ঢাকা ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

ডিম আমদানি নিয়ে প্রশ্ন

  • আপডেট সময় : ০২:০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ১২৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে দিনে ডিমের চাহিদা চার কোটি। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৫ কোটি। আর ডিম উৎপাদন তথা পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। এসব তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) পোল্ট্রি শিল্প ও এর সঙ্গে জড়িত বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষায় ডিম আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে বিপিএ এই দাবি তুলে ধরে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ডিম আমদানির মাধ্যমে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না। মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিডের দাম কমাতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সুমন হাওলাদার বলেন, ‘ডিম ও মুরগি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমানো না গেলে কখনোই ডিম-মুরগির দাম কমবে না। আমদানি করে দাম কমাতে চাইলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।’ ‘আমদানি নির্ভর হলে পরবর্তী সময়ে বেশি দামেই কিনে খেতে হবে। টাকা থাকলেও ডিম ও মুরগি পাওয়া যাবে না। তাই দেশীয় উৎপাদনকে টিকিয়ে রাখতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে হবে।’ লিখিত বক্তব্যে বিপিএ সভাপতি বলেন, আমাদানি না করে ডিম রপ্তানি করুন। বাজারের ৮০ শতাংশ চাহিদা প্রান্তিক খামারিরা পূরণ করে থাকে। ডিম আমদানি করলে সিন্ডিকেট ভাঙবে না। বাজার তদারকিতে ডিমের সিন্ডিকেট মুরগির বাচ্চার ওপর ভর করেছে। ডিম আমদানি না করে, ডিম রপ্তানি করতে পারি। আমাদের সেই পরিমাণ উৎপাদনও রয়েছে।’ ভারত ও বাংলাদেশে মুরগি ও ডিমের দামের এত বেশি পার্থক্য কেন তাও তুলে ধরেন বিপিএ সভাপতি। বলেন, ‘ভারতের বাজারে ডিম-মুরগির দাম কম। কারণ ভারতে ৫০ কেজির ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ২ হাজার ৭০০ টাকা, ১ বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ১ হাজার ৮৭৫ টাকা, ১টি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার মূল্য ২৮ টাকা, ১টি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ২৫-৩০ টাকা। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ বাংলা টাকায় ৫-৬ টাকা। তাদের বাজারে একটি ডিম বিক্রয় হয় ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকা। আর এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০-১২০ টাকা। বিক্রি করেন ১৫০-১৬০ টাকায়। তাদের উৎপাদন খরচ কম, তাই তারা কম দামে বিক্রয় করেও লাভ করতে পারেন।’ ‘অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজারে ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৫০ কেজি ১ বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ২ হাজার ৯০০ টাকা, ১টি ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য ৫০-৬০ টাকা, একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৭০-৭৫ টাকা। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা থেকে ১১ টাকা। বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা ধরে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা। বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ। এই পার্থক্য কমাতে সরকারকে তদারকি করে সমস্যা সমাধান ও ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে সুমন হাওলাদার বলেন, ‘কর্পোরেট গ্রুপগুলো ২০১০ সাল থেকে মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট করে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছিল। এরপর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করে দিয়ে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২২ টাকা ধরে লাভ সহকারে ৩২ টাকা দাম বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু কর্পোরেট অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টে রিট করে তাদের খেয়াল খুশি মতো পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাব বাজারে এসে পড়ছে।’ বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কর্পোরেট সি-িকেটকারীদের সঙ্গে সরকারের আঁতাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। বলেন, ‘এভাবেই তারা তাদের আখের গুছিয়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে মুরগির বাচ্চা আমদানি করতে হবে। সরকার ঘোষণা দিক মুরগির বাচ্চা ও ডিম আমদানি করবে। তাহলেই সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে।’

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডিম আমদানি নিয়ে প্রশ্ন

আপডেট সময় : ০২:০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে দিনে ডিমের চাহিদা চার কোটি। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৫ কোটি। আর ডিম উৎপাদন তথা পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। এসব তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) পোল্ট্রি শিল্প ও এর সঙ্গে জড়িত বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষায় ডিম আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে বিপিএ এই দাবি তুলে ধরে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ডিম আমদানির মাধ্যমে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না। মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিডের দাম কমাতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সুমন হাওলাদার বলেন, ‘ডিম ও মুরগি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমানো না গেলে কখনোই ডিম-মুরগির দাম কমবে না। আমদানি করে দাম কমাতে চাইলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।’ ‘আমদানি নির্ভর হলে পরবর্তী সময়ে বেশি দামেই কিনে খেতে হবে। টাকা থাকলেও ডিম ও মুরগি পাওয়া যাবে না। তাই দেশীয় উৎপাদনকে টিকিয়ে রাখতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে হবে।’ লিখিত বক্তব্যে বিপিএ সভাপতি বলেন, আমাদানি না করে ডিম রপ্তানি করুন। বাজারের ৮০ শতাংশ চাহিদা প্রান্তিক খামারিরা পূরণ করে থাকে। ডিম আমদানি করলে সিন্ডিকেট ভাঙবে না। বাজার তদারকিতে ডিমের সিন্ডিকেট মুরগির বাচ্চার ওপর ভর করেছে। ডিম আমদানি না করে, ডিম রপ্তানি করতে পারি। আমাদের সেই পরিমাণ উৎপাদনও রয়েছে।’ ভারত ও বাংলাদেশে মুরগি ও ডিমের দামের এত বেশি পার্থক্য কেন তাও তুলে ধরেন বিপিএ সভাপতি। বলেন, ‘ভারতের বাজারে ডিম-মুরগির দাম কম। কারণ ভারতে ৫০ কেজির ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ২ হাজার ৭০০ টাকা, ১ বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ১ হাজার ৮৭৫ টাকা, ১টি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার মূল্য ২৮ টাকা, ১টি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ২৫-৩০ টাকা। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ বাংলা টাকায় ৫-৬ টাকা। তাদের বাজারে একটি ডিম বিক্রয় হয় ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকা। আর এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০-১২০ টাকা। বিক্রি করেন ১৫০-১৬০ টাকায়। তাদের উৎপাদন খরচ কম, তাই তারা কম দামে বিক্রয় করেও লাভ করতে পারেন।’ ‘অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজারে ১ বস্তা ব্রয়লার ফিডের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৫০ কেজি ১ বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ২ হাজার ৯০০ টাকা, ১টি ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য ৫০-৬০ টাকা, একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৭০-৭৫ টাকা। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা থেকে ১১ টাকা। বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা ধরে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা। বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ। এই পার্থক্য কমাতে সরকারকে তদারকি করে সমস্যা সমাধান ও ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে সুমন হাওলাদার বলেন, ‘কর্পোরেট গ্রুপগুলো ২০১০ সাল থেকে মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট করে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছিল। এরপর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করে দিয়ে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২২ টাকা ধরে লাভ সহকারে ৩২ টাকা দাম বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু কর্পোরেট অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টে রিট করে তাদের খেয়াল খুশি মতো পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাব বাজারে এসে পড়ছে।’ বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কর্পোরেট সি-িকেটকারীদের সঙ্গে সরকারের আঁতাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। বলেন, ‘এভাবেই তারা তাদের আখের গুছিয়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে মুরগির বাচ্চা আমদানি করতে হবে। সরকার ঘোষণা দিক মুরগির বাচ্চা ও ডিম আমদানি করবে। তাহলেই সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে।’