ঢাকা ১০:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

ডেঙ্গুতে ১০ মৃত্যু, সরকারি খাতায় শূন্য!

  • আপডেট সময় : ১০:১৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ অগাস্ট ২০২১
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৯০১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জুন মাস পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মাত্র ৩৭২ জন। হঠাৎ করে জুলাই মাসে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে থাকে। জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ জনে। অর্থাৎ বছরের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত যে সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তার তুলনায় ছয় গুণেরও বেশি রোগী কেবল জুলাই মাসেই ভর্তি হন।
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম পাঁচ দিনেই দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক হাজার ২৪৩ জন অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন দুই শতাধিকের বেশি রোগী ভর্তি হন। বর্তমানে সারাদেশের হাসপাতালে এক হাজার ৫৫ জন ভর্তি রোগীর মধ্যে রাজধানীর সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক হাজার ১২ জন রয়েছেন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩ জন। সে হিসাবে প্রায় ৯৬ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী রাজধানীর বাসিন্দা।
এদিকে, কেবল ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তা নয়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় আটজন ও ঢাকার বাইরে দুইজন রয়েছেন। ঢাকার আট জনের মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চারজন, ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনজন ও স্কয়ার হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের অধিকাংশই শিশু। তবে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হলেও তাদের কেউই ডেঙ্গুতে মারা গেছেন বলে সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ডেঙ্গু সন্দেহে যাদের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায় তাদের মৃত্যু প্রকৃতপক্ষেই ডেঙ্গুতেই হয়েছে কি-না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মৃত রোগীর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত (নাম, ঠিকানা, বয়স, কোন হাসপাতালে কতদিন ভর্তি ছিলেন, কী চিকিৎসা পেয়েছেন, অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন না, কবে মারা গেছেন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। এরপর ডেঙ্গু সন্দেহে মৃতদের তথ্য-উপাত্ত বিশেষজ্ঞ ডেঙ্গু পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে আইইডিসিআর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়ার পাঠানো ডেঙ্গু সংক্রান্ত নিয়মিত বুলেটিনেও ডেঙ্গু সন্দেহে ১০টি মৃত্যুর তথ্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু এখনো একটি মৃত্যুরও পর্যালোচনা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কমাতে দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস নিজেরা সরেজমিন দৌঁড়-ঝাপ করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন। ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে কাজ করছে মশক নিবারণ দফতর।
৬ দিনেই ডেঙ্গু রোগী ১৪৫৭ জন : চলতি আগস্ট মাসের ছয় দিনেই এক হাজার ৪৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ২১৪ জন। এদের মধ্যে ২১১ জনই ঢাকার। ঢাকার বাইরের ১ জন। গত জুলাই মাসে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে এক হাজার ১০ জন রোগী ভর্তি আছে। এরমধ্যে ঢাকাতেই আছেন ৯৭২ জন আর বাকি ৩৮ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ১১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৫ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটি এখনও মৃত্যুর পর্যালোচনা শেষ করেনি এবং একটি মৃত্যুও ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বমোট ৩ হাজার ৯০১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৮৩৬ জন রোগী। হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন, মে’তে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন এবং ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ২৪৩ জন রোগী ভর্তি হন।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কমাতে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়েসহ ব্যাপক গণসচেতনতা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতন হয়ে ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থলে যেন পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে ডেঙ্গু মশার প্রজনন বাড়বে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা করেন।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুরোধ নিয়ে ব্যাপক ব্যস্ততার কারণে ডেঙ্গু সন্দেহে মৃতদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে পর্যালোচনা কমিটি এখনো সভা করতে পারেনি। তিনি বলেন, একটি মৃত্যু পর্যালোচনা করতে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের সবাই বসে অনেক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখতে হয়। সর্বোপরি করোনার কারণে সভা হতে দেরি হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এডিস মশার উৎস জানাতে মেয়র তাপসের আহ্বান : ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিরুনি অভিযান চলছে জানিয়ে অনলাইনেও এডিস মশার উৎস এবং রোগীর তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর এবং ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে জানিয়ে শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ঢাকাবাসীর প্রতি তিনি এই আহ্বান জানান।
মেয়র তাপস বলেন, “যে কোনো ব্যক্তি, ঢাকাবাসী যে কোনো এলাকা থেকে অনলাইনে, আমাদের ওয়েবসাইটে সুযোগ রয়েছে, আমাদেরকে তথ্য দিতে পারেন।
“কোথায় এডিস লার্ভা রয়েছে, কোথায় উৎস রয়েছে, কোথায় রোগী রয়েছে? এ বিষয়গুলো পাওয়ার সাথে সাথে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।”
ডেঙ্গু রোগীর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে আমাদের মশক কর্মীরা ঘরে ঘরে যাচ্ছে। এডিস লার্ভার উৎস নিধন করছি এবং চিরুনি অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এক বিবৃতিতে তথ্য দেওয়ার জন্য ওয়েব লিংক (যঃঃঢ়ং://ভড়ৎসং.মষব/মচধসপডয়ঔঘঋঃউতারৎ৬) প্রকাশ করেছেন। সেখানে এডিস মশার উৎস বা লার্ভা ও এইডিস রোগীর তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আবু নাছের জানান, অনলাইনে পাওয়া আবেদনের ভিত্তিতে যে কোনো বাসা-বাড়িতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের উদ্যোগ নেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
এছাড়াও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ ও ০২৯৫৫৬০১৪ নম্বরে ফোন করেও মশার উৎস সম্পর্কে তথ্য দেওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে গত সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করার কথা জানান মেয়র ফজলে নূর তাপস। বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সব হাসপাতালে নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডেঙ্গুতে ১০ মৃত্যু, সরকারি খাতায় শূন্য!

