ড. মতিউর রহমান :বর্তমান যুগ ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ই-বুক ও অডিওবুকের জনপ্রিয়তা আমাদের পাঠাভ্যাসে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ই-রিডারের মতো ডিভাইসের সহজলভ্যতা মানুষকে দ্রুত এবং সহজে জ্ঞান আহরণ করতে সহায়তা করেছে। তবে, এই প্রযুক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি একটি বিষয় গভীরভাবে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে—মুদ্রিত বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। মুদ্রিত বই, যা শত শত বছর ধরে মানবজ্ঞান ও সংস্কৃতির ধারক হিসেবে কাজ করে আসছে, আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলনামূলকভাবে কম আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
মুদ্রিত বইয়ের ইতিহাস মানব সভ্যতার জ্ঞানার্জন এবং এর বিস্তারে একটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। জোহান গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রেসের আবিষ্কার চৌদ্দ শতকের শেষদিকে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বই প্রকাশনা সহজ হয়ে যায়, যার ফলে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত হয়। গুটেনবার্গের আগে বই তৈরি হতো হাতে লিখে, যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ছিল। প্রিন্টিং প্রেস এই প্রক্রিয়াকে সুলভ ও দ্রুত করে তোলে, এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্ঞানের প্রসার ঘটতে শুরু করে।
মুদ্রিত বই কেবল জ্ঞানের ধারক নয়, বরং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও বাহক। প্রতিটি বই একটি নির্দিষ্ট সময়, সমাজ, এবং সংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরে। বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্য ধারার বিকাশে মুদ্রিত বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি গ্রন্থাগারগুলো এই ঐতিহ্যের সংরক্ষণের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।
গ্রন্থাগারগুলোর কথা বলতে গেলে, মুদ্রিত বই সেখানে জ্ঞানের সংরক্ষণে এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। পৃথিবীর বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলো, যেমন আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগার থেকে শুরু করে আজকের ডিজিটাল গ্রন্থাগার, মুদ্রিত বইকে মানুষের সৃজনশীল চিন্তা এবং গবেষণার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। মুদ্রিত বই কেবল তথ্য সংরক্ষণ করে না, এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। ডিজিটাল প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন, মুদ্রিত বইয়ের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অমলিন থাকবে।
ডিজিটাল যুগে ই-বুক ও অডিওবুকের উদ্ভাবন বই পড়ার অভ্যাসে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ই-বুকের সুবিধা হলো এর সহজলভ্যতা এবং বহনযোগ্যতা; একটি ছোট ডিভাইসে হাজার হাজার বই সংরক্ষণ করা সম্ভব, যা পাঠককে যে কোনো সময় ও স্থানে বই পড়ার সুযোগ দেয়। একইভাবে, অডিওবুক শুনে বই পড়ার অভিজ্ঞতা পরিবর্তন করেছে, বিশেষ করে যারা ভ্রমণরত বা সময়ের অভাবে বই পড়তে পারেন না, তাদের জন্য এটি একটি বিশেষ সুবিধা। অডিওবুক শোনার মাধ্যমে পাঠক তার শারীরিক কাজকর্মের পাশাপাশি বইয়ের বিষয়বস্তু শোনার সুযোগ পায়, যা সময় সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক।
