ঢাকা ০৮:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে ঢাকার নিরাপত্তাকর্মীরা

  • আপডেট সময় : ১২:০২:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২
  • ৭৪ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : রাজধানীতে অনেকটা মহামারি আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গুজ্বর। হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতেও শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর চিকিৎসা। এ অবস্থায় জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন রাত জেগে দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তাকর্মীরা। আবাসিক এলাকা, ব্যাংকের বুথ, শপিংমল, কোথাও তাদের জন্য নেই সুরক্ষার ব্যবস্থা। এমনকি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন যে নিরাপত্তাকর্মীরা, তাদের জীবন বাঁচাতেও নেই কোনো ব্যবস্থা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সন্ধ্যার মধ্যেই মশা মারার ওষুধ দেওয়া শেষ করে। ফলে রাত যত বাড়ে, ততই বাড়ে মশার উপদ্রব। ফলে নিরাপত্তাকর্মীদের শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ক্ষতিকর মশার কয়েল। যদিও উন্মুক্ত স্থানে জ্বালানো কয়েল কাজে আসে না তেমন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য বাড়তি ব্যবস্থার কথা। তারা তাগিদ দিয়েছেন পুরো শরীর ঢেকে রাখা বিশেষ পোশাক, মশা মারার বৈদ্যুতিক র‌্যাকেট ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাস শেষ হওয়ার আগেই গত বছরকে ছাড়িয়ে গেছে ডেঙ্গুরোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ হাজার ৭১৬ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ১১৮ জনের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নিরাপত্তকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেঙ্গু নিয়ে তাদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথা। তবে রোজগারের তাগিদে ডেঙ্গুর ভয় নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী মো. ফজলুল বারী বলেন, রাত জেগে দায়িত্ব পালন করতে হয়। মশার কামড় খেয়েই বুথের সামনে বসে থাকি। প্রতিদিনই শুনি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এর মধ্যে ডেঙ্গু হচ্ছে অনেকেরই। ডেঙ্গু হলে কিছু করারও নেই। অন্য একটি বুথের নিরাপত্তাকর্মী গোলাম মোস্তফা বলেন, বুথের সামনে বসে থাকতে হয়। সামনে খোলা জায়গা। এখানে কয়েল জ্বালালে কোনো কাজে দেয় না। মশার কামড় খেতেই হয়। আশপাশে ময়লার স্তূপ, প্রচুর মশা। রাত হলেই মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। জীবন নিয়ে প্রতিদিনই আতঙ্কে থাকতে হয়।
এই চিত্র আরও খারাপ আবাসিক এলাকার নিরাপত্তাকর্মীদের ক্ষেত্রে। এটিএম বুথগুলো কিছুটা পরিচ্ছন্ন জায়গায় হলেও আবাসিক এলাকার সবটা পরিচ্ছন্ন নয়। যেখানে ময়লা, জমা পানি বা ঝোপঝাড় আছে, সেখানেও দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে তাদের ঝুঁকি আরও বেশি।
নিরাপত্তাকর্মী তাজমিনুর বলেন, আবাসিক এলাকার সব জায়গায়ই যেতে হয়। ময়লা, পানি, ঝোপঝাড় সব জায়গাতেই নজর রাখতে হয়। এসব এলাকায় মশা বেশি থাকে। ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে থাকি। যখন মশার ওষুধ দেয় তখন মশা কিছুটা কম কামড়ায়। কিছুক্ষণ গেলেই পরিস্থিতি আগের মতো। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ডেঙ্গু হলেও কিছু করার নেই। চাকরি তো করতে হবে। একই কথা বলেন আরেক নিরাপত্তাকর্মী গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার চলে না। বাড়িতে টাকা পাঠালে হাতে আর খাবারের টাকাও মাঝে মধ্যে থাকে না। ডেঙ্গু হলে যে চিকিৎসা করাবো সেই টাকাও কিন্তু নেই। চিকিৎসা করার কোনো ব্যবস্থাও নেই আমাদের। নিরাপত্তাকর্মীদের এ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, নিরাপত্তাকর্মীরা যেহেতু বাইরে থাকেন, তাদের ঝুঁকিটা একটু বেশি। ঝুঁকি কমাতে তারা যেখানে দায়িত্ব পালন করেন তার আশপাশে যেন পানি জমে না থাকে, মশার উৎপত্তি না হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের পোশাকের প্রতিও একটু নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, হাতাওয়ালা বা শরীরের বেশিরভাগ অংশই যেন ঢাকা থাকে এমন পোশাক পরা উচিত। মশা মারার বৈদ্যুতিক র‌্যাকেট হাতে রাখতে পারেন, যেন কোনো মশা দেখলেই তা মেরে ফেলা যায়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপে প্রস্তুত ইরান, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে ঢাকার নিরাপত্তাকর্মীরা

