কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ : পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে ১৫০ মিলিয়ন (১৫ কোটি) মুসলমান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে বিশালসংখ্যক ডায়াবেটিক রোগী পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখছেন। রোজা রাখলে যেসব ডায়াবেটিক রোগীর জীবনের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদের রোজা না রাখাই উত্তম। যারা ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাদের রোজা রাখার ঝুঁকি; যারা ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসা করছেন, তাদের তুলনায় স্বাভাবিক কারণে বেশি। কারণ ইনসুলিনের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া।
ঝুঁকির নির্দিষ্ট ক্ষেত্র: রোগীর বয়স, ডায়াবেটিসের ধরন ও সময়কাল।
অন্যান্য রোগ, বিশেষ করে কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ, ইনসুলিনের মাত্রা, শরীরচর্চার ধরন ও সময়কাল ইত্যাদি ডায়াবেটিক রোগীদের বিপাক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া রোগীর রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবণতা এবং তা কমে গেলে উপলব্ধি করার ক্ষমতা থাকা বা না থাকার ওপর জীবনের ঝুঁকি নির্ভর করে। যারা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের ঝুঁকি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের তুলনায় বেশি। যারা ১০ বছরের বেশি ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। যারা ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করছেন, তাদের রোজা রাখার ঝুঁকি, যারা ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসা করছেন, তাদের তুলনায় স্বাভাবিক কারণে বেশি। কারণ, ইনসুলিনের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলেও যাদের এ সংক্রান্ত উপসর্গ উপলব্ধি করার ক্ষমতা কমে যায়, তারাও ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি। বারবার হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় আক্রান্ত হন বা রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়ায় যারা সাম্প্রতিক সময়ে অচেতন হয়েছেন কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তারা রমজানে রোজা রাখার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি।
ডায়াবেটিসের পাশাপাশি যাদের অন্যান্য ব্যাধি, বিশেষ করে কিডনি বিকল রয়েছে, তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খুব বেশি ওঠানামা করে। সে কারণে তারা ঝুঁকিপূর্ণ। গত তিন মাসে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কতটা রয়েছে, সেটি নির্ণয়ে রক্তের একটি পরীক্ষা রয়েছে। এটিকে বলা হয় এইচবিএ-১সি। এর মাত্রা যদি শতকরা ৯-এর বেশি থাকে, তবে তিনি ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি।
সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত সময় ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা রাখা কিছতা ঝুঁকিপূর্ণ। যারা কায়িক পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল, তাদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। আসন্ন রমজানে রোজা রাখার আগে ডায়াবেটিক রোগীদের এসব ঝুঁকি নির্ণয় করে নিতে হবে। যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তারা অবশ্যই রোজা রাখতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নিন। লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, বরিশাল