ঢাকা ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ডিজিটাল যুগের প্রতারক চক্র থেকে সাবধান

  • আপডেট সময় : ০৪:১৪:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

বিল্লাল বিন কাশেম : বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচলন এবং ডিজিটাল যুগের উন্নতির সাথে সাথে প্রতারণার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। একসময় যেখানে প্রতারণার মূল মাধ্যম ছিল ডাকঘর, টেলিফোন বা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপন, সেখানে এখন সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে প্রতারকদের অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ফলপ্রসূ প্রতারণার একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফেসবুক, বিশেষত ‘ব্লু টিক’ দেওয়ার নাম করে।

এই ব্লু টিক প্রতারক চক্রের কার্যক্রম ধীরে ধীরে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এদের প্রতারণা এতটাই সুশৃঙ্খল এবং সুসংগঠিত যে, প্রায় প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে এই চক্রের শিকার হচ্ছেন। আজকের গল্পটি সেই চক্রের ভয়াবহতা এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল। আমি এই চক্রের শিকার হওয়া অনেক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও তাদের জানানো সতর্কীকরণগুলো একত্র করে একটি সংকেত দিতে চাই; যাতে কেউ এই ফাঁদে পড়তে না পারেন।

ফেসবুকে ব্লু টিক দেওয়ার প্রলোভন: ফেসবুকে ব্লু টিক দেওয়ার নাম শুনলেই অনেকের মাথায় আসে একটি বিশেষ ধরনের প্রোফাইলের সাইন, যা সেই প্রোফাইলের মূল ব্যক্তির পরিচিতি এবং গুরুত্বকে নিশ্চিত করে। এই ব্লু টিক হলো ফেসবুকের অফিসিয়াল সিল যা নিশ্চিত করে যে প্রোফাইলটি আসল এবং পাবলিক ব্যক্তিত্ব বা প্রতিষ্ঠানের। সবার কাছে এই সিলটি একটি মর্যাদার চিহ্ন এবং অনেকেই ইচ্ছে করেন যে, তাদের প্রোফাইলেও এই ব্লু টিকটি যুক্ত হোক।

এ জন্য কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পাততে থাকে। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেয় যে, তারা খুব সহজে ব্লু টিক দিয়ে দিতে পারেন। এবং এজন্য কিছু টাকা সংগ্রহ করা হবে। যারা নিজেদের প্রোফাইলের জন্য এই ব্লু টিক চাইছেন, তারা খুব সহজেই এই প্রস্তাবের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একে একটি বৈধ সুযোগ মনে করেন এবং সঙ্গত কারণে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেন। তবে একবার টাকা পাঠানোর পর তাদের কোনো ব্লু টিক দেওয়া হয় না; বরং তারা নিঃস্ব হয়ে যান। পুরো চক্রটি এভাবে একের পর এক শিকার ধরে। বিশেষত যারা ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন, তাদের জন্য এই স্ক্যাম আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। কারণ তারা জানে না এই চক্রের অসাধু কার্যক্রম সম্পর্কে এবং প্রলোভনের শিকার হয়ে সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যান।

প্রতারণার কৌশল: প্রতারণার কৌশলগুলো অত্যন্ত সুনিপুণ এবং সাবলীল। প্রথমে প্রতারকরা ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে তাদের নিজেদের পরিচিতি অনুযায়ী একটি প্রোফাইল তৈরি করে। এরপরে তারা বিভিন্ন ব্যক্তিগত মেসেজ পাঠাতে শুরু করে; যাতে তারা জানায় যে, তারা ফেসবুকের সাথে যুক্ত এবং খুব সহজে ব্লু টিক দেওয়ার কাজ করতে পারেন। তারা নিজেদের ‘অফিশিয়াল পেজ’ হিসেবে দাবি করে এবং প্রলোভন দেন যে, কিছু টাকা দিলেই প্রোফাইলটি ব্লু টিক হবে।

কিছু ফেসবুক গ্রুপ বা পেজেও তারা নিয়মিত বিজ্ঞাপন চালায় এবং জানায় যে, ব্লু টিক দেওয়া সম্ভব। এমনকি তারা আপনাকে প্রমাণ হিসেবে তাদের অন্য শিকারদের স্ক্রিনশটও পাঠাতে পারে; যারা ইতোমধ্যেই ব্লু টিক পেয়ে গেছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তারা আবার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং ওই ব্যক্তি কখনো ব্লু টিক পান না। আর টাকা ফেরত পেতে চাইলে তারা হুমকি দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
এভাবে তারা দিনের পর দিন বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে থাকে এবং একসময়ে একটি বড় চক্র তৈরি হয়ে যায়। এই চক্রের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের কাজ চালিয়ে যায়, এবং তাদের প্রলোভন জাল বুনতে থাকে।

শিকারদের অভিজ্ঞতা: আমি জানি, আমার পরিচিতি মোটামুটি ৫০ জন মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এই ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্কতা প্রচার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। কিছু শিকার ইতোমধ্যে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আবার কেউ কেউ আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো যে, প্রতারকরা এতটাই সংগঠিত যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