আপডেট সময় : ১২:০২:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২

মহানগর প্রতিবেদন : রাজধানীতে অনেকটা মহামারি আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গুজ্বর। হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতেও শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর চিকিৎসা। এ অবস্থায় জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন রাত জেগে দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তাকর্মীরা। আবাসিক এলাকা, ব্যাংকের বুথ, শপিংমল, কোথাও তাদের জন্য নেই সুরক্ষার ব্যবস্থা। এমনকি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন যে নিরাপত্তাকর্মীরা, তাদের জীবন বাঁচাতেও নেই কোনো ব্যবস্থা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সন্ধ্যার মধ্যেই মশা মারার ওষুধ দেওয়া শেষ করে। ফলে রাত যত বাড়ে, ততই বাড়ে মশার উপদ্রব। ফলে নিরাপত্তাকর্মীদের শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ক্ষতিকর মশার কয়েল। যদিও উন্মুক্ত স্থানে জ্বালানো কয়েল কাজে আসে না তেমন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য বাড়তি ব্যবস্থার কথা। তারা তাগিদ দিয়েছেন পুরো শরীর ঢেকে রাখা বিশেষ পোশাক, মশা মারার বৈদ্যুতিক র‌্যাকেট ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাস শেষ হওয়ার আগেই গত বছরকে ছাড়িয়ে গেছে ডেঙ্গুরোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ হাজার ৭১৬ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ১১৮ জনের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নিরাপত্তকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেঙ্গু নিয়ে তাদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথা। তবে রোজগারের তাগিদে ডেঙ্গুর ভয় নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী মো. ফজলুল বারী বলেন, রাত জেগে দায়িত্ব পালন করতে হয়। মশার কামড় খেয়েই বুথের সামনে বসে থাকি। প্রতিদিনই শুনি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এর মধ্যে ডেঙ্গু হচ্ছে অনেকেরই। ডেঙ্গু হলে কিছু করারও নেই। অন্য একটি বুথের নিরাপত্তাকর্মী গোলাম মোস্তফা বলেন, বুথের সামনে বসে থাকতে হয়। সামনে খোলা জায়গা। এখানে কয়েল জ্বালালে কোনো কাজে দেয় না। মশার কামড় খেতেই হয়। আশপাশে ময়লার স্তূপ, প্রচুর মশা। রাত হলেই মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। জীবন নিয়ে প্রতিদিনই আতঙ্কে থাকতে হয়।
এই চিত্র আরও খারাপ আবাসিক এলাকার নিরাপত্তাকর্মীদের ক্ষেত্রে। এটিএম বুথগুলো কিছুটা পরিচ্ছন্ন জায়গায় হলেও আবাসিক এলাকার সবটা পরিচ্ছন্ন নয়। যেখানে ময়লা, জমা পানি বা ঝোপঝাড় আছে, সেখানেও দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে তাদের ঝুঁকি আরও বেশি।
নিরাপত্তাকর্মী তাজমিনুর বলেন, আবাসিক এলাকার সব জায়গায়ই যেতে হয়। ময়লা, পানি, ঝোপঝাড় সব জায়গাতেই নজর রাখতে হয়। এসব এলাকায় মশা বেশি থাকে। ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে থাকি। যখন মশার ওষুধ দেয় তখন মশা কিছুটা কম কামড়ায়। কিছুক্ষণ গেলেই পরিস্থিতি আগের মতো। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ডেঙ্গু হলেও কিছু করার নেই। চাকরি তো করতে হবে। একই কথা বলেন আরেক নিরাপত্তাকর্মী গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে পরিবার চলে না। বাড়িতে টাকা পাঠালে হাতে আর খাবারের টাকাও মাঝে মধ্যে থাকে না। ডেঙ্গু হলে যে চিকিৎসা করাবো সেই টাকাও কিন্তু নেই। চিকিৎসা করার কোনো ব্যবস্থাও নেই আমাদের। নিরাপত্তাকর্মীদের এ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, নিরাপত্তাকর্মীরা যেহেতু বাইরে থাকেন, তাদের ঝুঁকিটা একটু বেশি। ঝুঁকি কমাতে তারা যেখানে দায়িত্ব পালন করেন তার আশপাশে যেন পানি জমে না থাকে, মশার উৎপত্তি না হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের পোশাকের প্রতিও একটু নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, হাতাওয়ালা বা শরীরের বেশিরভাগ অংশই যেন ঢাকা থাকে এমন পোশাক পরা উচিত। মশা মারার বৈদ্যুতিক র‌্যাকেট হাতে রাখতে পারেন, যেন কোনো মশা দেখলেই তা মেরে ফেলা যায়।