নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে এখন যারা কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের সবার শরীরেই করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনটির সংক্রমণ পাওয়া পাচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গত ১ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের ৫টি বিভাগে কোভিড রোগীদের শরীর থেকে সংগ্রহ করা ৭৪টি করোনাভাইরাসের নমুনার জেনোম সিকোয়েন্স করে এই তথ্য মিলেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওই রোগীদের ১০০ শতাংশই ওমিক্রণে সংক্রমিত। তাদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ ওমিক্রনের ‘বিএ.২’ উপধারায় এবং বাকি ৪ শতাংশ ‘বিএ ১’ উপধারায় আক্রান্ত। যে ৪ শতাংশের মধ্যে ওমিক্রনের বিএ.১ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, তারা সবাই ঢাকার বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ থেকে নমুনা নিয়ে এই গবেষণা চালানোর কথা জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। এর আগে গত ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ২২০টি নমুনার জেনোম সিকোয়েন্স করে আইইডিসিআর জানিয়েছিল, ৮৭ শতাংশ রোগী ওমিক্রনে এবং বাকি ১৩ শতাংশ গতবছর প্রাধান্য বিস্তার করা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। ওই রোগীদের মধ্যে যারা জানুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধ্বে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের ৯৮ শতাংশই ওমিক্রনে সংক্রমিত ছিলেন।
অনেক বেশি প্রাণঘাতী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখন না থাকায় মহামারী পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হবে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, “যে কোনো পরিবর্তনই ইতিবাচক হবে এমন নয়। ইতিবাচকও হতে পারে, নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে।
“পরিস্থিতি বর্তমানের চেয়ে ভালো হতে পারে, এরচেয়ে ভীতিকরও হতে পারে। দেখতে হবে পরিবর্তন হলে ভাইরাসের সংক্রমণ সক্ষমতা কতটা বাড়ে বা কমে। অথবা সিভিয়ারিটি বাড়ে নাকি কমে। তবে এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে আমরা হয়ত কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারব। এরপরও বলব সতর্কতার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দুজন নারী ক্রিকেটারের শরীরে প্রথম ওমিক্রন ভ্যরিয়েন্ট পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ওই দুজন জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরেছিলেন। পরে তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। অত্যন্ত দ্রুত ছড়ানো ওমিক্রনের দাপটে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে আশঙ্কাজনক হারে। ফেব্রুয়ারিতে তা আবার কমতে শুরু করে।
দেশে বেড়েছে শনাক্তের হার, কমেছে মৃত্যু : গত ২৪ ঘণ্টায় তার আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় করোনাতে নতুন রোগী ও শনাক্তের হার বেড়েছে। তবে কমেছে মৃত্যু।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (৫ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ৬ মার্চ সকাল ৮টা) করোনাতে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫২৯ জন আর মারা গেছেন আটজন।
গত শনিবার (৫ মার্চ) ৩৬৮ জন নতুন রোগী আর ১৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদফতর। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে রোগী শনাক্তের হার দুই দশমিক ৬৩ শতাংশ, গতকাল যা ছিল দুই দশমিক ১১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, নতুন শনাক্ত হওয়া ৫২৯ জনকে নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনাতে মোট শনাক্ত হলেন ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৬৬ জন আর মারা যাওয়া আটজনকে নিয়ে দেশে সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেলেন ২৯ হাজার ৮৫ জন।
করোনাতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন হাজার ৩৪০ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে উঠলেন ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ২০ হাজার ৬২টি আর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২০ হাজার ১৩২টি।
দেশে এখন পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ৩৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ৯০ লাখ ১৭ হাজার ২০৮টি আর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৫ লাখ ৯ হাজার ৭৩৩টি। দেশে এখন পর্যন্ত করোনাতে রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৪৯ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া আটজনের মধ্যে পুরুষ ছয়জন আর নারী দুইজন। তাদের নিয়ে দেশে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মোট পুরুষ মারা গেলেন ১৮ হাজার ৫৬৬ জন আর নারী মারা গেলেন ১০ হাজার ৫১৯ জন। বয়স বিবেচনায় তাদের মধ্যে ৬১ থেকে ৭০ বছরের আছেন তিনজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের আছেন দুইজন আর ৩১ থেকে ৬০ বছরের আছেন তিনজন। মারা যাওয়া আটজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন চারজন। বাকি চারজনের মধ্যে চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে মারা গেছেন দুইজন করে। অধিদফতর জানাচ্ছে, মারা যাওয়া আটজনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সাতজন আর বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন একজন।
বিশ্বে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৫৬৩৭, শনাক্ত পৌনে ১৪ লাখ : করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৮ জন। এই সময়ে মারা গেছে পাঁচ হাজার ৬৩৭ জন।
গতকাল রোববার সকালে ওয়ার্ল্ডোমিটার থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় এর আগের দিনের তুলনায় শনাক্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ কমেছে। মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ কোটি ৫১ লাখ ২২ হাজার ৯৬১ জন।
২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের তুলনায় মৃত্যু কমেছে দুই হাজারের বেশি। বিশ্বে এখন মোট মৃতের সংখ্যা ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৪৮।
পরিসংখ্যান বলছে, ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে জার্মানিতে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৪৪ হাজার ৪২৭ জন এবং মারা গেছেন ১৫৩ জন। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৫৭ লাখ ২৩ হাজার ৯০৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ইউরোপের এই দেশটিতে। আর মারা গেছে এক লাখ ২৪ হাজার ৬৭০ জন।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে মারা গেছে ৭৫০ জন এবং শনাক্ত হয়েছে ৮৬ হাজার ৭৬৯ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে এক কোটি ৬৮ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৭ জনের।
আক্রান্তের দিকে থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। তবে মৃত্যুর দিক থেকে দেশটির অবস্থান তৃতীয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছে ১৫৫ জন এবং সংক্রমিত হয়েছে পাঁচ হাজার ১৮১ জন।
মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন চার কোটি ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৬৫৮ জন এবং মারা গেছেন পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৬৩ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
ডেল্টা উধাও, সবাই এখন ওমিক্রনে আক্রান্ত
ট্যাগস :
ডেল্টা উধাও
জনপ্রিয় সংবাদ