উদাহরণস্বরূপ- আমার পরিচিত এক বন্ধু, যিনি নিজে একজন ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার, তার সাথে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। সে একজন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্লু টিক পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করে এবং কিছু টাকা পরিশোধ করে। প্রথমদিকে সবকিছু ভালোই ছিল, কিন্তু কিছুদিন পর সে বুঝতে পারে যে, সেই পেজ আর যোগাযোগ করছে না এবং তার টাকাও ফেরত পায়নি। শেষে এক সময়, পেজটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, সে একটি প্রতারণার শিকার হয়েছে। এরপর সে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও তারা বলেছিল যে, এটা এমন একটি অপরাধ যা ক্রস-বর্ডার অর্থনৈতিক অপরাধের মধ্যে পড়ে, তাই কঠিন হতে পারে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা: এই ধরনের প্রতারণা চক্রগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা এক প্রশ্নের উদ্রেক করে। কেউ কেউ বলেন, এই চক্রের সদস্যরা এমনভাবে সংগঠিত যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন। তবে একটি সুশৃঙ্খল এবং সুপরিকল্পিত তদন্তের মাধ্যমে তারা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতেন, তাহলে হয়তো এই প্রতারণার দৌরাত্ম্য কিছুটা কমানো সম্ভব হতো। তবে এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা; যা এখন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়োজন। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম আরো শক্তিশালী হওয়া দরকার। যারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তাদের যেন সুবিচার এবং প্রতিকার পাওয়া যায়, সেই জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমাদের করণীয়: এখন সবার জন্য সতর্কতা জরুরি। আমাদের উচিত, কোনো ধরনের প্রলোভনে পড়লে সাবধান হওয়া এবং যতটুকু সম্ভব, প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা। প্রথমে অবশ্যই, যদি কেউ ফেসবুকে বা অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্লু টিক দেওয়ার প্রলোভন দেয়, তবে তার প্রস্তাবিত পেজটি যাচাই করে দেখা উচিত। এমনকি, এক্ষেত্রে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকলে, সরাসরি ফেসবুকের অফিসিয়াল পেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কখনো কোনো অজানা ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠানো উচিত নয়। যদি আপনার কাছে কোনো প্রস্তাব আসে যা আপনার জন্য সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে তা অবিলম্বে রিপোর্ট করুন।
এখন সময় এসেছে যে, আমরা সবাই সচেতন হই এবং এই ধরনের প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে এই ধরনের চক্রের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা কেবল বেড়েই যাবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই জাল চক্রের হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে। লেখক: কবি, লেখক ও গল্পকার

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডিজিটাল যুগের প্রতারক চক্র থেকে সাবধান

আপডেট সময় : ০৪:১৪:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিল্লাল বিন কাশেম : বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচলন এবং ডিজিটাল যুগের উন্নতির সাথে সাথে প্রতারণার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। একসময় যেখানে প্রতারণার মূল মাধ্যম ছিল ডাকঘর, টেলিফোন বা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপন, সেখানে এখন সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে প্রতারকদের অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ফলপ্রসূ প্রতারণার একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফেসবুক, বিশেষত ‘ব্লু টিক’ দেওয়ার নাম করে।

এই ব্লু টিক প্রতারক চক্রের কার্যক্রম ধীরে ধীরে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এদের প্রতারণা এতটাই সুশৃঙ্খল এবং সুসংগঠিত যে, প্রায় প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে এই চক্রের শিকার হচ্ছেন। আজকের গল্পটি সেই চক্রের ভয়াবহতা এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল। আমি এই চক্রের শিকার হওয়া অনেক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও তাদের জানানো সতর্কীকরণগুলো একত্র করে একটি সংকেত দিতে চাই; যাতে কেউ এই ফাঁদে পড়তে না পারেন।

ফেসবুকে ব্লু টিক দেওয়ার প্রলোভন: ফেসবুকে ব্লু টিক দেওয়ার নাম শুনলেই অনেকের মাথায় আসে একটি বিশেষ ধরনের প্রোফাইলের সাইন, যা সেই প্রোফাইলের মূল ব্যক্তির পরিচিতি এবং গুরুত্বকে নিশ্চিত করে। এই ব্লু টিক হলো ফেসবুকের অফিসিয়াল সিল যা নিশ্চিত করে যে প্রোফাইলটি আসল এবং পাবলিক ব্যক্তিত্ব বা প্রতিষ্ঠানের। সবার কাছে এই সিলটি একটি মর্যাদার চিহ্ন এবং অনেকেই ইচ্ছে করেন যে, তাদের প্রোফাইলেও এই ব্লু টিকটি যুক্ত হোক।