তবে, ই-বুক ও অডিওবুকেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একদিকে, স্ক্রিনের উপর অতিরিক্ত সময় কাটানো চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষত দীর্ঘ সময় ধরে একটানা পড়ার ফলে চোখে চাপ পড়ে এবং মাথাব্যথা দেখা দেয়। এর পাশাপাশি, স্ক্রিন ফ্যাটিগের সমস্যা হতে পারে, যেখানে একটানা স্ক্রিন দেখে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। মুদ্রিত বইয়ের তুলনায় ডিজিটাল বই পড়ার সময় মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া অনেক বেশি সম্ভব, কারণ পঠন অভিজ্ঞতাটি পুরোপুরি স্ক্রিনে সীমাবদ্ধ, যেখানে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, সামাজিক মিডিয়া নোটিফিকেশন, এবং অন্যান্য ডিসট্রাকশন মনোযোগ বিভ্রান্ত করতে পারে।
ডিজিটাল মাধ্যমের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকিও প্রকট হতে পারে। প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে যেমন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, ডিভাইসের ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়া, অথবা সফটওয়্যার সমস্যা তৈরি হওয়া ইত্যাদি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। এ ছাড়া, ডিজিটাল বইয়ের মাধ্যমে পাঠক অনেক সময় বইয়ের মূল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়, কারণ এটি শারীরিকভাবে স্পর্শ এবং অভিজ্ঞতার জন্য আরও কম সুযোগ সৃষ্টি করে। অতএব, যদিও ডিজিটাল মাধ্যম সুবিধাজনক, তা মুদ্রিত বইয়ের অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়, যেখানে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত থাকে এবং পাঠের প্রক্রিয়া অনেক গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
মুদ্রিত বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর পাঠের গভীরতা এবং ধীরগতির অভিজ্ঞতা। যখন আমরা একটি মুদ্রিত বই পড়ি, তখন এটি আমাদের মনোযোগ এবং সময়ের সম্পূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণ করে। পৃষ্ঠা ওয়ার্কিং থেকে শব্দের গভীরে পৌঁছানো, প্রতিটি পঙ্ক্তি, শব্দ এবং বাক্য বুঝতে আমাদের একটি নির্দিষ্ট গতি অনুসরণ করতে হয়। এটি ডিজিটাল মাধ্যমের তুলনায় একেবারেই আলাদা অভিজ্ঞতা, যেখানে স্ক্রীন স্ক্রলিং বা পেজ টার্নিংয়ের মধ্যে পাঠক অনেক সময় তাড়াহুড়ো করতে পারেন। মুদ্রিত বইয়ে আমরা আস্তে আস্তে, চিন্তাভাবনা করে এবং বিশ্লেষণ করে পড়তে পারি, যা তথ্য এবং অভিজ্ঞতা অর্জনে একটি গভীরতর পথ সৃষ্টি করে।
শারীরিক সংবেদন এবং মুদ্রিত বইয়ের গন্ধ ও স্পর্শও একটি অনন্য অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে। বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় যে সংবেদন হয়, তা অনেক পাঠকের কাছে অদ্ভুতভাবে সন্তোষজনক। পৃষ্ঠাগুলোর গন্ধ, কাগজের অনুভূতি, বইটির ওজন এবং কভার স্পর্শ করা—এসব অনুভূতি এক ধরনের প্রাচীন, প্রাকৃতিক সংযোগ সৃষ্টি করে, যা ডিজিটাল বইয়ে অনুপস্থিত। বইটি হাতে নেওয়ার সাথে সাথে তার জগতে প্রবেশ করার অনুভূতি সত্যিকারভাবে মুদ্রিত বইয়ের আকর্ষণ বৃদ্ধি করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চোখের জন্য আরামদায়ক এবং দীর্ঘ পাঠে সহায়ক হওয়া। মুদ্রিত বইয়ের পৃষ্ঠা পড়া আমাদের চোখের ওপর চাপ কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ার ক্ষেত্রে। স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় ধরে চোখ রাখতে অনেক সময় চোখে তীব্র চাপ এবং অস্বস্তি সৃষ্টি হয়, কিন্তু মুদ্রিত বইয়ে চোখ স্বাভাবিকভাবে আরামদায়ক থাকে। যেহেতু এটি কোনো ডিজিটাল স্ক্রীন নয়, ফলে চোখের জন্য অনেক বেশি আরামদায়ক, এবং দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে সহায়ক। এই কারণে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে পড়তে চান, তাদের জন্য মুদ্রিত বই এখনও একটি জনপ্রিয় এবং পছন্দসই মাধ্যম হিসেবে রয়ে গেছে।
