ঢাকা ০২:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

ডেঙ্গু আরও ‘শঙ্কা’ নিয়ে আসছে, সতর্ক করলেন মহামারিবিদরা

  • আপডেট সময় : ০২:৪২:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩
  • ১৫৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে সামনের বছরগুলোতে রোগটি আরও ব্যাপক আকারে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল শনিবার ঢাকার নিপসম মিলনায়তনে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ পেয়েছে। ডেঙ্গু রোগের বাহক এইডিস মশা ঢাকার বাইরে পাওয়া যাচ্ছে, এতে সামনে এই রোগটি আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার চেয়ে বাইরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা কয়েকগুণ।
বৈঠকে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে এইডিস অ্যালবোপিকটাস মশা। শহরে ডেঙ্গু ছড়ানো এডিস ইজিপ্টি মশা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে অ্যালবোপিকটাস নিয়ে কেউ ভাবছে না। “অথচ ধান গাছ, কলাগাছের পাতা, গাছের কোটর এমনকি কচু গাছের পাতায়ও এইডিস অ্যালবোপিকটাসের লার্ভা হয়।”
বাংলাদেশে এখন সারা বছরই দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুতেও রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি শুক্রবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ লাখ ৬ হাজার ৪৩৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ৬ হাজার ৬৭৮ জন এবং ঢাকার বাইরের প্রায় দ্বিগুণ ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৯ রোগী ভর্তি হয়েছে। আর এ বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৮৩। এর আগে কখনই এত রোগী বা মৃত্যু-কোনোটাই দেখেনি বাংলাদেশ। রোগতত্ত্ববিদ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “সংখ্যা (আক্রান্ত ও মৃত্যু) কিন্তু অনেক কিছু বলে না। আগে মশা এবং আক্রান্ত রোগী শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যাও কম ছিল, এখন সারা বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষই সন্দেহজনক।
“সুতরাং যদি তখন ১ শতাংশ হয়ে থাকে, আর এখন যদি ১ শতাংশ হয়- সেটার ফলাফল কী দাঁড়াতে পারে, সেটা আমরা কল্পনা করতে পারি?”
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক এ পরিচালক বলেন, “বেইজলাইনে যে সংখ্যাটা আসবে, সেটাও কিন্তু অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমি কথাটা আবার জোর দিয়ে বলতে চাই, আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং সতর্কবাণী হিসেবে রোগতত্ত্বের মানুষ হিসেবে এই ফোরাম বলতে চায় এটা (ডেঙ্গুর প্রকোপ) বড় আকারে আসার আশঙ্কা রয়েছে- যদি না আমরা এখনই শক্তিশালী, সমন্বিত পদক্ষেপ নিই।”
করোনাভাইরাস মহামারির সময় করা জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়েছে। এখন কোভিড আক্রান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে আগে সারা বছরে ডেঙ্গুতে পাঁচশ রোগী হত না, এখন সেখানে প্রতিদিনই পাঁচশর বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কোনো পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়নি। সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মহামারিবিদদের সংগঠন সরকারকে যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তা করতে তৈরি। “ডেঙ্গুর জন্য আমরা একটা পরামর্শক কমিটি দেখি নাই, আমি জানি না সেইখানে আমরা অবদান রাখতে পারতাম কি না। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি- এপিওডেমিলজি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি, জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক তথ্য, তত্ত্ব, বিশ্লেষণ-যেকোনো ধরনের তথ্য দিতে আমরা তৈরি আছি।”
আইসিডিডিআরবি’র গবেষক ডা. শফিউল আলম বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে এই রোগের জীবানুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। “মশা নিধনে লার্ভিসাইডিং ভালো কাজে আসবে। তবে দীর্ঘদিন একই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মশা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে ফেলে। ফলে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিটিআই ভালো সমাধান।” বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক ডা. এ এস এম আলমগীর, এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।
আরও ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৫৯: সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৯৫ জনে। এসময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫৯ জন ডেঙ্গুরোগী। অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন তিন হাজার ৯২৪ জন ডেঙ্গুরোগী।
গতকাল শনিবার (২৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৭৫৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৮৪ এবং ঢাকার বাইরের ৫৭৫ জন। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩ জন, ঢাকার বাইরের ৯ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট তিন লাখ ৭ হাজার ১৯৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ লাখ ৬ হাজার ৮৬২ জন, আর ঢাকার বাইরের ২ লাখ ৩৩৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৭১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৮৫ জন এবং ঢাকার বাইরের এক হাজার ৪৮৬ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন তিন লাখ ১ হাজার ৬৭৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক লাখ ৪ হাজার ৮৯১ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৮৬ জন। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে ২৮১ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন, ২০২০ সালে সাতজন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ডেঙ্গু আরও ‘শঙ্কা’ নিয়ে আসছে, সতর্ক করলেন মহামারিবিদরা