আপডেট সময় : ১০:১৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৯০১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জুন মাস পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মাত্র ৩৭২ জন। হঠাৎ করে জুলাই মাসে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে থাকে। জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ জনে। অর্থাৎ বছরের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত যে সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তার তুলনায় ছয় গুণেরও বেশি রোগী কেবল জুলাই মাসেই ভর্তি হন।
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম পাঁচ দিনেই দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক হাজার ২৪৩ জন অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন দুই শতাধিকের বেশি রোগী ভর্তি হন। বর্তমানে সারাদেশের হাসপাতালে এক হাজার ৫৫ জন ভর্তি রোগীর মধ্যে রাজধানীর সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক হাজার ১২ জন রয়েছেন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩ জন। সে হিসাবে প্রায় ৯৬ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী রাজধানীর বাসিন্দা।
এদিকে, কেবল ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তা নয়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় আটজন ও ঢাকার বাইরে দুইজন রয়েছেন। ঢাকার আট জনের মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চারজন, ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনজন ও স্কয়ার হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের অধিকাংশই শিশু। তবে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হলেও তাদের কেউই ডেঙ্গুতে মারা গেছেন বলে সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ডেঙ্গু সন্দেহে যাদের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায় তাদের মৃত্যু প্রকৃতপক্ষেই ডেঙ্গুতেই হয়েছে কি-না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মৃত রোগীর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত (নাম, ঠিকানা, বয়স, কোন হাসপাতালে কতদিন ভর্তি ছিলেন, কী চিকিৎসা পেয়েছেন, অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন না, কবে মারা গেছেন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। এরপর ডেঙ্গু সন্দেহে মৃতদের তথ্য-উপাত্ত বিশেষজ্ঞ ডেঙ্গু পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে আইইডিসিআর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়ার পাঠানো ডেঙ্গু সংক্রান্ত নিয়মিত বুলেটিনেও ডেঙ্গু সন্দেহে ১০টি মৃত্যুর তথ্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু এখনো একটি মৃত্যুরও পর্যালোচনা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কমাতে দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস নিজেরা সরেজমিন দৌঁড়-ঝাপ করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন। ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে কাজ করছে মশক নিবারণ দফতর।
৬ দিনেই ডেঙ্গু রোগী ১৪৫৭ জন : চলতি আগস্ট মাসের ছয় দিনেই এক হাজার ৪৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ২১৪ জন। এদের মধ্যে ২১১ জনই ঢাকার। ঢাকার বাইরের ১ জন। গত জুলাই মাসে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে এক হাজার ১০ জন রোগী ভর্তি আছে। এরমধ্যে ঢাকাতেই আছেন ৯৭২ জন আর বাকি ৩৮ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ১১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৫ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটি এখনও মৃত্যুর পর্যালোচনা শেষ করেনি এবং একটি মৃত্যুও ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বমোট ৩ হাজার ৯০১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৮৩৬ জন রোগী। হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন, মে’তে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন এবং ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ২৪৩ জন রোগী ভর্তি হন।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কমাতে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়েসহ ব্যাপক গণসচেতনতা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতন হয়ে ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থলে যেন পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে ডেঙ্গু মশার প্রজনন বাড়বে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা করেন।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুরোধ নিয়ে ব্যাপক ব্যস্ততার কারণে ডেঙ্গু সন্দেহে মৃতদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে পর্যালোচনা কমিটি এখনো সভা করতে পারেনি। তিনি বলেন, একটি মৃত্যু পর্যালোচনা করতে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের সবাই বসে অনেক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখতে হয়। সর্বোপরি করোনার কারণে সভা হতে দেরি হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এডিস মশার উৎস জানাতে মেয়র তাপসের আহ্বান : ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিরুনি অভিযান চলছে জানিয়ে অনলাইনেও এডিস মশার উৎস এবং রোগীর তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর এবং ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে জানিয়ে শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ঢাকাবাসীর প্রতি তিনি এই আহ্বান জানান।
মেয়র তাপস বলেন, “যে কোনো ব্যক্তি, ঢাকাবাসী যে কোনো এলাকা থেকে অনলাইনে, আমাদের ওয়েবসাইটে সুযোগ রয়েছে, আমাদেরকে তথ্য দিতে পারেন।
“কোথায় এডিস লার্ভা রয়েছে, কোথায় উৎস রয়েছে, কোথায় রোগী রয়েছে? এ বিষয়গুলো পাওয়ার সাথে সাথে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।”
ডেঙ্গু রোগীর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে আমাদের মশক কর্মীরা ঘরে ঘরে যাচ্ছে। এডিস লার্ভার উৎস নিধন করছি এবং চিরুনি অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এক বিবৃতিতে তথ্য দেওয়ার জন্য ওয়েব লিংক (যঃঃঢ়ং://ভড়ৎসং.মষব/মচধসপডয়ঔঘঋঃউতারৎ৬) প্রকাশ করেছেন। সেখানে এডিস মশার উৎস বা লার্ভা ও এইডিস রোগীর তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আবু নাছের জানান, অনলাইনে পাওয়া আবেদনের ভিত্তিতে যে কোনো বাসা-বাড়িতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের উদ্যোগ নেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
এছাড়াও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ ও ০২৯৫৫৬০১৪ নম্বরে ফোন করেও মশার উৎস সম্পর্কে তথ্য দেওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে গত সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করার কথা জানান মেয়র ফজলে নূর তাপস। বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সব হাসপাতালে নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে।