কুমিল্লা সংবাদদাতা: অন্তর্বর্তী সরকারের ডেডলাইনের মধ্যে সব সংস্কার এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিচার দৃশ্যমান করে নির্বাচন হতে হবে। আর সেই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকতের বাংলাদেশ চাই। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরের একটি ডেডলাইন দিয়েছে। এর মধ্যেই সব সংস্কার করে, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করে নির্বাচন দেন। আমরা সেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। নির্বাচন নিয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অনেকে ভুল বোঝার চেষ্টা করে, কিন্তু জামায়াতের আমির গতকালও আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।’
কুমিল্লার লাকসাম সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) কর্মিসম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াত আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। বক্তব্যের শেষে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন। এর মধ্যে কুমিল্লা-৮ আসনে শফিকুল আলম (হেলাল), কুমিল্লা-৯ আসনে এ কে এম সৈয়দ সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, কুমিল্লা-১০ আসনে ইয়াছিন আরাফাত এবং কুমিল্লা-১১ আসনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের জুন এবং ২৫-এর ডিসেম্বর দুটি ডেটলাইন দিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, যে ডেডলাইন দিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে ১৪, ১৮ ও ২৪-এর মতো নির্বাচন হলে এ দেশের মানুষ আর কখনোই এমন নির্বাচন হতে দেবে না। নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য পুলিশে সংস্কার, সংবিধানের সংস্কার, প্রশাসনের সংস্কারসহ সব সংস্কার ন্যূনতমভাবে শেষ করতে হবে। হাসিনা ও তাঁর সহযোগীরা যাঁরা দেশকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের বিচার হতে হবে। বিচার দৃশ্যমান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে এবং আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ হবে পূর্ণ স্বাধীন, জনগণের অধিকার থাকবে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, ইনসাফপূর্ণ অর্থনীতি হবে, এ দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হবে না। গত ১৬ বছর আমাদের ভোটাধিকার ছিল না, গণতন্ত্র ছিল না, আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। ১৭ বছর একটি কালো অধ্যায় পার করেছি আমরা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জণগণকে তাঁদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।’
সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুর রব, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমির মু. শাহজাহান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি এ কে এম সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি আবদুল মমিন, মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, লাকসাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির জহিরুল ইসলাম, কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১–এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মুহাম্মদ বদিউল আলম (সুজন)।
লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর আমির মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু.শহিদ উল্যাহ ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু. জোবায়ের ফয়সাল।