অর্থনৈতিক ডেস্ক: আধুনিক নগরজীবনে স্বাস্থ্যবিমা এখন মানুষের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। কেননা এই অনিশ্চিত জীবনে যে কোনো একটি রোগে জীবন তছনছ হয়ে যেতে পারে বা আকস্মিক মৃত্যু পরিবারের জন্য বড় ট্র্যাজেডি হয়ে উঠতে পারে। এই বাস্তবতায় বিমা বা স্বাস্থ্যবিমা অতি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা।
বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। এই সঙ্গে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। ডেঙ্গু মূলত নাগরিক রোগ। তবে এই রোগ এখন আর ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে সীমাবদ্ধ নেই। দেশে যত নগরায়ণ হচ্ছে, ততই এই রোগ দেশময় ছড়িয়ে পড়ছে। এর সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির হারও কম নয়। হাসপাতালে ভর্তি হলেই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে যায়। পরিবারে এক বা একাধিক সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে আকস্মিকভাবে আর্থিক সংকটের মুখে পড়ারও শঙ্কা থাকে। বিশেষ করে নিম্ন ও সীমিত আয়ের পরিবারের বেলায় এ কথা আরও বেশি করে খাটে।
জেনে রাখা ভালো, দেশের বিভিন্ন জীবনবিমা কোম্পানির বিমা পলিসিতে ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যুর বিমা আছে। অর্থাৎ ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলে চুক্তি অনুযায়ী পলিসি হোল্ডারের মনোনীত ব্যক্তি বিমার টাকা পাবেন। একই সঙ্গে কেউ যদি অসুস্থতা বা ডেঙ্গুতে হাসপাতালের খরচ তার বিমা থেকে পেতে চান, তাহলে মূল বিমার সঙ্গে রাইডার বা সহযোগী বিমা নিতে পারেন। এতে খুব অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে হাসপাতালে ভর্তি বা অপারেশনের খরচের টাকা বিমা থেকে পাওয়া যাবে।
এদিকে শুধু ডেঙ্গু নয়, বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য স্বাস্থ্যবিমা নেওয়া যায়। বিমার আওতায় আছ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনির রোগের মতো গুরুতর প্রাণঘাতী রোগ, তেমনি রয়েছে পক্ষাঘাত, বাকশক্তি লোপ, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত, অঙ্গপ্রতিস্থাপনের মতো রোগও। একই সঙ্গে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও আছে স্বাস্থ্যবিমা। ফলে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৭২ শতাংশ ব্যক্তিকেই বহন করতে হয়, সেখানে স্বাস্থ্যবিমার বিশেষ উপকারী ভূমিকা আছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে সমাজে তেমন সচেতনতা নেই।
স্বাস্থ্যবিমায় দুই ধরনের সুবিধা: বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিমার দুই ধরনের সুবিধা আছে। কোম্পানির সঙ্গে যেসব হাসপাতালের চুক্তি আছে, সেসব হাসপাতালে সরাসরি বিল পরিশোধ করা হয়। এ ছাড়া চিকিৎসার পর বিল জমা দেওয়ার পর খরচ পুনর্ভরণ। অবশ্যই যে অঙ্কের বিমা নেওয়া হয় এবং পলিসিতে যেসব শর্ত থাকে, তার মধ্যেই এই সুবিধা পাওয়া যায়। কোম্পানিগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে এসব স্বাস্থ্যবিমা পলিসি বাজারে এনেছে।
হাসপাতাল খরচ পুনর্ভরণ পলিসির ক্ষেত্রে গ্রাহক বিমা অঙ্কের সমপরিমাণ অর্থ চিকিৎসা খরচ বাবদ ফেরত পান। এই বিমা পলিসিতে বছরে একবার প্রিমিয়াম দিতে হয়। সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য এই বিমা পলিসি গ্রহণ করে থাকে। চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি জীবনবিমা সুবিধাও দেওয়া হয় এই বিমা পলিসিতে।
স্বাস্থ্যবিমা থাকলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব আর্থিক সুরক্ষা পাওয়া যায়; এর মধ্যে আছে চিকিৎসকের ভিজিট, রোগনির্ণয় পরীক্ষার খরচ, আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ খরচ, হাসপাতালে ভর্তি ফি, হাসপাতালের বেড ভাড়া, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া, অপারেশন কক্ষের ফি, সার্জন ফি, ওষুধের খরচ, ড্রেসিং ফি ইত্যাদি।
কীভাবে করা যাবে: বিমা করতে চাইলে সরাসরি বিমা কোম্পানির কার্যালয়ে চলে যাওয়া ভালো। এ ছাড়া বিমা প্রতিনিধির মাধ্যমেও বিমা করা যায়। মনে রাখতে হবে, যে কোনো ধরনের লেনদেন অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে করা উচিত। এ ছাড়া এখন অনেক কোম্পানি ই-প্রিমিয়ামের সুবিধা দিচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের এখন আর অফিসে গিয়ে বা বিমা প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রয়োজন নেই; বরং ঘরে বসে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ও বিকাশের মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিমার মেয়াদ, অঙ্ক ও বিমাগ্রহীতার বয়সসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়ে প্রিমিয়াম হিসাবও করা হয় ওয়েবসাইটে। বিভিন্ন কোম্পানি এই সেবা দিচ্ছে।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