নিজস্ব প্রতিবেদক : ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০১ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪১৮ জন। যা একদিনে এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সোমবার (২৪ জুলাই) একদিনে দুই হাজার ২৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা গেলেন সহকারী সচিব ও ব্যাংকার: ডেঙ্গুতে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা গেলেন দুই নারী। তাদের একজন সহকারী সচিব আরেকজন ব্যাংকার। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসার মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (ডব্লিউটিও উইং) এস এম নাজিয়া সুলতানা মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা নাজিয়া সুলতানা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই দিন ধরে তিনি বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আজ সকালেই তিনি মারা যান। এস এম নাজিয়া সুলতানার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বাণিজ্যমন্ত্রী আজ এক শোকবার্তায় নাজিয়া সুলতানার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। টিপু মুনশি শোকবার্তায় বলেন, নাজিয়া সুলতানা অত্যন্ত মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘নাজিয়া সুলতানার অকালমৃত্যুতে আমরা একজন সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাকে হারালাম।’ জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ তাঁর শোকবার্তায় বলেন, নাজিয়া সুলতানা ছিলেন একজন দক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তঃসত্ত্বা সহকারী পরিচালকের মৃত্যু: অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক কান্তা বিশ্বাস মৃত্যুবরণ করেছেন। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন । বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেন, আমরা জেনেছি কান্তা বিশ্বাস গত রোববার (২৩ জুলাই) রাতে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আড়াই বছরের কন্যা শিশু রয়েছে তার। ২০১৯ সালে কান্তা বিশ্বাস সহকারী পরিচালক পদে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন। মৃত্যুর আগে পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এদিকে কান্তা বিশ্বাসের অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তার সহপাঠী, সহকর্মীসহ বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ফেসবুক এক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) রাজিয়া রিক্তা লিখেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক কান্তা বিশ্বাস ম্যাডামের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, স্তব্ধ। তিনি মৃত্যুর আগে গর্ভের সন্তানও হারিয়েছেন। মিলন কুমার হালদার নামে অপর এক কর্মকর্তা লিখেছেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেছিল কান্তা বিশ্বাস। মতিঝিলে থাকার সময় দুই-একবার কথাও হয়েছিল। অসম্ভব বিনয়ী মেয়েটি গতকাল ডেঙ্গুতে মারা গেছে। সত্যি, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটাই ভয়াবহ!
এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীর মৃত্যু: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. এখলাসুর রহমান স্বাক্ষরিত এক শোক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। শোক বার্তায় তিনি জানান, রাইসার অকাল মৃত্যুতে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ শোকাহত। মেডিকেলের শেষ বর্ষে এসে তার মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। আমরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। রাইসার স্বামী তানজিম জানান, গত ১৮ জুলাই ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে রাইসার ডেঙ্গু টেস্ট করানো হয়। এতে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে রাইসাকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তাকে প্লাজমা দেওয়া হয়। পরদিন তার প্লাটিলেট ৩ হাজারে নামে। পরে চিকিৎসকরা প্লাজমা না দিয়ে সরাসরি ওষুধ দেন। ২১ জুলাই তার প্লাটিলেট কাউন্টের রেজাল্ট ২১ হাজার আসে। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে না ফেরার দেশে চলে যান রাইসা।
ডেঙ্গুতে একদিনে ১৬ মৃত্যু, ২০০ ছাড়ালো প্রাণহানি
জনপ্রিয় সংবাদ