ঢাকা ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

ডেঙ্গু থেকে শিশুর সুরক্ষা: পরিবারই প্রথম প্রতিরক্ষা

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

 

মোঃ শামীম মিয়া

বাংলাদেশে প্রতি বছর ডেঙ্গু জ্বর যেন এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বর্ষাকাল এলেই মশাবাহিত এ রোগটি ভয়াবহ রূপ নেয়। ২০২৫ সালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিদিন গণমাধ্যমে শিশুদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিংবা মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগেÑ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমরা কতা প্রস্তুত? বিশেষ করে আমাদের পরিবারের ভূমিকা কতা সচেতন ও কার্যকর?

একজন শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে তার পরিবার। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিচ্ছি? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিবারে মশা নিধনের কার্যকর ব্যবস্থা নেই, জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজননস্থল গড়ে ওঠে, শিশুদের রাতে মশারি ব্যবহার করানো হয় না বা দিনে খেলাধুলার সময় মশা প্রতিরোধী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৭০ ভাগ এডিস মশা জন্ম নেয় বাসা বা তার আশপাশের পরিবেশে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সচেতনতা সবচেয়ে বড় শক্তি। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের কাজ করলেও, যদি পরিবার নিজে দায়িত্বশীল না হয়, তাহলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। স্কুলগামী শিশুদের জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধী পোশাক, মশা প্রতিরোধী লোশন ব্যবহার, স্কুলব্যাগ ও জামাকাপড় নিয়মিত পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। খেলাধুলার সময় বা বাড়ির বাইরে অবস্থানের সময় শিশুদের সুরক্ষায় মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা থাকা উচিত।

পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকেই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। শিশুদের সঙ্গে বসে ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা করা, তাদের ভয় না দেখিয়ে সচেতন করা, বাসার প্রতিটি কোণ পরিষ্কার রাখা, পানির পাত্র উল্টে রাখা বা ঢেকে রাখা, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করাÑএসবই হতে পারে শিশুকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষার প্রথমধাপ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোÑঅবহেলা নয়, আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১৬ হাজার ৭৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৬২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

ডেঙ্গু সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায়, জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, যা মে মাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। মৃত্যুর সংখ্যা জুন মাসে ১৯ জন ছিল; যা পূর্ববর্তী মাসগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। জুলাই মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা পরিস্থিতির আরও অবনতির ইঙ্গিত দেয়।

এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়- এখনই যদি সচেতন না হই, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। সরকারিভাবে যতই পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন, পরিবার যদি প্রথম স্তরে প্রতিরোধ গড়ে না তোলে, তাহলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ অসম্ভব। তাই এখনই সময়Ñ পরিবারকেই হতে হবে সচেতনতার অগ্রদূত। কারণ শিশুদের জীবন রক্ষার দায়িত্ব সর্বাগ্রে পরিবারের। আর সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই সম্ভব ডেঙ্গুমুক্ত একটি সমাজ গড়া।

লেখক:‎ শিক্ষার্থী, ‎ফুলছড়ি সরকারি কলেজ, জুমারবাড়ী, সাঘাটা, গাইবান্ধা
[email protected]

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডেঙ্গু থেকে শিশুর সুরক্ষা: পরিবারই প্রথম প্রতিরক্ষা

আপডেট সময় : ০৯:৩৯:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

 

মোঃ শামীম মিয়া

বাংলাদেশে প্রতি বছর ডেঙ্গু জ্বর যেন এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বর্ষাকাল এলেই মশাবাহিত এ রোগটি ভয়াবহ রূপ নেয়। ২০২৫ সালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিদিন গণমাধ্যমে শিশুদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিংবা মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগেÑ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমরা কতা প্রস্তুত? বিশেষ করে আমাদের পরিবারের ভূমিকা কতা সচেতন ও কার্যকর?

একজন শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে তার পরিবার। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিচ্ছি? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিবারে মশা নিধনের কার্যকর ব্যবস্থা নেই, জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজননস্থল গড়ে ওঠে, শিশুদের রাতে মশারি ব্যবহার করানো হয় না বা দিনে খেলাধুলার সময় মশা প্রতিরোধী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৭০ ভাগ এডিস মশা জন্ম নেয় বাসা বা তার আশপাশের পরিবেশে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সচেতনতা সবচেয়ে বড় শক্তি। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের কাজ করলেও, যদি পরিবার নিজে দায়িত্বশীল না হয়, তাহলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। স্কুলগামী শিশুদের জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধী পোশাক, মশা প্রতিরোধী লোশন ব্যবহার, স্কুলব্যাগ ও জামাকাপড় নিয়মিত পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। খেলাধুলার সময় বা বাড়ির বাইরে অবস্থানের সময় শিশুদের সুরক্ষায় মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা থাকা উচিত।

পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকেই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। শিশুদের সঙ্গে বসে ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা করা, তাদের ভয় না দেখিয়ে সচেতন করা, বাসার প্রতিটি কোণ পরিষ্কার রাখা, পানির পাত্র উল্টে রাখা বা ঢেকে রাখা, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করাÑএসবই হতে পারে শিশুকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষার প্রথমধাপ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোÑঅবহেলা নয়, আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১৬ হাজার ৭৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৬২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

ডেঙ্গু সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায়, জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, যা মে মাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। মৃত্যুর সংখ্যা জুন মাসে ১৯ জন ছিল; যা পূর্ববর্তী মাসগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। জুলাই মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা পরিস্থিতির আরও অবনতির ইঙ্গিত দেয়।

এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়- এখনই যদি সচেতন না হই, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। সরকারিভাবে যতই পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন, পরিবার যদি প্রথম স্তরে প্রতিরোধ গড়ে না তোলে, তাহলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ অসম্ভব। তাই এখনই সময়Ñ পরিবারকেই হতে হবে সচেতনতার অগ্রদূত। কারণ শিশুদের জীবন রক্ষার দায়িত্ব সর্বাগ্রে পরিবারের। আর সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই সম্ভব ডেঙ্গুমুক্ত একটি সমাজ গড়া।

লেখক:‎ শিক্ষার্থী, ‎ফুলছড়ি সরকারি কলেজ, জুমারবাড়ী, সাঘাটা, গাইবান্ধা
[email protected]

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