ঢাকা ০২:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
বসেছে ৮০টি স্টল

ঢাকার খামারবাড়িতে জাতীয় ফল মেলায় নানা জাতের ফল

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা ব্যাকরণে বাগ্ধারা পড়তে গিয়ে ‘কাঁঠালের আমসত্ত্ব’র সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এর অর্থ হলো, অসম্ভব বস্তু। আমের আঁশমুক্ত ঘন রস জ্বাল দিয়ে থকথকে হলে তাকে শুকিয়ে শক্ত করা হয়। কয়েক স্তরের থকথকে আমের রস শক্ত করে খাওয়ার উপযোগী করা হয়। এটাই আমসত্ত্ব। কাঁঠালের পাতলা রসে এটা সম্ভব হয় না।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের কৃষি উদ্যোক্তা সেলিনা আখতার অবশ্য সেই ‘কাঁঠালসত্ত্ব’ বানিয়ে ছেড়েছেন। সুবার্তা ট্রাস্ট নামের একটি সংগঠনের এই প্রতিনিধি বললেন, আমের চেয়ে কাঁঠালের সত্ত্ব বানানো সত্যিই কষ্টের। রোদে শুকিয়ে একে শক্ত করা যায় না। উন্নত জাতের ড্রায়ার বা শুকানোর যন্ত্র আছে এটি বানানোর।

শুধু কি এই একটি খাবার? কাঁঠালের আচার, পিঠাসহ ২৮ ধরনের খাদ্য তৈরি করেন তাঁরা। কাঁঠালের আমসত্ত্বসহ কয়েকটি খাবার দেখা গেল গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতীয় ফল মেলায়। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের (কেআইবি) চত্বরে ওইদিন শুরু হয়েছে এ মেলা। চলবে শনিবার (২১ জুন) পর্যন্ত।

ফল মেলায় প্রায় ৮০টি স্টল রয়েছে। এসব স্টলে কাঁঠালের নয়, বরং আমের একচ্ছত্র আধিপত্য চোখে পড়ল।

কত রকমের আম যে উঠেছে এই মেলায়। ল্যাংড়া, আম্রপালি, নাগ ফজলি, বারি-৪, হাঁড়িভাঙা, সূর্যপুরি-এসব দেশি জাতের আম তো আছেই। সঙ্গে আছে থাই কাটিমন, পোকড়ি, হানিভিউ, ব্যানানা, মিয়াজাকি, আপেল ম্যাঙ্গো, কিং অব চাকাপাতসহ আরো বহু জাতের আম।

মেলায় জনপ্রিয় দেশি জাত বলতে যা বোঝায় অর্থাৎ ল্যাংড়া, আম্রপালি, নাগ ফজলি, বারি-৪, হাঁড়িভাঙা, সূর্যপুরির মতো আমগুলো কেনার কয়েকটি স্টল আছে। অন্য যেসব আমের কথা বললাম, সেগুলো আছে প্রদর্শনীর জন্য। সেই প্রদর্শনী করছে মূলত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকে প্রথমেই আপনি বিশালকায় যে স্টল পাবেন, সেটিই এই সরকারি প্রতিষ্ঠানের। স্টলে ফল সাজানো থরে থরে। স্টলে থাকা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মোরশেদ আলম বলেন, ‘দেড় শ র বেশি ফলের প্রদর্শনী করছি আমরা। এর মধ্যে আম আছে ৩০ জাতের বেশি। কিন্তু এগুলো সবই প্রদর্শনীর জন্য।’

এরই ঠিক বাঁ পাশে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ করপোরেশনের (বিএডিসি) স্টলে গেলে বিচিত্র সব ফলের সন্ধান পাওয়া যাবে। বিদেশি চেরি, আঙুর থেকে শুরু করে দেশি প্রায় অপরিচিত সরফিগুলা, গোলাফল-কী নেই সেখানে। আর হ্যাঁ, এগুলোও প্রদর্শনীর জন্য।

কেন শুধু প্রদর্শনী? বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিন জাহানারা বলছিলেন, ‘আমরা নানা ধরনের ফলের উন্নততর জাত উদ্ভাবন করি। মানুষকে সেসবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আগ্রহী ব্যক্তিরা এসব ফলের চারা সংগ্রহ করতে পারেন। বাণিজ্যিক চাষাবাদে পরামর্শ দিই। মেলায় এমন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা তৈরি হয়।’

এ মেলায় তৈরি হওয়া যোগাযোগটা আসলে কাজে দেয়, তার প্রমাণ দিলেন নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা। রপ্তানি উপযোগী ৪০ কেজির মতো আম্রপালি আর ল্যাড়া এনেছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে তাঁর আর সামান্যই অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আম রপ্তানিকারক একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা সেরে ফেলেছেন, জানান সোহেল।

ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক যোগাযোগ শুধু নয়, এই মেলা ফলের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগেরও স্থান। ফলের সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য সেই পুরান ঢাকা থেকে নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী ছেলে আলিফকে নিয়ে এসেছেন তার মা নাজনীন। তিনি বলছিলেন, ‘ওদের তো ভালো বিনোদনের খুব অভাব। কত বিচিত্র ফল এখানে। দেখুক, শিখুক।’

আলিফ কিন্তু এক কেজির বেশি ওজনের কিং অব চাকাপাত দেখে বিস্মিত। বলল, ‘এত বড় আম আগে দেখিনি।’ শুধু দেখতে না, কয়েক পদের বেশ কয়েক কেজি আম কেনার পরিকল্পনা নিয়ে মেলায় এসেছেন রাশেদুল হক। ফি বছর মেলায় আসেন। টাঙ্গাইলের এই বাসিন্দার কথা, ‘এখানে বাজারের চাইতে ভালো মানের আম পাই। আগেও দেখেছি। দাম একটু বেশি। ধরেন কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। কিন্তু মান তো ভালো।’

ফলের গল্পই কিন্তু মেলার শেষ কথা নয়। মেলায় নানা জাতে ফলসহ বিভিন্ন খাবারের বন্দোবস্তও আছে। ফার্ম ফ্রুট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে আম, জাম, আনারস, লিচুসহ নানা ফলের জুস। ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে এক গ্লাস ঠান্ডা অথবা সাধারণ তাপমাত্রার জুস আপনাকে তৃপ্তি দেবে। কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত খাবারের কথা শুরুতে বলেছি। শেষ করি মাশরুম দিয়ে। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের স্টলে বিক্রি হচ্ছে জুস। আর কী আছে? বলুন কী নেই। মাশরুমের কেক, রুটি, স্যান্ডউইচ, রোল, পিঠা, চা, চপ, শিঙাড়া-অনেক কিছু। তবে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে না।

ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ফেরদৌস আহমেদ বলছিলেন, ‘মাশরুম ফল নয়। কিন্তু বলাই যায় আলুর মতো সবজি। এটা দিয়ে সব হয়। আমরা একে জনপ্রিয় করে তুলতে এসব খাবার নমুনা হিসেবে এনেছি।’ শুধু ফল কেনা, দেখার জন্য জন্য বাংলাদেশ কৃষিতে কী বৈচিত্র্য, কী বৈভব এনেছে, তা জানতে এ মেলায় যেতে হবে। মেলা শুরু হচ্ছে সকাল ১০টায়, শেষ রাত ৮টায়। শনিবার (২১ জুন) মেলার শেষ দিন।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বসেছে ৮০টি স্টল

ঢাকার খামারবাড়িতে জাতীয় ফল মেলায় নানা জাতের ফল

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা ব্যাকরণে বাগ্ধারা পড়তে গিয়ে ‘কাঁঠালের আমসত্ত্ব’র সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এর অর্থ হলো, অসম্ভব বস্তু। আমের আঁশমুক্ত ঘন রস জ্বাল দিয়ে থকথকে হলে তাকে শুকিয়ে শক্ত করা হয়। কয়েক স্তরের থকথকে আমের রস শক্ত করে খাওয়ার উপযোগী করা হয়। এটাই আমসত্ত্ব। কাঁঠালের পাতলা রসে এটা সম্ভব হয় না।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের কৃষি উদ্যোক্তা সেলিনা আখতার অবশ্য সেই ‘কাঁঠালসত্ত্ব’ বানিয়ে ছেড়েছেন। সুবার্তা ট্রাস্ট নামের একটি সংগঠনের এই প্রতিনিধি বললেন, আমের চেয়ে কাঁঠালের সত্ত্ব বানানো সত্যিই কষ্টের। রোদে শুকিয়ে একে শক্ত করা যায় না। উন্নত জাতের ড্রায়ার বা শুকানোর যন্ত্র আছে এটি বানানোর।

শুধু কি এই একটি খাবার? কাঁঠালের আচার, পিঠাসহ ২৮ ধরনের খাদ্য তৈরি করেন তাঁরা। কাঁঠালের আমসত্ত্বসহ কয়েকটি খাবার দেখা গেল গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতীয় ফল মেলায়। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের (কেআইবি) চত্বরে ওইদিন শুরু হয়েছে এ মেলা। চলবে শনিবার (২১ জুন) পর্যন্ত।

ফল মেলায় প্রায় ৮০টি স্টল রয়েছে। এসব স্টলে কাঁঠালের নয়, বরং আমের একচ্ছত্র আধিপত্য চোখে পড়ল।

কত রকমের আম যে উঠেছে এই মেলায়। ল্যাংড়া, আম্রপালি, নাগ ফজলি, বারি-৪, হাঁড়িভাঙা, সূর্যপুরি-এসব দেশি জাতের আম তো আছেই। সঙ্গে আছে থাই কাটিমন, পোকড়ি, হানিভিউ, ব্যানানা, মিয়াজাকি, আপেল ম্যাঙ্গো, কিং অব চাকাপাতসহ আরো বহু জাতের আম।