আপডেট সময় : ০২:৪২:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে সামনের বছরগুলোতে রোগটি আরও ব্যাপক আকারে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল শনিবার ঢাকার নিপসম মিলনায়তনে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ পেয়েছে। ডেঙ্গু রোগের বাহক এইডিস মশা ঢাকার বাইরে পাওয়া যাচ্ছে, এতে সামনে এই রোগটি আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার চেয়ে বাইরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা কয়েকগুণ।
বৈঠকে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে এইডিস অ্যালবোপিকটাস মশা। শহরে ডেঙ্গু ছড়ানো এডিস ইজিপ্টি মশা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে অ্যালবোপিকটাস নিয়ে কেউ ভাবছে না। “অথচ ধান গাছ, কলাগাছের পাতা, গাছের কোটর এমনকি কচু গাছের পাতায়ও এইডিস অ্যালবোপিকটাসের লার্ভা হয়।”
বাংলাদেশে এখন সারা বছরই দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুতেও রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি শুক্রবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ লাখ ৬ হাজার ৪৩৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ৬ হাজার ৬৭৮ জন এবং ঢাকার বাইরের প্রায় দ্বিগুণ ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৯ রোগী ভর্তি হয়েছে। আর এ বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৮৩। এর আগে কখনই এত রোগী বা মৃত্যু-কোনোটাই দেখেনি বাংলাদেশ। রোগতত্ত্ববিদ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “সংখ্যা (আক্রান্ত ও মৃত্যু) কিন্তু অনেক কিছু বলে না। আগে মশা এবং আক্রান্ত রোগী শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যাও কম ছিল, এখন সারা বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষই সন্দেহজনক।
“সুতরাং যদি তখন ১ শতাংশ হয়ে থাকে, আর এখন যদি ১ শতাংশ হয়- সেটার ফলাফল কী দাঁড়াতে পারে, সেটা আমরা কল্পনা করতে পারি?”
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক এ পরিচালক বলেন, “বেইজলাইনে যে সংখ্যাটা আসবে, সেটাও কিন্তু অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমি কথাটা আবার জোর দিয়ে বলতে চাই, আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং সতর্কবাণী হিসেবে রোগতত্ত্বের মানুষ হিসেবে এই ফোরাম বলতে চায় এটা (ডেঙ্গুর প্রকোপ) বড় আকারে আসার আশঙ্কা রয়েছে- যদি না আমরা এখনই শক্তিশালী, সমন্বিত পদক্ষেপ নিই।”
করোনাভাইরাস মহামারির সময় করা জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়েছে। এখন কোভিড আক্রান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে আগে সারা বছরে ডেঙ্গুতে পাঁচশ রোগী হত না, এখন সেখানে প্রতিদিনই পাঁচশর বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কোনো পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়নি। সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মহামারিবিদদের সংগঠন সরকারকে যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তা করতে তৈরি। “ডেঙ্গুর জন্য আমরা একটা পরামর্শক কমিটি দেখি নাই, আমি জানি না সেইখানে আমরা অবদান রাখতে পারতাম কি না। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি- এপিওডেমিলজি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি, জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক তথ্য, তত্ত্ব, বিশ্লেষণ-যেকোনো ধরনের তথ্য দিতে আমরা তৈরি আছি।”
আইসিডিডিআরবি’র গবেষক ডা. শফিউল আলম বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে এই রোগের জীবানুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। “মশা নিধনে লার্ভিসাইডিং ভালো কাজে আসবে। তবে দীর্ঘদিন একই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মশা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে ফেলে। ফলে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিটিআই ভালো সমাধান।” বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক ডা. এ এস এম আলমগীর, এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।
আরও ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৫৯: সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৯৫ জনে। এসময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫৯ জন ডেঙ্গুরোগী। অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন তিন হাজার ৯২৪ জন ডেঙ্গুরোগী।
গতকাল শনিবার (২৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৭৫৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৮৪ এবং ঢাকার বাইরের ৫৭৫ জন। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩ জন, ঢাকার বাইরের ৯ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট তিন লাখ ৭ হাজার ১৯৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ লাখ ৬ হাজার ৮৬২ জন, আর ঢাকার বাইরের ২ লাখ ৩৩৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৭১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৮৫ জন এবং ঢাকার বাইরের এক হাজার ৪৮৬ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন তিন লাখ ১ হাজার ৬৭৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক লাখ ৪ হাজার ৮৯১ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৮৬ জন। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে ২৮১ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন, ২০২০ সালে সাতজন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়।