ঢাকা ০৪:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল : কমিশনার

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

সোমবার ঢাকার মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত বিশৃঙ্খল মন্তব্য করে আইন না মানার প্রবণতা এবং রাস্তা ও ফুটপাত দখলকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে সড়কে স্বাভাবিকভাবে নগরবাসীর চলাচলের সুযোগ অচিরেই কমে যাবে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ মো. সাজ্জাত আলী ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে পুলিশের ভূমিকার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, অত্যন্ত বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। যারা রাস্তা ব্যবহার করেন তারা ট্রাফিক আইন মানতে চান না। হকাররা ফুটপাত দখল করে রেখেছে, এখন বাইরে রাস্তাও দখল করে ব্যবহার করছে। এরূপ অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে।
ডিএমপির অনেক সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আদর্শ শহরে রাস্তা থাকা উচিৎ ২৫ ভাগ, সেখানে আমাদের রয়েছে ৭ ভাগ। রাস্তায় মোটরাইজড ভেইকেলের পাশাপাশি, ম্যানুয়ালি অপেরেটেড রিকশা রয়েছে। ইদানিং ব্যপকহারে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। গত সরকারের সময় এই রিকশাকে অনুমতি দেওয়ার কারণে প্রতিদিন হু হু করে সেই সংখ্যা বাড়ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাকে রোধ করা না গেলে অচিরেই এরূপ একটি শহর হবে, যেখানে বাসা থেকে বের হলেই আর মুভমেন্টের সুযোগ থাকবে না। সড়কের সীমিত স্পেস অটোরিকশা দখল করে নিবে, মানুষের মুভমেন্ট একদম বন্ধ হয়ে যাবে। আমি এ বিষয়ে সরকারের সাথে আলাপ করেছি, একটি ব্যবস্থাপনায় আনার জন্য অনুরোধ করেছি। সাজ্জাত আলীর ভাষ্য, ডিএমপি ট্রাফিক সমস্যা সমধানের যথেষ্ট মনোনিবেশ করেছে। এজন্য আগে যে হারে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য মামলা করা হত, এখন সেই দ্বিগুণ গতিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার পাশপাশি, শহরের ভাড়াটিয়া নাগরিকদের তাদের সন্তানের স্কুল বা নিজেদের কর্মস্থলের কাছাকাছি বাসা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন সাজ্জাত আলী। এক প্রশ্নে ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, ট্রাফিকের বিষয়টি সামনে আনার কারণ হল আপনারা নিত্যদিন এর শিকার হচ্ছেন। একজন মানুষের উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে, ফেরত যেতে আবার একই সময়। তাহলে তিনি কাজটা করবেন কখন, উনিতো রাস্তাতেই থাকছেন। ট্রাফিক ঠিক হয়ে গেলে ৩৬ হাজার কোটি টাকা জিডিপিতে যোগ হত। কী পরিমাণ অপচয় হচ্ছে আমাদের! বিদেশ থেকে মেহমান এসে কী দৃশ্য দেখছেন? তিনি কেন এখানে বিনিয়োগ করবেন? ট্রাফিক আমাদের ফোকাল পয়েন্টে, কারণ এটাই মিরর অব দ্য সিটি।
ছিনতাই বন্ধে ডিবি ও থানা পুলিশ সক্রিয়: প্রায় দুই কোটি জনবসতির এই শহরে ঢাকায় সীমিত রিসোর্স নিয়ে ডিএমপি সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সাজ্জাত হোসেন। সরকার পতনের পরবর্তী পরস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরে যখন পুলিশ অনেকটাই ইনএকটিভ হয়ে পড়ে তখন ঢাকায় সমানে ডাকাতি খুন, ছিনতাই, লুটপাট শুরু হয়ে যায়। রাতে বিভিন্ন মহল্লায় অনেক মহিলাকেও লাঠি নিয়ে পাহারা দিতে দেখেছি, ৮০ বছরের বৃদ্ধকেও পাহারা দিতে দেখেছি। ঢাকা মহানগর পুলিশ সম্পূর্ণ ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা ওই অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে পেরেছি। ঢাকায় অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধ করতে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করেছি যাতে এটি রোধ করা সম্ভব হয়। কাউকে চাঁদা না দেওয়ার অনুরোধ রেখে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা চাঁদা দিবেন না, যারা চাঁদা নিতে আসে তারা কী করে আমরা দেখতে চাই। আমরা সক্রিয় আছি, চাঁদাবাজির জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। শিগগিরই এক্ষেত্রে অনেকটা উন্নতি হয়ে গেছে। ডিবির বাইরে ক্রাইম নিয়ে কাজ করে আরও আটটি ইউনিট। তাদেরকে অ্যাকটিভ করার জন্য বলেছি। ৫ আগস্টের পরের পরিস্থিতিতো নাই। পরিস্থাতির উন্নতি হয়েছে। ঢাকাবাসীর অভিযোগ জানতে আগামীতে ‘কমপ্লেইন বক্স’ স্থাপন এবং ‘ওপেন ডে’ আলোচনা শুরু হবে বলে জানান সাজ্জাত আলী।
