ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা যে কারণে ব্যতিক্রম

  • আপডেট সময় : ১০:১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই ২০২২
  • ৬৭ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে রোগীদের প্রথম চাওয়া থাকে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় উপায়ে সেবাগ্রহণ করা। প্রথাগত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়াও সুবিধামতো সময়ে বেশিরভাগ সময়েই ডাক্তারের চেম্বারে যেতে পারেন না অনেকেই। এর পাশাপাশি শহরের চিরচেনা ট্রাফিক জ্যাম কিংবা তীব্র গরম তো আছেই। যা সহ্য করে হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পৌঁছানোও দুরূহ হয়ে পড়ে।
ভাবুন, আপনি আপনার বৃদ্ধ বাবাকে সঙ্গে করে জ্যাম, গরম এবং মানুষের ভিড়ের দুর্ভোগ পেরিয়ে অবশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে সমর্থ হলেন। এরপর তার পরামর্শমতো আপনার বাবার জন্য বেশকিছু ডায়াগনস্টিক টেস্ট করাতে গেলেন।
কিন্তু সেখানেও বিধিবাম। কারণ চিরাচরিত নিয়মের মারপ্যাঁচে পড়ে আপনার বাবার প্রয়োজনীয় টেস্টগুলো করাতে আপনাকে অনেকটা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে এরপর ল্যাব টেস্ট করাতে হবে। সেই টেস্টের রিপোর্ট সংগ্রহ করতে আবার ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে রোগীর নিজেকে অথবা আপনাকেই আবার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে, যা নিতান্তই সময়সাপেক্ষ ও দুর্বিষহ। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর জন্য তা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাপক দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তবে ল্যাব টেস্টকে সহজবোধ্য করতে বর্তমানে দেশের কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ঘরে বসেই নমুনা সংগ্রহের প্রথা চালু করেছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ল্যাব টেস্ট করানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা রীতিমত বৈপ্লবিক এক উদ্যোগ। দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গ্রাহকদের যাবতীয় ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে এসব প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এখন প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য মানুষের ভিড় ঠেলে হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে না। চাইলে পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘরে বসে আপনার কাক্সিক্ষত প্যাথলজি পরীক্ষার নমুনা দিতে পারেন। এরপর ই-মেইল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই পেয়ে যাবেন আপনার টেস্ট রিপোর্ট। রিপোর্ট পেতেও এখন আর পুনরায় টেস্ট কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে না। সর্বোপরি ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার সুবাদে এখন সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ফলে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কিংবা ল্যাব টেস্ট এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজবোধ্য ও ঝক্কি-ঝামেলামুক্ত। জানা গেছে, রোগীদের যাবতীয় মেডিকেল রেকর্ড পরিচালনা করাও এখন অনেক বেশি সহজ। বর্তমানে অধিকাংশ হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার মেডিকেল রেকর্ড নিয়মতান্ত্রিকভাবে ডেটাবেজে রাখতে নানাবিধ উন্নতমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করে। যা থেকে খুব সহজেই সব রোগীর মেডিকেল রেকর্ড সুশৃঙ্খলভাবে গুছিয়ে রাখতে পারদর্শী। এর ফলে এক রোগীর তথ্য অন্য রোগীর তথ্যের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সম্ভাব্যতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে রোগীদের ল্যাব টেস্ট ও রোগ নির্ণয় হয় আরও সহজ। অন্যদিকে প্রথাগত স্বাস্থ্যসেবায় সাধারণত রোগীদের অনেকের কাছেই নিজেদের মেডিকেল রেকর্ড থাকে না। আবার কখনো কখনো রোগীরা প্রেসক্রিপশন কিংবা ল্যাব টেস্ট ফাইল অসাবধানতাবশত হারিয়ে ফেলেন, যা পরে তাদের কাক্সিক্ষত সেবা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় আপনি নিজের প্রেসক্রিপশন আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটারেই সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এ ছাড়াও অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিংসহ আপনার ব্যক্তিগত মেডিকেল ডেটা নিজের মতো করে পরিচালনা করতে পারেন খুব সহজেই। রোগীরা এখন ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যে কোনো প্রাথমিক স্বাস্থ্য জটিলতায় হাসপাতালে ছুটে না গিয়ে নিজ ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা সাহায্য পেতে পারেন।
