ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

ডিম-পেঁয়াজের চড়া দাম: রান্নায় ব্যবহার সীমিত করছেন গৃহিণীরা

  • আপডেট সময় : ০২:৪৪:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যশা ডেস্ক: সপ্তাহ ঘুরতেই ডিমের হালি চড়েছে ৫০ টাকায়, মাস ঘুরার মধ্যে পেঁয়াজের কেজি বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজন। এমন অবস্থায় স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার কমানো হচ্ছে, ডিমও আগের মতো খাওয়া হচ্ছে না। একইসঙ্গে বাজারের চড়া দামের কারণে একদিকে যেমন ক্রেতারা হতাশ, তেমনি প্রোটিনের জন্য হয়ে পড়েছে এক চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের তুলনায় ক্রেতারা পেঁয়াজ ও ডিম কম কিনছেন। রাজধানীর মিরপুরের মাটিকাটা এলাকার খুচরা দোকানিরা জানান, গত মাসের শুরুতে পেঁয়াজের কেজি ৬০–৬৫ টাকায় পাওয়া যেত, এখন ৮০–৮৫ টাকা। ক্রেতারা এখন প্রয়োজন ছাড়া পেঁয়াজ কম কিনছেন। ডিমের দামও বেড়ে যাওয়ায় তাদের ক্রয় ক্ষমতা সীমিত। এমন পরিস্থিতিতে দোকানিরা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি ও সিন্ডিকেটের কারসাজি দাম বাড়ানোর মূল কারণ।

একই সময়, গৃহিণীরা রান্নায় পেঁয়াজের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। একই এলাকার বাসিন্দা (মিরপুর) বেগম বলেন, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহে যে পরিমাণ ডিম খেতাম, এখন তা কমাতে হয়েছে। পেঁয়াজও আগের মতো ব্যবহার করা যায় না, তাই রান্নার স্বাদ কিছুটা সীমিত হয়েছে।

উত্তরার আজমপুর এলাকার গৃহিণী রোকসানা আক্তার বলেন, আমাদের সংসারে চারজন মানুষ। আগে প্রায় প্রতিদিনের রান্নায় ডিম থাকত, পেঁয়াজ ছাড়া তো কোনো রান্নাই হত না। এখন ডিমের দাম ৫০ আর পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০–৮৫ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে তো সংসারের খরচ চালানো মুশকিল। ডিম এখন সপ্তাহে দুই-তিন দিন কিনি, আর পেঁয়াজের ব্যবহার অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি।

রাহনুমা তারান্নুম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে গেলেই মনে হয় যেন দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। পেঁয়াজ-ডিম দুইটাই রান্নাঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, কিন্তু এখন মাংস কেনা তো দূরের কথা, শুধু ডিম কিনতেই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পেঁয়াজও অনেকটা কম ব্যবহার করছি, আগের মতো ঝোল বা ভর্তায় ভরপুর করে দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না।

আর সাম্প্রতিক সময়ে কেনাকাটাও আগের তুলনায় কমাতে হয়েছে উল্লেখ করে রবিউল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে এমন ঊর্ধ্বগতি দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সিন্ডিকেটের কার্যক্রমে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। এতে স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী দাম ঠিক রাখা কঠিন হচ্ছে। বাজারে পেঁয়াজ ও ডিমের চড়া দামের কারণে এখন প্রতিটি কেজি, প্রতিটি হালি বিবেচনা করতে হচ্ছে।

ঢাকার পল্লবী, মোহাম্মদপুর, বনানী ও তেজগাঁও এলাকার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্রেতাই এখন আগের মতো সপ্তাহে দুই কেজি পেঁয়াজ কেনার পরিবর্তে ১ কেজি বা আধা কেজি কেনা হচ্ছে। ডিমের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিশেষ করে ছোট পরিবারগুলোতে খরচ সামলাতে কেনাকাটা আরো সীমিত করা হয়েছে।

সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা টিসিবি বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম বর্তমানে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা, সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা। ডিমের দাম প্রতি হালিতে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। এক মাস আগেও পেঁয়াজের কেজি ৬৫–৫৫ টাকার মধ্যে ছিল। এক বছর আগে এ সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল ১০৫–১১৫ টাকা। ডিমের ক্ষেত্রেও গত বছরের একই সময়ে হালি ৩০–৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

ভোক্তারা মনে করছেন, দাম বাড়ানোর ফলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারে ডিম কম খাওয়া হচ্ছে, কারণ তারা প্রতিদিন ডিম কিনে রাখতে পারছে না। পেঁয়াজও কম ব্যবহার হচ্ছে, ফলে স্বাভাবিক রান্নার স্বাদ সীমিত হচ্ছে। এতে পরিবারের খাবারের মান ও পুষ্টিতেও প্রভাব পড়ছে।

বাজারে দোকানিরাও স্বীকার করছেন, ক্রেতারা এখন কম কিনছেন। দাম বাড়ার কারণে ক্রেতারা আগের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ পেঁয়াজ ও ডিম কিনছেন। এটা আমাদেরও উদ্বেগের বিষয় বলেও মন্তব্য করেছেন খুচরা দোকানদাররা।

রাজধানীর খিলগাঁও বাজারের খুচরা দোকানদার আব্দুল হান্নান বলেন, দাম এত বেড়ে গেছে যে ক্রেতারা আগের মতো আর কিনতে চাইছেন না। আগে অনেক ক্রেতা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এক পাল্লা (৫ কেজি) আর ডিমের ক্ষেত্রে ১ ডজন (১২টি) বা ১ খাঁচা (৩০টি) ডিম নিতেন। এখন তারা আধা কেজি বা তিন-চারটা ডিমেই সীমিত থাকছেন।

নিউ মার্কেট এলাকার দোকানদার হুমায়ুন কবির বলেন, ক্রেতাদের চাপ কমে গেছে। আগে দোকানে ভিড় লেগেই থাকত, এখন অনেকেই শুধু দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু এখানে আমাদেরও করার কিছু নেই।

এদিকে বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। গত ১২ আগস্ট বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যে দেশে সস্তায় পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

এসি/

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিম-পেঁয়াজের চড়া দাম: রান্নায় ব্যবহার সীমিত করছেন গৃহিণীরা

আপডেট সময় : ০২:৪৪:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

প্রত্যশা ডেস্ক: সপ্তাহ ঘুরতেই ডিমের হালি চড়েছে ৫০ টাকায়, মাস ঘুরার মধ্যে পেঁয়াজের কেজি বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজন। এমন অবস্থায় স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার কমানো হচ্ছে, ডিমও আগের মতো খাওয়া হচ্ছে না। একইসঙ্গে বাজারের চড়া দামের কারণে একদিকে যেমন ক্রেতারা হতাশ, তেমনি প্রোটিনের জন্য হয়ে পড়েছে এক চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের তুলনায় ক্রেতারা পেঁয়াজ ও ডিম কম কিনছেন। রাজধানীর মিরপুরের মাটিকাটা এলাকার খুচরা দোকানিরা জানান, গত মাসের শুরুতে পেঁয়াজের কেজি ৬০–৬৫ টাকায় পাওয়া যেত, এখন ৮০–৮৫ টাকা। ক্রেতারা এখন প্রয়োজন ছাড়া পেঁয়াজ কম কিনছেন। ডিমের দামও বেড়ে যাওয়ায় তাদের ক্রয় ক্ষমতা সীমিত। এমন পরিস্থিতিতে দোকানিরা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি ও সিন্ডিকেটের কারসাজি দাম বাড়ানোর মূল কারণ।

একই সময়, গৃহিণীরা রান্নায় পেঁয়াজের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। একই এলাকার বাসিন্দা (মিরপুর) বেগম বলেন, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহে যে পরিমাণ ডিম খেতাম, এখন তা কমাতে হয়েছে। পেঁয়াজও আগের মতো ব্যবহার করা যায় না, তাই রান্নার স্বাদ কিছুটা সীমিত হয়েছে।