সংবাদ সস্মেলনে মামলা বাণিজ্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে যে মামলাগুলো থানায় হল আগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তার অধিকাংশই হয়েছে কোর্টের নির্দেশে। মামলায় আসামির সংখ্যা ২০০ বেশি। এখন সবাইতো ঘটনায় জড়িত না, হয়তো গুটিকয়েক লোক জড়িত। এখন ওই মামলার বাদী সব আসামির কাছে গিয়ে গিয়ে টাকা চাচ্ছে। তারাই উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামির নাম দিয়েছে চাঁদাবাজি বাণিজ্য করার জন্য। আমার লোকও সব ভালো তা না, আমার লোকেরাও এর সাথে জড়িত। উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজনের বিরুদ্ধে গতকাল (রোববার) ব্যবস্থা নিয়েছি।
সাজ্জাত আলী বলেন, আমি রেভিনিউ, ভ্যাট বা ট্যাক্স কালেক্টর নই। আমি সেবক, আমার কাজ ঢাকাবাসীকে সেবা দেওয়া। তেজগাঁও থানায় ৫০০ মামলা হোক, আমি জবাব দিব। জিডি হোক, ওসিদের বলেছি কোনো ঘটনা যেন হাইড করা না হয়। মামলায় নিয়ে কালক্ষেপণ কমাতে নতুন একটি উদ্যোগ নিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আরেকটি বিষয় আমি ১০-১৫ দিনের মধ্যে কার্যকর করতে চাই। জিডির ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার পর পুলিশ সদস্যরা রেসপন্স করেন। আমি চাই তারা যেন ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যেই যান। গিয়ে যদি মামলার মত ঘটনা হয়, তাহলে ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে এসে মামলা নিবে। এটার উদ্দেশ্য থানায় গিয়ে যে জিডি করলেন, সেটার রেসপন্স টাইম কমিয়ে আনতে চাই। তিনি বলেছেন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুলিশের কিছু সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের ছত্রছায়ায় মাদক বাণিজ্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ওসির সাথে ড্রাগ ডিলারের লিঁয়াজো রয়েছে, এমন একটা প্রমাণ নিয়ে আসেন। তারপর ওসির ভাগ্যে কী ঘটে দেখেন না। আমিতো আপনাদের সহযোগিতা চাই। মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটা মাদক ডিপার্টমেন্টে করেন। এটা আমাদের মূল কাজ না, তাও আমরা করছি।
আসন্ন বিজয় দিবস ও থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, আমরা সবগুলো নিয়েই কাজ করছি। ছোটখাট থ্রেট থাকলেতো আর আমদের উৎসব থামিয়ে দেওয়া যাবে না। উৎসব উদযাপনে ডিএমপি পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন এই কমিশনার।
ক্ষমা চাইলেন ডিএমপি কমিশনার: জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে পুলিশের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, সে কাজের জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। ঢাকা তথা দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে পুলিশের তরফ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন আইজিপি বাহারুল আলম। পুলিশ নতুনভাবে কাজ শুরু করেছে জানিয়ে সাজ্জাত আলী বলেন, ডিএমপির ওই সময়ের যেসব কর্মকর্তা অপেশাদারিত্বের সাথে কাজ করেছে অনেককে বদলি করা হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা নতুন ভাবে কাজ শুরু করেছি, এজন্য ঢাকাবাসীর সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত ১৫ বছরে যে রিক্রুটমেন্ট হয়েছে, নানাভাবে তাদের ছেঁকে নেওয়া হয়েছে। সে কোন দলের লোক, তার বাবা কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তার দাদা বা পূর্বপুরুষের খবর নেওয়া হয়েছে। মোট প্রায় ২ লাখ পুলিশ হলে ৮০-৯০ হাজার এমনভাবে রিক্রুট হয়েছে। এখন তাদেরকেতো বলতে পারিনা গো হোম।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল : কমিশনার

