নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্ষা আক্তার মীম। কাজ করতেন ডিজে শিল্পী হিসেবে। পরে বান্ধবীদের হাত ধরে নতুন মডেলের মোবাইল ফোন পাওয়ার আশায় যুক্ত হয় মোবাইল পকেটমারের কাজে। গত পাঁচ বছরে এ কাজ করে ধরা খেয়েছে তিন বার। কিন্তু সংশোধিত হয়নি একবারও। ১০ বছর বয়স থেকে মাকে পকেটমারের কাজ করতে দেখে এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার সংকল্প করে বর্ষার মেয়ে আলেয়া আক্তার আলো। গত আট থেকে নয় বছর ধরে দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় করে আসছে পকেটমারের কাজ। তার সাথে যুক্ত হয়েছে সুমি আক্তার প্রিয়া।
বর্ষা-আলো-প্রিয়া এ তিন মহিলা পকেটমার গাউছিয়া মার্কেট, নিউমার্কেট, ইডেন কলেজ, বকশিবাজারস্হ বদরুন নেসা মহিলা কলেজ, আজিমপুরস্থ ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। কোনো দিন একেকজন সাতটি পর্যন্ত মোবাইল ফোন সেট চুরি করেছে।
গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান।
ডিজে শিল্পীসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে নয়জন মহিলা পকেটমার এবং তাদের সাত মহাজন রয়েছে। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৪০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন- বর্ষা আক্তার মীম, সুমি আক্তার প্রিয়া, শাবনুর, আলেয়া ওরফে আলো, সাথী আক্তার, মোছা. ছকিনা বেগম, সুজনা আক্তার ওরফে সুজিনা আক্তার ওরফে রুশকিনা, মোসা. তানিয়া খানম, তাসলিমা খাতুন; চোরাই মোবাইল ফোন ক্রয়-বিক্রয়ের নিয়মিত মহাজন মো. মাহাবুব হোসেন, মো. মোক্তার হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মো. ইমরান হোসেন, ছৈয়দ হালদার, মো. আশরাফ ঢালী ও মো. জাকির হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল একজন অতিরিক্ত জেলা জজের স্ত্রী মিসেস চৌধুরী নিউমার্কেট থেকে রিকশাযোগে ইডেন মহিলা কলেজে যাওয়া পথে কোনো একপর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে হারিয়ে ফেলেন আইফোনটি। বহু ফন্দি-ফিকিরে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে ফোনটি। চলতি বছরের ২ মে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের স্ত্রী তার সন্তানকে স্কুল থেকে আনার জন্য যান আজিমপুরস্হ ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলে। স্কুলের গেইটে হঠাৎ উপলব্ধি করেন তার ব্যাগটি কেমন যেন হালকা লাগছে। তাকিয়ে দেখেন ব্যাগের চেইন খোলা; মোবাইলটি নাই। ১৪ মে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে দেয় আইফোনটি। দুইটি ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীর মুখে হাসি ফোটানোর পাশাপাশি চোর চক্র সম্পর্কে ডিবি পুলিশ পেয়ে যায় বিশেষ ক্লূ।
সংবাদ সম্মেলনে মশিউর রহমান বলেন, এই বিশেষ ক্লু হলো রমনা এবং লালবাগ বিভাগে অবস্থিত বিভিন্ন মার্কেট, হাসপাতাল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা ভদ্রমহিলাদের ব্যাগ, পকেট কেটে মোবাইল ও টাকা বিশেষ কৌশলে চুরি করার জন্য গড়ে উঠেছে মহিলা পকেটমারের একটি বড় চক্র। এরা বোরখা পরে, পর্দানশীল মহিলা সেজে কখনো শিশুসন্তান কোলে নিয়ে স্নেহময়ী মায়ের অভিনয় করে সহসাই ঢুকে যায় জনারণ্যে। চোখের পলকে হাতিয়ে নেয় মোবাইল, নগদ টাকা ও ব্যাগে থাকা স্বর্ণালঙ্কার।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি ডিবি লালবাগ বিভাগের ডিসি বলেন, ডিবি লালবাগ বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সদস্যরা মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা লালবাগ থানার ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আশপাশের এলাকা এবং পরবর্তীতে শাহবাগ থানার গুলিস্তান এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ধারাবাহিক অভিযান চালায়। অভিযানে নয়জন মহিলা পকেটমারসহ মোট ১৬ জনকে আটক করা হয়। এ সময়ে তাদের দখল থেকে বিভিন্ন মডেলের ৪০ টি চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা ।
সংবাদ সম্মেলনে মশিউর রহমান বলেন, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বর্ষা এর আগে কাজ করেছে ডিজে শিল্পী হিসেবে। পরবর্তীতে বান্ধবীদের হাত ধরে নতুন মডেলের মোবাইল ফোন পাওয়ার আশায় যুক্ত হয় মোবাইল পকেটমারের কাজে। গত পাঁচ বছরে এ কাজ করে ধরা খেয়েছে তিনবার। কিন্তু সংশোধিত হয়নি একবারও।
১০ বছর বয়স থেকে মাকে পকেটমারির কাজ করতে দেখে এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সংকল্প করে আলেয়া আক্তার আলো। গত আট থেকে নয় বছর ধরে দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন জায়গা করে আসছে পকেটমারির কাজ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুমি আক্তার প্রিয়া। বর্ষা- আলো – প্রিয়া এ তিন নারী পকেটমার গাউছিয়া মার্কেট, নিউমার্কেট, ইডেন কলেজ, বকশিবাজারস্হ বদরুন নেসা মহিলা কলেজ, আজিমপুরস্থ ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। কোনো দিন একেকজন সাতটি পর্যন্ত মোবাইল চুরি করেছে। তাদের চুরি করা মোবাইল ফোনের মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কম দামি বাটন ফোন, ওয়ালটন, ভিভো, রিয়েল মি, সামস্যাং এমনকি লেটেস্ট মডেলের আইফোনও থাকে। আইফোন বাদে অন্য ফোনের জন্য তাদেরকে দেওয়া হয় দুই থেকে চার হাজার টাকা। আর আইফোনের জন্য দেয়া হয় সাত থেকে আট হাজার টাকা। পকেটমার মহিলারাও বুঝে তাদেরকে ঠকানো হচ্ছে। কিন্তু উপায় নাই। নির্দিষ্ট মহাজনের কাছে বিক্রি না করলে পরের দিনই ধরিয়ে দিবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী লোকদের কাছে। এভাবে পুলিশ, আদালত, জেলহাজতকে ভয় না করলেও চোরাই মোবাইল কেনাবেচা মহাজনদেরকে প্রচ- ভয় পায়। তাদের ইন্দনেই চুরি করতে মাঠে নামে; আবার তাদের দ্বারা লুন্ঠিত হয় এরা। চুরি করা মোবাইলগুলো থেকে বাটন মোবাইলগুলো ইনটেক্ট বিক্রি হয় নি¤œ দামে। আইফোনগুলোকে কেটেকুটে এক্সেসরিজ হিসেবে বিক্রি করা হয় অধিকাংশ সময়। অন্য স্মার্টফোনগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করা হয় বলে অধিকাংশ সময় এগুলোকে খুঁজে পাওয়া যায় না। যারা আইএমইইআই পরিবর্তনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য অপরাধ করে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বুধবার লালবাগ থানায় এবং শাহবাগ থানায় দুইটি মামলা করা হয়েছে।