উত্তরার আজমপুর এলাকার গৃহিণী রোকসানা আক্তার বলেন, আমাদের সংসারে চারজন মানুষ। আগে প্রায় প্রতিদিনের রান্নায় ডিম থাকত, পেঁয়াজ ছাড়া তো কোনো রান্নাই হত না। এখন ডিমের দাম ৫০ আর পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০–৮৫ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে তো সংসারের খরচ চালানো মুশকিল। ডিম এখন সপ্তাহে দুই-তিন দিন কিনি, আর পেঁয়াজের ব্যবহার অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি।

রাহনুমা তারান্নুম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে গেলেই মনে হয় যেন দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। পেঁয়াজ-ডিম দুইটাই রান্নাঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, কিন্তু এখন মাংস কেনা তো দূরের কথা, শুধু ডিম কিনতেই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পেঁয়াজও অনেকটা কম ব্যবহার করছি, আগের মতো ঝোল বা ভর্তায় ভরপুর করে দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না।

আর সাম্প্রতিক সময়ে কেনাকাটাও আগের তুলনায় কমাতে হয়েছে উল্লেখ করে রবিউল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে এমন ঊর্ধ্বগতি দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সিন্ডিকেটের কার্যক্রমে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। এতে স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী দাম ঠিক রাখা কঠিন হচ্ছে। বাজারে পেঁয়াজ ও ডিমের চড়া দামের কারণে এখন প্রতিটি কেজি, প্রতিটি হালি বিবেচনা করতে হচ্ছে।

ঢাকার পল্লবী, মোহাম্মদপুর, বনানী ও তেজগাঁও এলাকার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্রেতাই এখন আগের মতো সপ্তাহে দুই কেজি পেঁয়াজ কেনার পরিবর্তে ১ কেজি বা আধা কেজি কেনা হচ্ছে। ডিমের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিশেষ করে ছোট পরিবারগুলোতে খরচ সামলাতে কেনাকাটা আরো সীমিত করা হয়েছে।

সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা টিসিবি বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম বর্তমানে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা, সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা। ডিমের দাম প্রতি হালিতে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। এক মাস আগেও পেঁয়াজের কেজি ৬৫–৫৫ টাকার মধ্যে ছিল। এক বছর আগে এ সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল ১০৫–১১৫ টাকা। ডিমের ক্ষেত্রেও গত বছরের একই সময়ে হালি ৩০–৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

ভোক্তারা মনে করছেন, দাম বাড়ানোর ফলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারে ডিম কম খাওয়া হচ্ছে, কারণ তারা প্রতিদিন ডিম কিনে রাখতে পারছে না। পেঁয়াজও কম ব্যবহার হচ্ছে, ফলে স্বাভাবিক রান্নার স্বাদ সীমিত হচ্ছে। এতে পরিবারের খাবারের মান ও পুষ্টিতেও প্রভাব পড়ছে।

বাজারে দোকানিরাও স্বীকার করছেন, ক্রেতারা এখন কম কিনছেন। দাম বাড়ার কারণে ক্রেতারা আগের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ পেঁয়াজ ও ডিম কিনছেন। এটা আমাদেরও উদ্বেগের বিষয় বলেও মন্তব্য করেছেন খুচরা দোকানদাররা।

রাজধানীর খিলগাঁও বাজারের খুচরা দোকানদার আব্দুল হান্নান বলেন, দাম এত বেড়ে গেছে যে ক্রেতারা আগের মতো আর কিনতে চাইছেন না। আগে অনেক ক্রেতা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এক পাল্লা (৫ কেজি) আর ডিমের ক্ষেত্রে ১ ডজন (১২টি) বা ১ খাঁচা (৩০টি) ডিম নিতেন। এখন তারা আধা কেজি বা তিন-চারটা ডিমেই সীমিত থাকছেন।

নিউ মার্কেট এলাকার দোকানদার হুমায়ুন কবির বলেন, ক্রেতাদের চাপ কমে গেছে। আগে দোকানে ভিড় লেগেই থাকত, এখন অনেকেই শুধু দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু এখানে আমাদেরও করার কিছু নেই।

এদিকে বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। গত ১২ আগস্ট বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যে দেশে সস্তায় পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

এসি/