মেলায় জনপ্রিয় দেশি জাত বলতে যা বোঝায় অর্থাৎ ল্যাংড়া, আম্রপালি, নাগ ফজলি, বারি-৪, হাঁড়িভাঙা, সূর্যপুরির মতো আমগুলো কেনার কয়েকটি স্টল আছে। অন্য যেসব আমের কথা বললাম, সেগুলো আছে প্রদর্শনীর জন্য। সেই প্রদর্শনী করছে মূলত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকে প্রথমেই আপনি বিশালকায় যে স্টল পাবেন, সেটিই এই সরকারি প্রতিষ্ঠানের। স্টলে ফল সাজানো থরে থরে। স্টলে থাকা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মোরশেদ আলম বলেন, ‘দেড় শ র বেশি ফলের প্রদর্শনী করছি আমরা। এর মধ্যে আম আছে ৩০ জাতের বেশি। কিন্তু এগুলো সবই প্রদর্শনীর জন্য।’

এরই ঠিক বাঁ পাশে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ করপোরেশনের (বিএডিসি) স্টলে গেলে বিচিত্র সব ফলের সন্ধান পাওয়া যাবে। বিদেশি চেরি, আঙুর থেকে শুরু করে দেশি প্রায় অপরিচিত সরফিগুলা, গোলাফল-কী নেই সেখানে। আর হ্যাঁ, এগুলোও প্রদর্শনীর জন্য।

কেন শুধু প্রদর্শনী? বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিন জাহানারা বলছিলেন, ‘আমরা নানা ধরনের ফলের উন্নততর জাত উদ্ভাবন করি। মানুষকে সেসবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আগ্রহী ব্যক্তিরা এসব ফলের চারা সংগ্রহ করতে পারেন। বাণিজ্যিক চাষাবাদে পরামর্শ দিই। মেলায় এমন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা তৈরি হয়।’

এ মেলায় তৈরি হওয়া যোগাযোগটা আসলে কাজে দেয়, তার প্রমাণ দিলেন নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা। রপ্তানি উপযোগী ৪০ কেজির মতো আম্রপালি আর ল্যাড়া এনেছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে তাঁর আর সামান্যই অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আম রপ্তানিকারক একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা সেরে ফেলেছেন, জানান সোহেল।

ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক যোগাযোগ শুধু নয়, এই মেলা ফলের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগেরও স্থান। ফলের সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য সেই পুরান ঢাকা থেকে নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী ছেলে আলিফকে নিয়ে এসেছেন তার মা নাজনীন। তিনি বলছিলেন, ‘ওদের তো ভালো বিনোদনের খুব অভাব। কত বিচিত্র ফল এখানে। দেখুক, শিখুক।’

আলিফ কিন্তু এক কেজির বেশি ওজনের কিং অব চাকাপাত দেখে বিস্মিত। বলল, ‘এত বড় আম আগে দেখিনি।’ শুধু দেখতে না, কয়েক পদের বেশ কয়েক কেজি আম কেনার পরিকল্পনা নিয়ে মেলায় এসেছেন রাশেদুল হক। ফি বছর মেলায় আসেন। টাঙ্গাইলের এই বাসিন্দার কথা, ‘এখানে বাজারের চাইতে ভালো মানের আম পাই। আগেও দেখেছি। দাম একটু বেশি। ধরেন কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। কিন্তু মান তো ভালো।’

ফলের গল্পই কিন্তু মেলার শেষ কথা নয়। মেলায় নানা জাতে ফলসহ বিভিন্ন খাবারের বন্দোবস্তও আছে। ফার্ম ফ্রুট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে আম, জাম, আনারস, লিচুসহ নানা ফলের জুস। ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে এক গ্লাস ঠান্ডা অথবা সাধারণ তাপমাত্রার জুস আপনাকে তৃপ্তি দেবে। কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত খাবারের কথা শুরুতে বলেছি। শেষ করি মাশরুম দিয়ে। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের স্টলে বিক্রি হচ্ছে জুস। আর কী আছে? বলুন কী নেই। মাশরুমের কেক, রুটি, স্যান্ডউইচ, রোল, পিঠা, চা, চপ, শিঙাড়া-অনেক কিছু। তবে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে না।

ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ফেরদৌস আহমেদ বলছিলেন, ‘মাশরুম ফল নয়। কিন্তু বলাই যায় আলুর মতো সবজি। এটা দিয়ে সব হয়। আমরা একে জনপ্রিয় করে তুলতে এসব খাবার নমুনা হিসেবে এনেছি।’ শুধু ফল কেনা, দেখার জন্য জন্য বাংলাদেশ কৃষিতে কী বৈচিত্র্য, কী বৈভব এনেছে, তা জানতে এ মেলায় যেতে হবে। মেলা শুরু হচ্ছে সকাল ১০টায়, শেষ রাত ৮টায়। শনিবার (২১ জুন) মেলার শেষ দিন।