ঢাকা ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী আমলকী

  • আপডেট সময় : ০১:২৪:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৪
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নানান বিপাকীয় জটিলতায় ভুগছে। এরমধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। এই অবস্থার কারণে দেহে নানান ক্ষতি যেমন- হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, বৃক্কের সমস্যা, মাড়ির রোগ, স্নায়ুর ক্ষতি ও চোখের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- আমলকী শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় পুষ্টিবিদ ও দিল্লির ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অবনি কাউল জানান, ছোট গোলাকার সবুজ রংয়ের বেরি ধরনের ফল আমলকীর পাঁচ ধরনের স্বাদ যেমন- তিতা, মিষ্টি, কড়া, অ্যাস্ট্রিজান্ট ও টক পাওয়া যায়। এটা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের তিন ধরনের দশা যেমন- বাত, পিত্ত ও কফের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে।
যেভাবে আমলকী ডায়াবেটিকদের উপকার করে
আমলকী রক্তের শর্করার বিপাক বাড়ায়, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়। এটা অ্যান্টিঅক্সিজেন সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিকভাবে ইন্সুলিন নিরোধক হিসেবে কাজ করে। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি’তে প্রকাশিত ভারতের ‘গভ. মেডিকেল কলেজ বাডাউন’, যোধপুরের ‘অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস’ ও লাক্ষণৌয়ের ‘কিং জর্জ’স মেডিকেল ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণা থেকে জানা গেছে, আমলকী রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং বিপাক বাড়াতে সহায়তা করে যা রক্তের বাড়তি শর্করা শরীরের জমতে বাধা দেয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমলকী গ্রহণের উপায়
আমলকী পুষ্টির আধার। এটা নানা রকম স্বাস্থ্য উপকার যেমন- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমলকী খাবার তালিকায় যোগ করার কয়েকটি উপায়ের মধ্যে আছে-
আমলকীর জুস: আমলকীর তাজা রস ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকায় যোগ করা উপকারী। পুষ্টিবিদ অবনী বলেন, “সামান্য পরিমাণ আমলকীর রসের সাথে পানি মিশিয়ে খালি পেটে পান করা ভালো। এতে আছে আঁশ যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।”
আমলকীর গুঁড়া: নানান-ভাবে খাবার তালিকায় যোগ করা যায়। পানির সঙ্গে আমলকীর গুঁড়া মিশিয়ে অথবা সালাদ, দই বা অন্যান্য খাবারের ওপর আমলকীর গুঁড়া ছিটিয়ে খাবার তালিকায় যোগ করা যায়।। এটা শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
আমলকীর সম্পূরক: পুষ্টিবিদ অবনী বলেন, “আমলকীর সম্পূরক যেমন ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট সম্পূর্ণ প্রস্তুতকৃত অবস্থায় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তবে কোনো সম্পূরক গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে করে অন্য কোনো ওষুধের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
আমলকীর চা: শুকনা আমলকী টুকরা করে পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে সঙ্গে ডায়াবেটিস বান্ধব অন্য যে কোনো ভেষজ যেমন- দারুচিনি যোগ করা যেতে পারে।
আমলকী ও মেথির বীজ: মেথি বীজ রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সুপরিচিত। আমলকীর গুঁড়ার সাথে মেথি বীজের গুঁড়া মিশিয়ে পানির সাহায্যে পান করা অথবা খাবারে সামান্য পরিমাণ বীজের গুঁড়া ছিটিয়ে গ্রহণ করা যেতে পারে। এই যৌগ ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আমলকীর আচা: পুষ্টিবিদ অবনী কাউল বলেন, “আমলকীর আচার খাবার তালিকায় যোগ করার এক মজাদার উপায়। ঘরে তৈরি করা অথবা বাজারে আমলকীর আচার পাওয়া যায় যেখানে খুব কম পরিমাণে চিনি যোগ করা থাকে। আমলকী ও মসলার যৌগ চমৎকার স্বাদ সৃষ্টি করে যা খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
মনে রাখতে হবে
আমলকীকে সকলের জন্যই নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে খাবারে প্রতিষেধক হিসেবে আমলকী যোগ করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষত ডায়াবেটিকদের অথবা কোনো ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। আমলকী উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা ডায়াবেটিস প্রতিকারক হিসেবে কাজ করে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্পূর্ণ জীবনযাত্রার ধরনের ওপর নির্ভরশীল। তাই সুষম খাবার গ্রহ্ণ নিয়মিত শরীরচর্চা, ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যের দক্ষ যতেœর মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আমলকী ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী তবে কোনোভাবেই ওষুধের বিকল্প নয়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী আমলকী

