি দোকানকে ৩৪ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রমনা বিভাগে দুজনকে জরিমানা করা হয়েছে ৪০০ টাকা করে। ৩৩টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৫৮ হাজার ১০০ টাকা, রেকারিং করা হয়েছে দুটি গাড়ি। লালবাগ বিভাগে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৮ জনকে। তিনজনকে জরিমানা করা হয়েছে ৩০০ টাকা। এছাড়াও ২৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ২৫ হাজার ৬০০ টাকা।
মতিঝিল বিভাগ থেকে আটক দুই ব্যক্তিকে মোট জরিমানা করা হয়েছে ১১০০ টাকা ও ৯টি দোকানকে মোট জরিমানা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়াও ১৯টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা। ওয়ারী বিভাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকে। ১৬ ব্যক্তির কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়াও ১৫টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। তেজগাঁও বিভাগ থেকে আটক করা হয়েছে ১৬৭ জনকে। মিরপুর বিভাগ থেকে ৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে ও ৩০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে ১০ হাজার ৬০০। ৯৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ২৫ হাজার, রেকারিং দেয়া হয় ১১টি গাড়ি ও ৪টি গাড়ি জব্দ করা হয়। গুলশান বিভাগ থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে ও ৮ জনকে জরিমানা করা হয় ২ হাজার সাত টাকা। ২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ৬১ হাজার। উত্তরা বিভাগ থেকে ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তিনজনকে জরিমানা করা হয় ৭০০ টাকা। এছাড়াও একটি দোকানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১১টি গাড়ির মামলায় ১২ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩৩টি গাড়ি রেকারিং করা হয়।
কেউ অর্ধেক, কেউবা পুরো সাটার খুলেই চালাচ্ছেন দোকান : কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সকল প্রতিষ্ঠান, দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে জরুরি সেবার মধ্যে পড়ে না এমন অনেক দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে। কেউ পুরো সাটার খুলে, কেউ বা অর্ধেক সাটার খুলে দোকান চালাচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এর মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাত মসজিদ হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর এলাকায় বিধিনিষেধ মানার চিত্র নেই বললেই চলে। এসব এলাকার সড়কে প্রতিদিনের মতো শত শত মানুষ চলাচল করছেন। শিশুরা বাইরে খেলাধুলায় ব্যস্ত। বয়স্কদের সময় কাটছে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে। সাত মসজিদ হাউজিং এলাকার মূল ফটকটি হাউজিং কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রেখেছেন। তবে সেটি আবার রিকশা বা প্রাইভেট কার এলে দিব্যি খুলেও দেয়া হচ্ছে। হাউজিং এলাকার ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেখানকার প্রতিটি খাবার হোটেলই খোলা রয়েছে। প্রতিদিনের মতো হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। পাশেই খোলা হার্ডওয়ার, প্রসাধনী ও ডেকোরেটরের দোকান। মানুষের উপচেপড়া ভিড় এলাকার ইউসেফ স্কুলের সামনে। সেখানে খাবার হোটেল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান এবং রাস্তায় শত শত মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। উজ্জল হোসেন নামের একজন পথচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয়দের মাঝে করোনার ভয় নেই। এমনকি সরকারি নির্দেশনারও তোয়াক্কা করেন না তারা। উজ্জলের ভাষায়, ‘এটা তো বেড়িবাঁধ পাড়ের এলাকা। এই এলাকায় পুলিশ বা আর্মি ওইভাবে আসবে না, তাই সবাই বাইরে। দোকানও সব খোলা।’ এলাকার পশ্চিম দিকের সড়কের অবস্থা আরও বেহাল। জনচলাচল একেবারেই স্বাভাবিক এবং সব ধরনের দোকানপাটও খোলা। স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইকবাল বলেন, ‘এই এলাকা এমনই। এখানকার মানুষ অসুস্থ হইলে ডাক্তারের কাছে কম যায়। বেশি যায় কবিরাজের কাছে। এগোরে করোনার ভয় দেখাইয়া লাভ নাই।’
একই চিত্র পাশ্র্ববর্তী চাঁদ উদ্যান এলাকায়। খাবার হোটেল, চায়ের দোকান, বিরিয়ানির দোকানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এলাকাটিতে সব ধরনের দোকানপাটই খোলা। কিছু দোকানের সাটার অর্ধেক খোলা রাখা হয়েছে। ক্রেতারা মাথা নিচু করে দোকানে প্রবেশ করছেন। সাধারণ দিনের মতোই বিক্রি হচ্ছে জুতা, কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী। নবীনগর এলাকার সড়কের বেহাল দশা। ফলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পৌঁছানোও বেশ ভোগান্তির। আর সে সুযোগটাই নিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। খোলা আছে সব দোকানপাট। আর দোকান খোলা থাকার সুবাদে স্থানীয় বাসিন্দারাও অবস্থান করছেন বাইরে। এদিকে শ্যামলি এলাকায় অর্ধেক সাটার খুলে ফটোকপির দোকান চালু রাখতে দেখা গেছে। পুরো সাটার খুলে স্বাভাবিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কামরাঙ্গীরচরের দোকানিরা।