ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার জীবনাবসান

  • আপডেট সময় : ০১:১১:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া মারা গেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ৪টায় নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন তার বড় মেয়ে ফাহিমা রাব্বী রিটা। ডেপুটি স্পিকার দীর্ঘ নয় মাস দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর সময় হাসপাতালে বড় মেয়ে রিটা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের একান্ত সচিব তৌফিকুল ইসলাম। ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরও শোক জানিয়েছেন।
পেশায় আইনজীবী ফজলে রাব্বী মিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাটিয়া গ্রামে। জাতীয় পার্টির হয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ফজলে রাব্বী পরে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে এই দলেই ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদে যান। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন। নবম সংসদে ফজলে রাব্বী সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, কার্য উপদেষ্টা কমিটি, কার্য প্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে বসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এসময় তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটি ও পিটিশন কমিটির সদস্য এবং লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন। নবম সংসদে সাবেক স্পিকার বিএনপির জমিরউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য সর্বদলীয় তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ফজলে রাব্বী। অষ্টম সংসদের সময়কালে বৈদ্যুতিক বাতি কেনা, লিফট ব্যবস্থাপনা, বাগানের ঘাস কাটা ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ওই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়।
ফজলে রাব্বী মিয়া তিন মেয়ে রেখে গেছেন। ২০২০ সালে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মারা যান। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে তার বিরোধিতার আন্দোলনে নেমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। পরে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা হিসেবে অংশ নেন প্রয়াত ফজলে রাব্বী মিয়া।
সংসদীয় গণতন্ত্রে ফজলে রাব্বীর অবদান জাতি স্মরণ করবে: রাষ্ট্রপতি : জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “সংসদ পরিচালনায় মরহুম ফজলে রাব্বী মিয়ার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।” ফজলে রাব্বী আত্মার মাগফিরাত কামনা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তার মৃত্যুতে পৃথক শোকবার্তায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার এক শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছাত্রজীবন থেকেই ফজলে রাব্বী মিয়া আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬২’র শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

১১২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর দাবি মুম্বাই পুলিশের

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার জীবনাবসান

আপডেট সময় : ০১:১১:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া মারা গেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ৪টায় নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন তার বড় মেয়ে ফাহিমা রাব্বী রিটা। ডেপুটি স্পিকার দীর্ঘ নয় মাস দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর সময় হাসপাতালে বড় মেয়ে রিটা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের একান্ত সচিব তৌফিকুল ইসলাম। ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরও শোক জানিয়েছেন।
পেশায় আইনজীবী ফজলে রাব্বী মিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাটিয়া গ্রামে। জাতীয় পার্টির হয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ফজলে রাব্বী পরে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে এই দলেই ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদে যান। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন। নবম সংসদে ফজলে রাব্বী সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, কার্য উপদেষ্টা কমিটি, কার্য প্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে বসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এসময় তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটি ও পিটিশন কমিটির সদস্য এবং লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন। নবম সংসদে সাবেক স্পিকার বিএনপির জমিরউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য সর্বদলীয় তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ফজলে রাব্বী। অষ্টম সংসদের সময়কালে বৈদ্যুতিক বাতি কেনা, লিফট ব্যবস্থাপনা, বাগানের ঘাস কাটা ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ওই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়।
ফজলে রাব্বী মিয়া তিন মেয়ে রেখে গেছেন। ২০২০ সালে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মারা যান। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে তার বিরোধিতার আন্দোলনে নেমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। পরে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা হিসেবে অংশ নেন প্রয়াত ফজলে রাব্বী মিয়া।
সংসদীয় গণতন্ত্রে ফজলে রাব্বীর অবদান জাতি স্মরণ করবে: রাষ্ট্রপতি : জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “সংসদ পরিচালনায় মরহুম ফজলে রাব্বী মিয়ার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।” ফজলে রাব্বী আত্মার মাগফিরাত কামনা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তার মৃত্যুতে পৃথক শোকবার্তায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার এক শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছাত্রজীবন থেকেই ফজলে রাব্বী মিয়া আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬২’র শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”