ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
বিএনপির তরুণ্যের সমাবেশে তারেক রহমান

ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৫:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান -ছবি ভিডিও থেকে সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৮ মে) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, জনগণের রায়কে বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার।
‘যে কোনো দলের তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক সরকার, দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই মধ্যে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আমরা আবারও বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তিনি বলেন, জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময় ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় আমরা দেখেছি তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। আমরা দেখেছি আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই স্বৈরাচারের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে।

সমাবেশে উপস্থিত সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে, তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি? পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তির মানসিকতার সংস্কার অনেক বেশি জরুরি। নর্থ কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে- ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ নর্থ কোরিয়া। সুতরাং কী লেখা আছে তারচেয়েও বেশি জরুরি, মেনে চলা। ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণ বা শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমরা আবারও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। তারেক রহমান বলেন, নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যই কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা নষ্ট হয় এমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। গণতন্ত্রের পক্ষের জনগণকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। নির্বাচন করুন। ভবিষ্যতে যদি জনগণের রায় পান তাহলে সরকারে যোগদান করুন।

তিনি বলেন, গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়েছেন। এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে পছন্দমত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাননি। কথিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। কিন্তু আজ আমরা দেখেছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না।
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের জনগণের সরাসরি ভোটে জবাবদিহিমূলক ও দায়বদ্ধমূলক একটি সরকার দ্রুত দেখতে চায় জনগণ।’
‘তরুণ প্রজন্মের ভাইয়েরা ও দেশবাসী, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য আপনারা প্রস্তুতি শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে কারা প্রতিনিধি হবে, সেটা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনারা নির্বাচিত করুন।’ বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের কাছে যান। তাদের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করুন। তাদের প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণের মন জয় করুন। কারণ, জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।
বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি, দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি: ড. মঈন খান: তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আজকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ তারুণ্যের সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আপনার (তারেক রহমান) নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণরা জেগে উঠেছে। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছিল। দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জুলাই আগস্টে আমাদের প্রথম বিজয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলন কিন্তু থেমে যায়নি। আমরা বিজয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে রূপ দিতে হবে। অবিলম্বে দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে। জনগণ চায় গণতন্ত্র। আমরা সরকারকে সেজন্য সহযোগিতা করেছি। সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। না হলে বিক্ষুব্ধ তরুণ সমাজের আন্দোলনে কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পালাতে পারবে না। তিনি বলেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি ১৫ বছর ধরে জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। এটা সরকারকে উপলদ্ধি করতে হবে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই, করেছি করবো। আওয়ামী লীগের সময় যেমন গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করেছি, তেমনি রাজপথে থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করবো।
নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা চলবে না: নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা করা চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তারুণ্যের সমাবেশ থেকে তিনি এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তরুণদের সুনামি হয়েছে, তাঁরা গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বার্তা দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। বিচারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
সংস্কারের কথা বিএনপির আগে কেউ বলেনি উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ৭ বছর আগে ভিশন–২০৩০ জাতির সামনে তুলে ধরেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২ বছর আগে ২৭ দফা দিয়েছিলেন তারেক রহমান। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের ফলাফল নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন বলা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে নাকি ঐকমত্য হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য না হয়ে থাকলে সেটা করবে জনগণ। ভোট ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সেই সংস্কার করবে।
বিচার অসম্পূর্ণ থাকলে সেই দায়িত্ব বিএনপি পালন করবে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘কারণ, আমাদের মতো এত কঠিন সময় কেউ পার করেনি। আমাদের মতো এত ত্যাগ কেউ করেনি। ৫ আগস্ট না হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই বিদেশে থাকতেন। আর আমাদের হয় জেলে, না হয় ফাঁসির কাষ্ঠে থাকতে হতো। সুতরাং বিচারকাজ বাকি থাকলে সেটা বিএনপি করবে, তোমাদের ওপর কোনো ভরসা নাই।’
সরকারের পচন ধরেছে, এভাবে চললে আ. লীগ যা করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে: মির্জা আব্বাস: এই সরকারের (অন্তর্বর্তী সরকার) মাথা থেকে পচন ধরেছে, নিচ পর্যন্ত পচে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এই সরকার যদি এভাবে চালায় আরও, আওয়ামী লীগ যা ক্ষতি করেছে, তার চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। সে কারণ নির্বাচন অবশ্যই দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘যে কোনো দল আসুক, নির্বাচিত সরকারের হাতে এই দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিরাপদ থাকবে বলে বিশ্বাস করি।’ এই সরকার গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ও আস্থার সরকার ছিল উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কিন্তু নয় মাসের কার্যক্রমে এই সরকার থেকে কিছুই পাইনি। শুধু পেয়েছি অবজ্ঞা।’
মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ নিয়ে লাভ-লোকসান দেখার দরকার নাই। আমরা যেমন ছিলাম, তেমন থাকতে চাই।’ এই সরকার একটি উপনিবেশিক সরকার বলে মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দেশের নাগরিক নন।
দেশে ব্যাপক চাঁদাবাজি হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, এর দোষ বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এসব চাঁদাবাজদের কেন ধরছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ থাকবে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার বলছে সংস্কার করে নির্বাচন দেবে। কিন্তু গত নয় মাসে সরকার কিছুই করতে পারেনি। তারা আগামী নয় বছরেও কিছু করতে পারবে না।’ সরকারকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিজ উদ্যোগে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এই সমাবেশ থেকে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও আমীর খসরু মাহমুদ ছাড়া অন্য নেতারাও এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিএনপির তরুণ্যের সমাবেশে তারেক রহমান

ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে

আপডেট সময় : ০৮:৫৫:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৮ মে) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, জনগণের রায়কে বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার।
‘যে কোনো দলের তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক সরকার, দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই মধ্যে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আমরা আবারও বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তিনি বলেন, জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময় ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় আমরা দেখেছি তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। আমরা দেখেছি আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই স্বৈরাচারের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে।

সমাবেশে উপস্থিত সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে, তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি? পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তির মানসিকতার সংস্কার অনেক বেশি জরুরি। নর্থ কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে- ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ নর্থ কোরিয়া। সুতরাং কী লেখা আছে তারচেয়েও বেশি জরুরি, মেনে চলা। ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণ বা শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমরা আবারও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। তারেক রহমান বলেন, নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যই কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা নষ্ট হয় এমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। গণতন্ত্রের পক্ষের জনগণকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। নির্বাচন করুন। ভবিষ্যতে যদি জনগণের রায় পান তাহলে সরকারে যোগদান করুন।

তিনি বলেন, গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়েছেন। এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে পছন্দমত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাননি। কথিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। কিন্তু আজ আমরা দেখেছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না।
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের জনগণের সরাসরি ভোটে জবাবদিহিমূলক ও দায়বদ্ধমূলক একটি সরকার দ্রুত দেখতে চায় জনগণ।’
‘তরুণ প্রজন্মের ভাইয়েরা ও দেশবাসী, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য আপনারা প্রস্তুতি শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে কারা প্রতিনিধি হবে, সেটা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনারা নির্বাচিত করুন।’ বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের কাছে যান। তাদের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করুন। তাদের প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণের মন জয় করুন। কারণ, জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।
বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি, দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি: ড. মঈন খান: তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আজকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ তারুণ্যের সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আপনার (তারেক রহমান) নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণরা জেগে উঠেছে। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছিল। দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জুলাই আগস্টে আমাদের প্রথম বিজয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলন কিন্তু থেমে যায়নি। আমরা বিজয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে রূপ দিতে হবে। অবিলম্বে দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে। জনগণ চায় গণতন্ত্র। আমরা সরকারকে সেজন্য সহযোগিতা করেছি। সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। না হলে বিক্ষুব্ধ তরুণ সমাজের আন্দোলনে কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পালাতে পারবে না। তিনি বলেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি ১৫ বছর ধরে জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। এটা সরকারকে উপলদ্ধি করতে হবে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই, করেছি করবো। আওয়ামী লীগের সময় যেমন গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করেছি, তেমনি রাজপথে থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করবো।
নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা চলবে না: নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা করা চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তারুণ্যের সমাবেশ থেকে তিনি এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তরুণদের সুনামি হয়েছে, তাঁরা গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বার্তা দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। বিচারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
সংস্কারের কথা বিএনপির আগে কেউ বলেনি উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ৭ বছর আগে ভিশন–২০৩০ জাতির সামনে তুলে ধরেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২ বছর আগে ২৭ দফা দিয়েছিলেন তারেক রহমান। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের ফলাফল নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন বলা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে নাকি ঐকমত্য হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য না হয়ে থাকলে সেটা করবে জনগণ। ভোট ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সেই সংস্কার করবে।
বিচার অসম্পূর্ণ থাকলে সেই দায়িত্ব বিএনপি পালন করবে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘কারণ, আমাদের মতো এত কঠিন সময় কেউ পার করেনি। আমাদের মতো এত ত্যাগ কেউ করেনি। ৫ আগস্ট না হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই বিদেশে থাকতেন। আর আমাদের হয় জেলে, না হয় ফাঁসির কাষ্ঠে থাকতে হতো। সুতরাং বিচারকাজ বাকি থাকলে সেটা বিএনপি করবে, তোমাদের ওপর কোনো ভরসা নাই।’
সরকারের পচন ধরেছে, এভাবে চললে আ. লীগ যা করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে: মির্জা আব্বাস: এই সরকারের (অন্তর্বর্তী সরকার) মাথা থেকে পচন ধরেছে, নিচ পর্যন্ত পচে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এই সরকার যদি এভাবে চালায় আরও, আওয়ামী লীগ যা ক্ষতি করেছে, তার চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। সে কারণ নির্বাচন অবশ্যই দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘যে কোনো দল আসুক, নির্বাচিত সরকারের হাতে এই দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিরাপদ থাকবে বলে বিশ্বাস করি।’ এই সরকার গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ও আস্থার সরকার ছিল উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কিন্তু নয় মাসের কার্যক্রমে এই সরকার থেকে কিছুই পাইনি। শুধু পেয়েছি অবজ্ঞা।’
মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ নিয়ে লাভ-লোকসান দেখার দরকার নাই। আমরা যেমন ছিলাম, তেমন থাকতে চাই।’ এই সরকার একটি উপনিবেশিক সরকার বলে মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দেশের নাগরিক নন।
দেশে ব্যাপক চাঁদাবাজি হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, এর দোষ বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এসব চাঁদাবাজদের কেন ধরছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ থাকবে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার বলছে সংস্কার করে নির্বাচন দেবে। কিন্তু গত নয় মাসে সরকার কিছুই করতে পারেনি। তারা আগামী নয় বছরেও কিছু করতে পারবে না।’ সরকারকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিজ উদ্যোগে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এই সমাবেশ থেকে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও আমীর খসরু মাহমুদ ছাড়া অন্য নেতারাও এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।