নিজস্ব প্রতিবেদক : শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৭৩০ জনে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ২৯৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯৪ জন, আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯৯৯ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৮৭১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ২৯৭ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ হাজার ৫৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৭ হাজার ৫৯ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮১ হাজার ২৬৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭২৭। ঢাকায় ৬২ হাজার ২৪১ এবং ঢাকার বাইরে ৭৫ হাজার ৪৮৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
দেশে মশা না কমলে ডেঙ্গু রোগী কমবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী: দেশে মশা না কমলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল রোববার দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের জিরানীবাজার এলাকার বাংলাদেশ ও কোরিয়া সরকারের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত বাংলাদেশ-কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতালের ফায়ার সেফটি ও আই কেয়ার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষ সচেতন না হলে এই রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। দেশের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়নি। সব সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকারের পাশাপাশি মানুষ যদি সচেতন হন তাহলেই ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। সকলকে সচেতন হওয়ার আহŸান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং ছিক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ কেরিয়া মৈত্রী হাসপাতালে চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. সুরজিৎ দত্তসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি: জিএম কাদের: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে ঔষধ ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালে টাকা গুনতে গুনতে ফতুর হচ্ছে রোগীর পরিবার। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। তিনি বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশন শুধু মশা মারার ঔষধ ছিটিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে। স্প্রে করা ওষুধে মশা মরছে কিনা তাও দেখার কেউ নেই। জবাবদিহিতা থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতো না। ডেঙ্গু নির্মূলে সরকারের ব্যর্থতা সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না।
গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা সাতশ ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। সাধারণ মানুষের ধারণা মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী সংকুলান হচ্ছে না। স্যালাইনের অভাবে হাহাকার উঠেছে রোগীর স্বজনদের মাঝে। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে স্যালাইনের কোনো অভাব নেই, অথচ হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন নেই। ফার্মেসিতে ৯০ টাকা দামের স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো টাকায়। রোগীদের অভিযোগ নার্সদের মাধ্যমেই চিকিৎসা পাচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টায় একবারও ডাক্তারের দেখা মেলেনা সরকারি হাসপাতালে। বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসাসেবা পেলেও গুনতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা কেবিন ভাড়া, আইসিইউ ভাড়া, ওষুধ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিদর্শন বাবদ গুনতে হচ্ছে প্রায় লাখ টাকা। তবে, হাসপাতাল ভেদে এই খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই। সাধারণ মানুষ যেন স্বাভাবিক চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।