ঢাকা ০৬:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

ডুবন্ত ক্রেডিট সুইস কিনে নিল ইউবিএস

  • আপডেট সময় : ০১:২৭:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩
  • ৬৩ বার পড়া হয়েছে

বিবিসি : ক্রমাগত দরপতনের কারণে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়া সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংককে উদ্ধারে সরকারের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইউবিএস। বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে দুই ব্যাংক ও সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিদের জরুরি বৈঠকের পর রোববার ক্রেডিট সুইস ব্যাংক অধিগ্রহণের এই ঘোষণা আসে।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বলছে, বাজারে আস্থা ফেরানোর পাশাপাশি অর্থনীতির ঝুঁকি এড়াতে এই চুক্তির ভালো কোনো বিকল্প ছিল না।
ক্রেডিট সুইসের শেয়ার মালিকদের এই চুক্তি নিয়ে মতামত দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। চুক্তি অনুযায়ী, ক্রেডিট সুইসের প্রতি ২২ দশমিক ৪৮টি শেয়ারের জন্য তারা ইউবিএসের একটি শেয়ার পাবেন।
এই হিসাবে মাত্র ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে ক্রেডিট সুইসের মালিক হয়ে যাচ্ছে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএস। অথচ শুক্রবারের লেনদেন দরেও ক্রেডিট সুইসের সম্পদমূল্য ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। সুইস নিয়ন্ত্রক সংস্থা সোমবার সকালে বাজার খোলার আগেই কোনো একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চাইছিল, যাতে আরও দরপতন এবং সেই সঙ্গে অস্থিরতা ঠেকানো যায়।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষায়, বৈরী পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য একটি ‘সমাধানে’ তারা পৌঁছাতে পেরেছে। দেশটির সরকার এক আদেশে বলেছে, এই লেনদেনে ইউবিএসের ঝুঁকি কমাতে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের গ্যারান্টি দেওয়া হবে। পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ১১০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত তারল্য সহায়তা দেবে।
অর্থ সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধের আলোচনার মধ্যেই ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ওই দুটি ব্যাংক পতনের পর বিশ্বজুড়েই ব্যাংকিং খাত নিয়ে তৈরি হয় উদ্বেগ।
সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ক্রেডিট সুইস তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতার কথা জানিয়েছিল। এরপর শেয়ারবাজারে ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের ব্যাপক দরপতন শুরু হয়। সমস্যা সমাধানে জরুরিভাবে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের দেওয়া ৫৪ বিলিয়ন ডলারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। গত বুধবার এ ব্যাংকের শেয়ারের ২৪ শতাংশ দরপতন হয়। ফলে ইউরোপীয় বাজারে ব্যাংকটির সম্পদ মূল্য আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। ক্রেডিট সুইস ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৬ সালে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির মুখে পড়ে ব্যাংকটি। ২০২২ সালে ব্যাংকটি ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (৭.৯ বিলিয়ন ডলার) আর্থিক ক্ষতির কথা জানায়, ২০০৮ সালের পর সবথেকে খারাপ সময় ছিল সেটি। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত ব্যাংকটি যে লাভজনক অবস্থায় যেতে পারবে না, সেই আশঙ্কার কথাও জানিয়েছিল। অন্যদিকে ২০২২ সালে ইউবিএস ব্যাংক লাভ করে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
দেশের ভেতরে ৯৫টি শাখায় কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ক্রেডিট সুইসের বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে এবং ধনী গ্রাহকদের সম্পদ পরিচালনা করে তারা।
বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি ব্যাংকের একটি ক্রেডিট সুইস, যেটির পতন অর্থনীতিতে বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। এ ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুইস সম্প্রচারমাধ্যম এসআরএফ জানায়, গত বছর ৯ হাজার কর্মী কমানোর পরও বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট সুইসের ৫০ হাজার ৪৮০ জন কর্মী ছিল। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডেই ছিল ১৬ হাজার ৭০০ জন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডুবন্ত ক্রেডিট সুইস কিনে নিল ইউবিএস