আপডেট সময় : ০৪:৩৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত বিশৃঙ্খল মন্তব্য করে আইন না মানার প্রবণতা এবং রাস্তা ও ফুটপাত দখলকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে সড়কে স্বাভাবিকভাবে নগরবাসীর চলাচলের সুযোগ অচিরেই কমে যাবে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ মো. সাজ্জাত আলী ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে পুলিশের ভূমিকার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, অত্যন্ত বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। যারা রাস্তা ব্যবহার করেন তারা ট্রাফিক আইন মানতে চান না। হকাররা ফুটপাত দখল করে রেখেছে, এখন বাইরে রাস্তাও দখল করে ব্যবহার করছে। এরূপ অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে।
ডিএমপির অনেক সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আদর্শ শহরে রাস্তা থাকা উচিৎ ২৫ ভাগ, সেখানে আমাদের রয়েছে ৭ ভাগ। রাস্তায় মোটরাইজড ভেইকেলের পাশাপাশি, ম্যানুয়ালি অপেরেটেড রিকশা রয়েছে। ইদানিং ব্যপকহারে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। গত সরকারের সময় এই রিকশাকে অনুমতি দেওয়ার কারণে প্রতিদিন হু হু করে সেই সংখ্যা বাড়ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাকে রোধ করা না গেলে অচিরেই এরূপ একটি শহর হবে, যেখানে বাসা থেকে বের হলেই আর মুভমেন্টের সুযোগ থাকবে না। সড়কের সীমিত স্পেস অটোরিকশা দখল করে নিবে, মানুষের মুভমেন্ট একদম বন্ধ হয়ে যাবে। আমি এ বিষয়ে সরকারের সাথে আলাপ করেছি, একটি ব্যবস্থাপনায় আনার জন্য অনুরোধ করেছি। সাজ্জাত আলীর ভাষ্য, ডিএমপি ট্রাফিক সমস্যা সমধানের যথেষ্ট মনোনিবেশ করেছে। এজন্য আগে যে হারে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য মামলা করা হত, এখন সেই দ্বিগুণ গতিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার পাশপাশি, শহরের ভাড়াটিয়া নাগরিকদের তাদের সন্তানের স্কুল বা নিজেদের কর্মস্থলের কাছাকাছি বাসা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন সাজ্জাত আলী। এক প্রশ্নে ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, ট্রাফিকের বিষয়টি সামনে আনার কারণ হল আপনারা নিত্যদিন এর শিকার হচ্ছেন। একজন মানুষের উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে, ফেরত যেতে আবার একই সময়। তাহলে তিনি কাজটা করবেন কখন, উনিতো রাস্তাতেই থাকছেন। ট্রাফিক ঠিক হয়ে গেলে ৩৬ হাজার কোটি টাকা জিডিপিতে যোগ হত। কী পরিমাণ অপচয় হচ্ছে আমাদের! বিদেশ থেকে মেহমান এসে কী দৃশ্য দেখছেন? তিনি কেন এখানে বিনিয়োগ করবেন? ট্রাফিক আমাদের ফোকাল পয়েন্টে, কারণ এটাই মিরর অব দ্য সিটি।
ছিনতাই বন্ধে ডিবি ও থানা পুলিশ সক্রিয়: প্রায় দুই কোটি জনবসতির এই শহরে ঢাকায় সীমিত রিসোর্স নিয়ে ডিএমপি সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সাজ্জাত হোসেন। সরকার পতনের পরবর্তী পরস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরে যখন পুলিশ অনেকটাই ইনএকটিভ হয়ে পড়ে তখন ঢাকায় সমানে ডাকাতি খুন, ছিনতাই, লুটপাট শুরু হয়ে যায়। রাতে বিভিন্ন মহল্লায় অনেক মহিলাকেও লাঠি নিয়ে পাহারা দিতে দেখেছি, ৮০ বছরের বৃদ্ধকেও পাহারা দিতে দেখেছি। ঢাকা মহানগর পুলিশ সম্পূর্ণ ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা ওই অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে পেরেছি। ঢাকায় অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধ করতে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করেছি যাতে এটি রোধ করা সম্ভব হয়। কাউকে চাঁদা না দেওয়ার অনুরোধ রেখে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা চাঁদা দিবেন না, যারা চাঁদা নিতে আসে তারা কী করে আমরা দেখতে চাই। আমরা সক্রিয় আছি, চাঁদাবাজির জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। শিগগিরই এক্ষেত্রে অনেকটা উন্নতি হয়ে গেছে। ডিবির বাইরে ক্রাইম নিয়ে কাজ করে আরও আটটি ইউনিট। তাদেরকে অ্যাকটিভ করার জন্য বলেছি। ৫ আগস্টের পরের পরিস্থিতিতো নাই। পরিস্থাতির উন্নতি হয়েছে। ঢাকাবাসীর অভিযোগ জানতে আগামীতে ‘কমপ্লেইন বক্স’ স্থাপন এবং ‘ওপেন ডে’ আলোচনা শুরু হবে বলে জানান সাজ্জাত আলী।