টেলিমেডিসিন সুবিধাও এ যুগে একটি নববিপ্লবের মতো ভূমিকা রাখছে। যা দূর-দূরান্তের স্বাস্থ্যসেবাকে এনেছে একদম হাতের মুঠোয়। মফস্বল কিংবা গ্রামীণ এলাকায় রোগীরা সাধারণত উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাবঞ্চিত থাকে, বিধায় নিয়মিতই তাদের নানাবিধ ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে বড় শহরে যেতে হয়। তবে বর্তমান যুগে শুধু একটি টেলিমেডিসিন অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইটের সাহায্যে আপনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারেন। এতে যেমন মূল্যবান সময় সাশ্রয় হবে, সেই সঙ্গে বাঁচবে অর্থও। দেশীয় প্রেক্ষাপটে হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অর্থ পরিশোধ করাও অনেকের কাছে এক আতঙ্কের নাম। মাঝেমধ্যেই মুমূর্ষু রোগীকে ভর্তি করানো কিংবা জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পেতে প্রয়োজন অতিসত্বর সেবাপ্রদানের নিশ্চয়তা। তবে প্রায়ই রোগীর স্বজনদের সে সময় হাসপাতালের কাউন্টারে টাকা জমা দিতে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় এখন চাইলেই আপনি ক্রেডিট কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। এতে একদিকে মূল্যবান সময় বেঁচে যাচ্ছে। অন্যদিকে রোগীর জীবনও বেঁচে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপ আজকাল গ্রাহকদের ওষুধ ডেলিভারির সুবিধাও দিচ্ছে। এসব অ্যাপের অধিকাংশেই থাকে ‘প্রেসক্রিপশন অ্যালার্ট’র অভিনব ব্যবস্থা। ফলে ঘরে আপনার বৃদ্ধ বাবা-মা কিংবা বাড়ির অন্য যে কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা আপনাদের অবর্তমানে নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ গ্রহণের কথা ভুলে গেলেও অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগে ঠিক করে রাখা সময়মতো সংকেত দিয়ে তা মনে করিয়ে দেবে। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত নানাবিধ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমান যুগে চোখে পড়ার মতো। এর ফলে চিকিৎসার কার্যকারিতা যেমন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে রোগীর সেবা-শুশ্রƒষার সঙ্গে সম্পর্কিত দায়িত্বগুলোও সহজবোধ্য হয়ে উঠেছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), কিংবা মেশিন লার্নিংয়ের (এমএল) মতো প্রযুক্তির ব্যবহার স্বাস্থ্যসেবা খাতকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। এটা নিতান্তই অনুমান করা যায় যে, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার প্রচলন এ দেশের লক্ষাধিক মানুষের জীবনকে অনেকটাই সহজ করে তুলেছে। তবে অনেকেই এখনো প্রথাগত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসুবিধা গ্রহণেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। যত দ্রুত আমরা সবাই আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার ইতিবাচক দিকগুলো বুঝতে পারব, দৈনন্দিন জীবনে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ হবে তত বেশি সহজবোধ্য ও ঝামেলামুক্ত।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা যে কারণে ব্যতিক্রম

আপডেট সময় : ১০:১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই ২০২২

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে রোগীদের প্রথম চাওয়া থাকে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় উপায়ে সেবাগ্রহণ করা। প্রথাগত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়াও সুবিধামতো সময়ে বেশিরভাগ সময়েই ডাক্তারের চেম্বারে যেতে পারেন না অনেকেই। এর পাশাপাশি শহরের চিরচেনা ট্রাফিক জ্যাম কিংবা তীব্র গরম তো আছেই। যা সহ্য করে হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পৌঁছানোও দুরূহ হয়ে পড়ে।
ভাবুন, আপনি আপনার বৃদ্ধ বাবাকে সঙ্গে করে জ্যাম, গরম এবং মানুষের ভিড়ের দুর্ভোগ পেরিয়ে অবশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে সমর্থ হলেন। এরপর তার পরামর্শমতো আপনার বাবার জন্য বেশকিছু ডায়াগনস্টিক টেস্ট করাতে গেলেন।
কিন্তু সেখানেও বিধিবাম। কারণ চিরাচরিত নিয়মের মারপ্যাঁচে পড়ে আপনার বাবার প্রয়োজনীয় টেস্টগুলো করাতে আপনাকে অনেকটা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে এরপর ল্যাব টেস্ট করাতে হবে। সেই টেস্টের রিপোর্ট সংগ্রহ করতে আবার ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে রোগীর নিজেকে অথবা আপনাকেই আবার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে, যা নিতান্তই সময়সাপেক্ষ ও দুর্বিষহ। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর জন্য তা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাপক দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তবে ল্যাব টেস্টকে সহজবোধ্য করতে বর্তমানে দেশের কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ঘরে বসেই নমুনা সংগ্রহের প্রথা চালু করেছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ল্যাব টেস্ট করানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা রীতিমত বৈপ্লবিক এক উদ্যোগ। দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গ্রাহকদের যাবতীয় ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে এসব প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এখন প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য মানুষের ভিড় ঠেলে হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে না। চাইলে পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘরে বসে আপনার কাক্সিক্ষত প্যাথলজি পরীক্ষার নমুনা দিতে পারেন। এরপর