এ জন্য কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পাততে থাকে। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেয় যে, তারা খুব সহজে ব্লু টিক দিয়ে দিতে পারেন। এবং এজন্য কিছু টাকা সংগ্রহ করা হবে। যারা নিজেদের প্রোফাইলের জন্য এই ব্লু টিক চাইছেন, তারা খুব সহজেই এই প্রস্তাবের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একে একটি বৈধ সুযোগ মনে করেন এবং সঙ্গত কারণে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেন। তবে একবার টাকা পাঠানোর পর তাদের কোনো ব্লু টিক দেওয়া হয় না; বরং তারা নিঃস্ব হয়ে যান। পুরো চক্রটি এভাবে একের পর এক শিকার ধরে। বিশেষত যারা ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন, তাদের জন্য এই স্ক্যাম আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। কারণ তারা জানে না এই চক্রের অসাধু কার্যক্রম সম্পর্কে এবং প্রলোভনের শিকার হয়ে সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যান।

প্রতারণার কৌশল: প্রতারণার কৌশলগুলো অত্যন্ত সুনিপুণ এবং সাবলীল। প্রথমে প্রতারকরা ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে তাদের নিজেদের পরিচিতি অনুযায়ী একটি প্রোফাইল তৈরি করে। এরপরে তারা বিভিন্ন ব্যক্তিগত মেসেজ পাঠাতে শুরু করে; যাতে তারা জানায় যে, তারা ফেসবুকের সাথে যুক্ত এবং খুব সহজে ব্লু টিক দেওয়ার কাজ করতে পারেন। তারা নিজেদের ‘অফিশিয়াল পেজ’ হিসেবে দাবি করে এবং প্রলোভন দেন যে, কিছু টাকা দিলেই প্রোফাইলটি ব্লু টিক হবে।

কিছু ফেসবুক গ্রুপ বা পেজেও তারা নিয়মিত বিজ্ঞাপন চালায় এবং জানায় যে, ব্লু টিক দেওয়া সম্ভব। এমনকি তারা আপনাকে প্রমাণ হিসেবে তাদের অন্য শিকারদের স্ক্রিনশটও পাঠাতে পারে; যারা ইতোমধ্যেই ব্লু টিক পেয়ে গেছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তারা আবার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং ওই ব্যক্তি কখনো ব্লু টিক পান না। আর টাকা ফেরত পেতে চাইলে তারা হুমকি দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
এভাবে তারা দিনের পর দিন বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে থাকে এবং একসময়ে একটি বড় চক্র তৈরি হয়ে যায়। এই চক্রের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের কাজ চালিয়ে যায়, এবং তাদের প্রলোভন জাল বুনতে থাকে।

শিকারদের অভিজ্ঞতা: আমি জানি, আমার পরিচিতি মোটামুটি ৫০ জন মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এই ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্কতা প্রচার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। কিছু শিকার ইতোমধ্যে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আবার কেউ কেউ আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো যে, প্রতারকরা এতটাই সংগঠিত যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

উদাহরণস্বরূপ- আমার পরিচিত এক বন্ধু, যিনি নিজে একজন ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার, তার সাথে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। সে একজন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্লু টিক পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করে এবং কিছু টাকা পরিশোধ করে। প্রথমদিকে সবকিছু ভালোই ছিল, কিন্তু কিছুদিন পর সে বুঝতে পারে যে, সেই পেজ আর যোগাযোগ করছে না এবং তার টাকাও ফেরত পায়নি। শেষে এক সময়, পেজটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, সে একটি প্রতারণার শিকার হয়েছে। এরপর সে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও তারা বলেছিল যে, এটা এমন একটি অপরাধ যা ক্রস-বর্ডার অর্থনৈতিক অপরাধের মধ্যে পড়ে, তাই কঠিন হতে পারে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা: এই ধরনের প্রতারণা চক্রগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা এক প্রশ্নের উদ্রেক করে। কেউ কেউ বলেন, এই চক্রের সদস্যরা এমনভাবে সংগঠিত যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন। তবে একটি সুশৃঙ্খল এবং সুপরিকল্পিত তদন্তের মাধ্যমে তারা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতেন, তাহলে হয়তো এই প্রতারণার দৌরাত্ম্য কিছুটা কমানো সম্ভব হতো। তবে এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা; যা এখন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়োজন। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম আরো শক্তিশালী হওয়া দরকার। যারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তাদের যেন সুবিচার এবং প্রতিকার পাওয়া যায়, সেই জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমাদের করণীয়: এখন সবার জন্য সতর্কতা জরুরি। আমাদের উচিত, কোনো ধরনের প্রলোভনে পড়লে সাবধান হওয়া এবং যতটুকু সম্ভব, প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা। প্রথমে অবশ্যই, যদি কেউ ফেসবুকে বা অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্লু টিক দেওয়ার প্রলোভন দেয়, তবে তার প্রস্তাবিত পেজটি যাচাই করে দেখা উচিত। এমনকি, এক্ষেত্রে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকলে, সরাসরি ফেসবুকের অফিসিয়াল পেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কখনো কোনো অজানা ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠানো উচিত নয়। যদি আপনার কাছে কোনো প্রস্তাব আসে যা আপনার জন্য সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে তা অবিলম্বে রিপোর্ট করুন।
এখন সময় এসেছে যে, আমরা সবাই সচেতন হই এবং এই ধরনের প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে এই ধরনের চক্রের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা কেবল বেড়েই যাবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই জাল চক্রের হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে। লেখক: কবি, লেখক ও গল্পকার