সংবাদ সস্মেলনে মামলা বাণিজ্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে যে মামলাগুলো থানায় হল আগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তার অধিকাংশই হয়েছে কোর্টের নির্দেশে। মামলায় আসামির সংখ্যা ২০০ বেশি। এখন সবাইতো ঘটনায় জড়িত না, হয়তো গুটিকয়েক লোক জড়িত। এখন ওই মামলার বাদী সব আসামির কাছে গিয়ে গিয়ে টাকা চাচ্ছে। তারাই উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামির নাম দিয়েছে চাঁদাবাজি বাণিজ্য করার জন্য। আমার লোকও সব ভালো তা না, আমার লোকেরাও এর সাথে জড়িত। উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজনের বিরুদ্ধে গতকাল (রোববার) ব্যবস্থা নিয়েছি।
সাজ্জাত আলী বলেন, আমি রেভিনিউ, ভ্যাট বা ট্যাক্স কালেক্টর নই। আমি সেবক, আমার কাজ ঢাকাবাসীকে সেবা দেওয়া। তেজগাঁও থানায় ৫০০ মামলা হোক, আমি জবাব দিব। জিডি হোক, ওসিদের বলেছি কোনো ঘটনা যেন হাইড করা না হয়। মামলায় নিয়ে কালক্ষেপণ কমাতে নতুন একটি উদ্যোগ নিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আরেকটি বিষয় আমি ১০-১৫ দিনের মধ্যে কার্যকর করতে চাই। জিডির ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার পর পুলিশ সদস্যরা রেসপন্স করেন। আমি চাই তারা যেন ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যেই যান। গিয়ে যদি মামলার মত ঘটনা হয়, তাহলে ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে এসে মামলা নিবে। এটার উদ্দেশ্য থানায় গিয়ে যে জিডি করলেন, সেটার রেসপন্স টাইম কমিয়ে আনতে চাই। তিনি বলেছেন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুলিশের কিছু সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের ছত্রছায়ায় মাদক বাণিজ্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ওসির সাথে ড্রাগ ডিলারের লিঁয়াজো রয়েছে, এমন একটা প্রমাণ নিয়ে আসেন। তারপর ওসির ভাগ্যে কী ঘটে দেখেন না। আমিতো আপনাদের সহযোগিতা চাই। মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটা মাদক ডিপার্টমেন্টে করেন। এটা আমাদের মূল কাজ না, তাও আমরা করছি।
আসন্ন বিজয় দিবস ও থার্টি ফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, আমরা সবগুলো নিয়েই কাজ করছি। ছোটখাট থ্রেট থাকলেতো আর আমদের উৎসব থামিয়ে দেওয়া যাবে না। উৎসব উদযাপনে ডিএমপি পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন এই কমিশনার।
ক্ষমা চাইলেন ডিএমপি কমিশনার: জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে পুলিশের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, সে কাজের জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। ঢাকা তথা দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে পুলিশের তরফ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন আইজিপি বাহারুল আলম। পুলিশ নতুনভাবে কাজ শুরু করেছে জানিয়ে সাজ্জাত আলী বলেন, ডিএমপির ওই সময়ের যেসব কর্মকর্তা অপেশাদারিত্বের সাথে কাজ করেছে অনেককে বদলি করা হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা নতুন ভাবে কাজ শুরু করেছি, এজন্য ঢাকাবাসীর সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত ১৫ বছরে যে রিক্রুটমেন্ট হয়েছে, নানাভাবে তাদের ছেঁকে নেওয়া হয়েছে। সে কোন দলের লোক, তার বাবা কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তার দাদা বা পূর্বপুরুষের খবর নেওয়া হয়েছে। মোট প্রায় ২ লাখ পুলিশ হলে ৮০-৯০ হাজার এমনভাবে রিক্রুট হয়েছে। এখন তাদেরকেতো বলতে পারিনা গো হোম।