নিজস্ব প্রতিবেদক: পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ডিমের সরবরাহ সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করায় পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডকে ৭২ লাখ ২ হাজার ৯৭৩ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)।
কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ২০২২ সালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতিযোগিতা কমিশন। অনুসন্ধানে পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি ছাড়াও কাজী ফার্মস গ্রুপ, সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ডায়মন্ড এগ লিমিটেড, ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ডিমের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ডিমের সরবরাহ সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করার প্রমাণ মিলেছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিসিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ১৫ এর উপধারা (১), উপধারা (২) এর দফা (ক) এর উপ-দফা (অ) এবং দফা (খ) এর আওতায় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে এমন ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থাকে সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ডিমের ক্রয় বা বিক্রয়মূল্য অস্বাভাবিকভাবে নির্ধারণের অভিযোগে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছিল প্রতিযোগিতা কমিশন।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠান পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড ডিম ব্যবসায়ীদের ডিম আনতে গাড়ি পাঠানোর পরে মেসেজের মাধ্যমে বাজার দরের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ পয়সা বেশি দামে ডিমের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করতো।
সমজাতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে এ দাম নির্ধারণ করা হতো মর্মে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয়। ব্যবসায়ীরা ওই নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রয়ে রাজি না হলে পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি ব্যবসায়ীদের ডিম সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানাতো। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি কমার্শিয়াল লাল ডিমের সঙ্গে হ্যাচিং ডিম মিশিয়ে কমার্শিয়াল ডিমের দামে ব্যবসায়ীদের কিনতে বাধ্য করতো, না হলে গাড়ি আটকে রাখতো। গাড়ি ফেরত এলে ভাড়ার টাকা ক্ষতির আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে বাধ্য হতেন।
অপরাধ সংগঠনের সময়কালে বাজারে প্রতি পিস ডিমের পাইকারি দাম ১১ দশমিক ৬০-১১ দশমিক ৮০ টাকা হলেও পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির বিক্রীত প্রতি পিস ডিমের পাইকারি দাম ছিল ১২ টাকা। এভাবে পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি ডিমের বাজারে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে ডিমের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল এবং ডিমের দাম বাড়িয়ে আসছিল।
মামলায় আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করা হয় এবং শুনানিকালে তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর প্রতিপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীর বক্তব্য শোনা হয়। প্রতিপক্ষের যুক্তিতর্কের সমর্থনে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন ও বিজ্ঞ আইনজীবীর লিখিত ও মৌখিক যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে কমিশন নিম্নবর্ণিত আদেশ দেন।
প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠান পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি সমধর্মীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পরোক্ষভাবে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে এবং একই প্রক্রিয়ায় তাদের উৎপাদিত ডিমের সরবরাহ এবং বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, যা প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ১৫ এর উপধারা (১) ও ধারা ১৫ এর উপধারা (২) এর দফা (ক) এর উপ-দফা (অ) এবং দফা (খ) এর লঙ্ঘন প্রমাণিত হওয়ায় একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনে এটিই প্রথম মামলা। তাই সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারিকে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ২০ এর উপধারা (ক) এর দফা (আ) মোতাবেক কতিপয় নির্দেশনাসহ ৭২ লাখা ২ হাজার ৯৭৩ (বাহাত্তর লাখ দুই হাজার নয়শত তিহাত্তর) টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর বিধান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির আগের তিন বছরের গড় টার্ন-ওভারের ওপর ভিত্তি করে এ জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সংশ্লিষ্ট খাতে ওই আর্থিক জরিমানার অর্থ জমা করতে বলা হয়।অন্যথায় প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ২০ (গ) মোতাবেক প্রতিদিনের ব্যর্থতার জন্য অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিতে হবে। তবে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর বিধান মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটি আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ বা আপিল করতে পারবে।