এই সব কারণেই মুদ্রিত বইয়ের অভিজ্ঞতা আজও অপরিহার্য এবং অন্য কোনো মাধ্যমের তুলনায় আলাদা, বিশেষ করে যখন গভীর মনোযোগ এবং চিন্তার প্রয়োজন হয়।
মুদ্রিত বই পড়া মানসিক এবং জ্ঞানীয় বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ডিজিটাল বইয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। মুদ্রিত বই পড়ার মাধ্যমে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়, কারণ এটি পাঠকের মনোযোগকে পুরোপুরি আকর্ষণ করে এবং ধারাবাহিকভাবে তথ্য মনে রাখার জন্য সাহায্য করে। মুদ্রিত বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময়, পাঠক তথ্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং প্রতিটি অধ্যায় বা প্যারাগ্রাফ বুঝতে মনোযোগী হয়, যা স্মৃতিতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্থান পায়। এই প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক, কারণ এটি মস্তিষ্কের নানা অংশকে সক্রিয় রাখে এবং স্মৃতির কার্যক্রমকে উদ্দীপ্ত করে।
মুদ্রিত বই পড়া মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। বই পড়তে গিয়ে পাঠককে একাগ্র মনোযোগ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয়। এই মনোযোগী অবস্থায়, পাঠক অন্য কোনো বৈচিত্র্যময় চিন্তা বা ব্যাপারে বিভ্রান্ত হতে পারেন না, যা স্ক্রীন বা ডিজিটাল মাধ্যমের সাথে যুক্ত থাকে। মুদ্রিত বইয়ের অভিজ্ঞতা মনোযোগের গতি এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, যার ফলে পাঠক দীর্ঘ সময় ধরে একটি বিষয় নিয়ে ভাবতে পারেন এবং চিন্তার মধ্যে গভীরতা আনতে সক্ষম হন। এই ধরনের মনোযোগী অবস্থায়, তথ্যের মধ্যে লুকানো সম্পর্ক, প্যাটার্ন বা দৃষ্টিভঙ্গি বের করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া, মুদ্রিত বই পড়ার মাধ্যমে সৃজনশীল চিন্তা এবং কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি পায়। বইয়ের মাধ্যমে আমরা এমন জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি, যা আমাদের নিজস্ব বাস্তবতা থেকে অনেক আলাদা। বিভিন্ন কল্পকাহিনি, উপন্যাস, কবিতা বা ঐতিহাসিক ঘটনা পড়ে আমাদের কল্পনা শক্তি প্রসারিত হয়, যা আমাদের সৃজনশীল চিন্তা এবং সমস্যা সমাধানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে সহায়ক। বইয়ের মাধ্যমে এমন এক পৃথিবীকে আমরা আবিষ্কার করি, যা আমাদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতার বাইরে, এবং এটি আমাদের চিন্তাভাবনাকে আরও বিস্তৃত এবং প্রগতিশীল করে তোলে। মুদ্রিত বইয়ের এই বিশেষ গুণগুলি, যেগুলো ডিজিটাল মাধ্যমের মাধ্যমে পাওয়া যায় না, আমাদের মানসিক বিকাশ এবং সৃজনশীল চিন্তা প্রসারে অমূল্য অবদান রাখে।
মুদ্রিত বই শুধু ব্যক্তিগত জ্ঞানের ক্ষেত্রেই নয়, এটি সামাজিক সম্পর্ক গড়ার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। বই বিনিময় একটি পুরোনো প্রথা, যা সমাজের মধ্যে বন্ধন এবং সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। একে অপরের কাছে বই ভাগাভাগি করা, বিশেষত পাঠ্যসূচি বা পছন্দের বইগুলো, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও সহানুভূতির সেতুবন্ধন তৈরি করে। পাঠকরা একে অপরের সঙ্গে বই নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, যা চিন্তাভাবনা, মনোভাব এবং সংস্কৃতির ওপর একটি অভ্যন্তরীণ সংলাপ শুরু করে। এই ধরনের বিনিময়ের মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং একে অপরের জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বইগুলো, যা আমাদের চিন্তা ও অভিজ্ঞতা গড়ে তোলে, তাদের মাধ্যমে বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