ই-মেইল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই পেয়ে যাবেন আপনার টেস্ট রিপোর্ট। রিপোর্ট পেতেও এখন আর পুনরায় টেস্ট কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে না। সর্বোপরি ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার সুবাদে এখন সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ফলে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কিংবা ল্যাব টেস্ট এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজবোধ্য ও ঝক্কি-ঝামেলামুক্ত। জানা গেছে, রোগীদের যাবতীয় মেডিকেল রেকর্ড পরিচালনা করাও এখন অনেক বেশি সহজ। বর্তমানে অধিকাংশ হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার মেডিকেল রেকর্ড নিয়মতান্ত্রিকভাবে ডেটাবেজে রাখতে নানাবিধ উন্নতমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করে। যা থেকে খুব সহজেই সব রোগীর মেডিকেল রেকর্ড সুশৃঙ্খলভাবে গুছিয়ে রাখতে পারদর্শী। এর ফলে এক রোগীর তথ্য অন্য রোগীর তথ্যের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সম্ভাব্যতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে রোগীদের ল্যাব টেস্ট ও রোগ নির্ণয় হয় আরও সহজ। অন্যদিকে প্রথাগত স্বাস্থ্যসেবায় সাধারণত রোগীদের অনেকের কাছেই নিজেদের মেডিকেল রেকর্ড থাকে না। আবার কখনো কখনো রোগীরা প্রেসক্রিপশন কিংবা ল্যাব টেস্ট ফাইল অসাবধানতাবশত হারিয়ে ফেলেন, যা পরে তাদের কাক্সিক্ষত সেবা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় আপনি নিজের প্রেসক্রিপশন আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটারেই সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এ ছাড়াও অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিংসহ আপনার ব্যক্তিগত মেডিকেল ডেটা নিজের মতো করে পরিচালনা করতে পারেন খুব সহজেই। রোগীরা এখন ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যে কোনো প্রাথমিক স্বাস্থ্য জটিলতায় হাসপাতালে ছুটে না গিয়ে নিজ ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা সাহায্য পেতে পারেন।
টেলিমেডিসিন সুবিধাও এ যুগে একটি নববিপ্লবের মতো ভূমিকা রাখছে। যা দূর-দূরান্তের স্বাস্থ্যসেবাকে এনেছে একদম হাতের মুঠোয়। মফস্বল কিংবা গ্রামীণ এলাকায় রোগীরা সাধারণত উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাবঞ্চিত থাকে, বিধায় নিয়মিতই তাদের নানাবিধ ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে বড় শহরে যেতে হয়। তবে বর্তমান যুগে শুধু একটি টেলিমেডিসিন অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইটের সাহায্যে আপনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারেন। এতে যেমন মূল্যবান সময় সাশ্রয় হবে, সেই সঙ্গে বাঁচবে অর্থও। দেশীয় প্রেক্ষাপটে হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অর্থ পরিশোধ করাও অনেকের কাছে এক আতঙ্কের নাম। মাঝেমধ্যেই মুমূর্ষু রোগীকে ভর্তি করানো কিংবা জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পেতে প্রয়োজন অতিসত্বর সেবাপ্রদানের নিশ্চয়তা। তবে প্রায়ই রোগীর স্বজনদের সে সময় হাসপাতালের কাউন্টারে টাকা জমা দিতে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় এখন চাইলেই আপনি ক্রেডিট কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। এতে একদিকে মূল্যবান সময় বেঁচে যাচ্ছে। অন্যদিকে রোগীর জীবনও বেঁচে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপ আজকাল গ্রাহকদের ওষুধ ডেলিভারির সুবিধাও দিচ্ছে। এসব অ্যাপের অধিকাংশেই থাকে ‘প্রেসক্রিপশন অ্যালার্ট’র অভিনব ব্যবস্থা। ফলে ঘরে আপনার বৃদ্ধ বাবা-মা কিংবা বাড়ির অন্য যে কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা আপনাদের অবর্তমানে নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ গ্রহণের কথা ভুলে গেলেও অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগে ঠিক করে রাখা সময়মতো সংকেত দিয়ে তা মনে করিয়ে দেবে। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত নানাবিধ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমান যুগে চোখে পড়ার মতো। এর ফলে চিকিৎসার কার্যকারিতা যেমন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে রোগীর সেবা-শুশ্রƒষার সঙ্গে সম্পর্কিত দায়িত্বগুলোও সহজবোধ্য হয়ে উঠেছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), কিংবা মেশিন লার্নিংয়ের (এমএল) মতো প্রযুক্তির ব্যবহার স্বাস্থ্যসেবা খাতকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। এটা নিতান্তই অনুমান করা যায় যে, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার প্রচলন এ দেশের লক্ষাধিক মানুষের জীবনকে অনেকটাই সহজ করে তুলেছে। তবে অনেকেই এখনো প্রথাগত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসুবিধা গ্রহণেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। যত দ্রুত আমরা সবাই আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার ইতিবাচক দিকগুলো বুঝতে পারব, দৈনন্দিন জীবনে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ হবে তত বেশি সহজবোধ্য ও ঝামেলামুক্ত।