আপডেট সময় : ০১:২৪:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৪

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নানান বিপাকীয় জটিলতায় ভুগছে। এরমধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। এই অবস্থার কারণে দেহে নানান ক্ষতি যেমন- হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, বৃক্কের সমস্যা, মাড়ির রোগ, স্নায়ুর ক্ষতি ও চোখের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- আমলকী শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় পুষ্টিবিদ ও দিল্লির ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অবনি কাউল জানান, ছোট গোলাকার সবুজ রংয়ের বেরি ধরনের ফল আমলকীর পাঁচ ধরনের স্বাদ যেমন- তিতা, মিষ্টি, কড়া, অ্যাস্ট্রিজান্ট ও টক পাওয়া যায়। এটা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের তিন ধরনের দশা যেমন- বাত, পিত্ত ও কফের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে।
যেভাবে আমলকী ডায়াবেটিকদের উপকার করে
আমলকী রক্তের শর্করার বিপাক বাড়ায়, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়। এটা অ্যান্টিঅক্সিজেন সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিকভাবে ইন্সুলিন নিরোধক হিসেবে কাজ করে। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি’তে প্রকাশিত ভারতের ‘গভ. মেডিকেল কলেজ বাডাউন’, যোধপুরের ‘অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস’ ও লাক্ষণৌয়ের ‘কিং জর্জ’স মেডিকেল ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণা থেকে জানা গেছে, আমলকী রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং বিপাক বাড়াতে সহায়তা করে যা রক্তের বাড়তি শর্করা শরীরের জমতে বাধা দেয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমলকী গ্রহণের উপায়
আমলকী পুষ্টির আধার। এটা নানা রকম স্বাস্থ্য উপকার যেমন- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমলকী খাবার তালিকায় যোগ করার কয়েকটি উপায়ের মধ্যে আছে-
আমলকীর জুস: আমলকীর তাজা রস ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকায় যোগ করা উপকারী। পুষ্টিবিদ অবনী বলেন, “সামান্য পরিমাণ আমলকীর রসের সাথে পানি মিশিয়ে খালি পেটে পান করা ভালো। এতে আছে আঁশ যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।”
আমলকীর গুঁড়া: নানান-ভাবে খাবার তালিকায় যোগ করা যায়। পানির সঙ্গে আমলকীর গুঁড়া মিশিয়ে অথবা সালাদ, দই বা অন্যান্য খাবারের ওপর আমলকীর গুঁড়া ছিটিয়ে খাবার তালিকায় যোগ করা যায়।। এটা শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
আমলকীর সম্পূরক: পুষ্টিবিদ অবনী বলেন, “আমলকীর সম্পূরক যেমন ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট সম্পূর্ণ প্রস্তুতকৃত অবস্থায় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তবে কোনো সম্পূরক গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে করে অন্য কোনো ওষুধের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
আমলকীর চা: শুকনা আমলকী টুকরা করে পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে সঙ্গে ডায়াবেটিস বান্ধব অন্য যে কোনো ভেষজ যেমন- দারুচিনি যোগ করা যেতে পারে।
আমলকী ও মেথির বীজ: মেথি বীজ রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সুপরিচিত। আমলকীর গুঁড়ার সাথে মেথি বীজের গুঁড়া মিশিয়ে পানির সাহায্যে পান করা অথবা খাবারে সামান্য পরিমাণ বীজের গুঁড়া ছিটিয়ে গ্রহণ করা যেতে পারে। এই যৌগ ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আমলকীর আচা: পুষ্টিবিদ অবনী কাউল বলেন, “আমলকীর আচার খাবার তালিকায় যোগ করার এক মজাদার উপায়। ঘরে তৈরি করা অথবা বাজারে আমলকীর আচার পাওয়া যায় যেখানে খুব কম পরিমাণে চিনি যোগ করা থাকে। আমলকী ও মসলার যৌগ চমৎকার স্বাদ সৃষ্টি করে যা খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
মনে রাখতে হবে
আমলকীকে সকলের জন্যই নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে খাবারে প্রতিষেধক হিসেবে আমলকী যোগ করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষত ডায়াবেটিকদের অথবা কোনো ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। আমলকী উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা ডায়াবেটিস প্রতিকারক হিসেবে কাজ করে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্পূর্ণ জীবনযাত্রার ধরনের ওপর নির্ভরশীল। তাই সুষম খাবার গ্রহ্ণ নিয়মিত শরীরচর্চা, ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যের দক্ষ যতেœর মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আমলকী ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী তবে কোনোভাবেই ওষুধের বিকল্প নয়।