পরিবেশগত দিক থেকে, মুদ্রিত বই অনেক সময় পরিবেশ বান্ধব হতে পারে, বিশেষ করে যখন সেগুলো পুনঃব্যবহারযোগ্য কাগজ থেকে তৈরি হয়। বইগুলি দীর্ঘস্থায়ীভাবে সংরক্ষণযোগ্য এবং একবার প্রাপ্তির পর একাধিক বার ব্যবহৃত হতে পারে, যা পরিবেশের ওপর কম চাপ ফেলে। যেখানে ডিজিটাল বই এবং ডিভাইস ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ খরচ এবং বৈদ্যুতিন বর্জ্য সৃষ্টি হয়, মুদ্রিত বই পরিবেশের জন্য একধরনের সুস্থ বিকল্প হতে পারে। সঠিকভাবে পুনঃচক্রণ এবং ব্যবহারের মাধ্যমে বইগুলি পরিবেশের ক্ষতি না করে সমাজে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারে।
বইয়ের সংরক্ষণ এবং উত্তরাধিকারের গুরুত্বও অত্যন্ত বড়। মুদ্রিত বই শুধু বর্তমান সময়ের জ্ঞানের ধারক নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্যও একটি মূল্যবান সম্পদ। গ্রন্থাগারে বা ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখা পুরানো বইগুলো, যারা অতীতে বিভিন্ন সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং দর্শন সম্পর্কে জানতেন, তাদের চিন্তা এবং ধারণা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপকারী হতে পারে। বইয়ের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারও রক্ষা করতে পারি। মুদ্রিত বইগুলো একটি জাতির পরিচয় এবং ঐতিহ্য বহন করে, যা ডিজিটাল মাধ্যমে সম্ভব নয়। তাই, বই সংরক্ষণ এবং তার উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
ডিজিটাল যুগে ই-বুক এবং অডিওবুকের উত্থান বই পড়ার অভ্যাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, তবে মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কখনোই কমে যায়নি। ডিজিটাল মাধ্যমের সুবিধার পাশাপাশি মুদ্রিত বইয়ের নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং মানসিক, সামাজিক, পরিবেশগত সুবিধাও অনস্বীকার্য। দুই মাধ্যমের সহাবস্থানে প্রতিটি পাঠকের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী বই পড়ার অভিজ্ঞতা নির্বাচনের সুযোগ থাকে, যা জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ এবং সংগ্রহের একটি সমৃদ্ধ দিক উন্মোচন করে।
জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব অমূল্য। বই আমাদের চিন্তা ও মনোভাবকে সমৃদ্ধ করে, গঠনমূলক দক্ষতা তৈরি করে এবং সাংস্কৃতিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করে। ডিজিটাল যুগের সুবিধাগুলোর মধ্যে মগ্ন থাকলেও, মুদ্রিত বইয়ের পাঠ আমাদের গুণগত ভাবে গভীর চিন্তা এবং একাগ্র মনোযোগের প্রশিক্ষণ দেয়, যা কেবল তথ্য ধারণের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। বই আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং মানুষের মধ্যে সংবেদনশীলতা ও সহানুভূতির সঞ্চার করে, যা মানবিক মূল্যবোধের মূল স্তম্ভ।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের এ ধরনের অভ্যাসকে সংরক্ষণ এবং প্রজন্মান্তরে সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি। বই শুধু জ্ঞানের আধার নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং চিন্তা ধারা সংরক্ষণের একটি মাধ্যম। আগামী প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে মুদ্রিত বইয়ের অভিজ্ঞতা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা তাদের মূল্যবোধ এবং চিন্তার গভীরতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারি, যা তাদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে। অতএব, মুদ্রিত বই কখনোই অপ্রাসঙ্গিক হবে না, বরং তা মানবিক বিকাশ এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রয়ে যাবে।
লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।