আপডেট সময় : ০১:২৭:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

বিবিসি : ক্রমাগত দরপতনের কারণে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়া সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংককে উদ্ধারে সরকারের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইউবিএস। বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে দুই ব্যাংক ও সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিদের জরুরি বৈঠকের পর রোববার ক্রেডিট সুইস ব্যাংক অধিগ্রহণের এই ঘোষণা আসে।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বলছে, বাজারে আস্থা ফেরানোর পাশাপাশি অর্থনীতির ঝুঁকি এড়াতে এই চুক্তির ভালো কোনো বিকল্প ছিল না।
ক্রেডিট সুইসের শেয়ার মালিকদের এই চুক্তি নিয়ে মতামত দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। চুক্তি অনুযায়ী, ক্রেডিট সুইসের প্রতি ২২ দশমিক ৪৮টি শেয়ারের জন্য তারা ইউবিএসের একটি শেয়ার পাবেন।
এই হিসাবে মাত্র ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে ক্রেডিট সুইসের মালিক হয়ে যাচ্ছে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএস। অথচ শুক্রবারের লেনদেন দরেও ক্রেডিট সুইসের সম্পদমূল্য ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। সুইস নিয়ন্ত্রক সংস্থা সোমবার সকালে বাজার খোলার আগেই কোনো একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চাইছিল, যাতে আরও দরপতন এবং সেই সঙ্গে অস্থিরতা ঠেকানো যায়।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষায়, বৈরী পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য একটি ‘সমাধানে’ তারা পৌঁছাতে পেরেছে। দেশটির সরকার এক আদেশে বলেছে, এই লেনদেনে ইউবিএসের ঝুঁকি কমাতে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের গ্যারান্টি দেওয়া হবে। পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ১১০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত তারল্য সহায়তা দেবে।
অর্থ সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধের আলোচনার মধ্যেই ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ওই দুটি ব্যাংক পতনের পর বিশ্বজুড়েই ব্যাংকিং খাত নিয়ে তৈরি হয় উদ্বেগ।
সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ক্রেডিট সুইস তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতার কথা জানিয়েছিল। এরপর শেয়ারবাজারে ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের ব্যাপক দরপতন শুরু হয়। সমস্যা সমাধানে জরুরিভাবে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের দেওয়া ৫৪ বিলিয়ন ডলারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। গত বুধবার এ ব্যাংকের শেয়ারের ২৪ শতাংশ দরপতন হয়। ফলে ইউরোপীয় বাজারে ব্যাংকটির সম্পদ মূল্য আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। ক্রেডিট সুইস ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৬ সালে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির মুখে পড়ে ব্যাংকটি। ২০২২ সালে ব্যাংকটি ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (৭.৯ বিলিয়ন ডলার) আর্থিক ক্ষতির কথা জানায়, ২০০৮ সালের পর সবথেকে খারাপ সময় ছিল সেটি। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত ব্যাংকটি যে লাভজনক অবস্থায় যেতে পারবে না, সেই আশঙ্কার কথাও জানিয়েছিল। অন্যদিকে ২০২২ সালে ইউবিএস ব্যাংক লাভ করে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
দেশের ভেতরে ৯৫টি শাখায় কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ক্রেডিট সুইসের বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে এবং ধনী গ্রাহকদের সম্পদ পরিচালনা করে তারা।
বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি ব্যাংকের একটি ক্রেডিট সুইস, যেটির পতন অর্থনীতিতে বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। এ ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুইস সম্প্রচারমাধ্যম এসআরএফ জানায়, গত বছর ৯ হাজার কর্মী কমানোর পরও বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট সুইসের ৫০ হাজার ৪৮০ জন কর্মী ছিল। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডেই ছিল ১৬ হাজার ৭০০ জন।