নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচনের পর বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ‘ক্ষমতাসীনদের কারসাজি’ দেখছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, “বাজারদরের ভয়াবহ অবস্থা। আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, ধারদেনা করেও সংসার চালাতে পারছে না। “সম্ভবত প্রতারণার ডামি ভোট বর্জনের কারণে জনগণকে শায়েস্তা করতে নির্বাচনের পরই দেশের মানুষকে ঘুষখোর, মুনাফাখোর, দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে নতুন করে সমর্পণ করেছেন শেখ হাসিনা।”
গতকাল রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভীর এমন মন্তব্য আসে। তিনি বলেন, “ডামি সরকারের শপথের পরদিনই কাঁচা মরিচ থেকে শুরু করে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করা অভিসন্ধিপ্রসূত। ক্ষমতাসীনদের প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে। ৭ জানুয়ারির পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মানুষ যেটা খেয়ে পড়ে বাঁচবে, সেই জায়গাগুলোকে টার্গেট করে তারা দাম বৃদ্ধি করছে।” ‘সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যে কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, “ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে একসময় ভোট চাইলেও বর্তমানে মোটা চালের দামও ৫৫/৬৫ টাকার নিচে নয়। অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
“সিন্ডিকেটের লোকেরা ভোট ডাকাতির নির্বাচনে সহযোগিতা করে এখন ফায়দা নিতেই চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। যাকে খাদ্যমন্ত্রী করা হয়েছে, তিনি চাল মিলের মালিক। খাদ্যমন্ত্রী চাল সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।”
রিজভী বলেন, “বাজারে দায়সারা তদারকির নামে চুনোপুঁটি ধরতে ব্যস্ত প্রশাসন। রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবতা হল, কোন চেষ্টায় কাজ হবে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙবে না। ডামি সংসদের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী। মজুতদার, মিল মালিক, লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী সব সরকারের লোক। সরকারের টপ টু বটম সিন্ডিকেট করে দেশ লুটেপুটে খাচ্ছে।”
নির্বাচনের আগে গরুর মাংসের দাম কমানো বিষয়টি তুলে ধরে রিজভী বলেন, “গরুর মাংস কেজি ৬০০/৬৫০ টাকা করা হয়েছিল ভোটারদের তুষ্ট করতে। কিন্তু এখন সেই গরুর মাংস ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনের পরদিনই এক লাফে ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাহলে একদিনেই হাটে-খামারে গরুর দাম বেড়ে গেল? “সিন্ডিকেট করে যে সব কিছুর দাম বাড়ানো হয়, গরুর মাংস তার বড় উদাহরণ। কত রকমারি প্রতারণা জানে এই ডামি সরকার। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকেই অত্যাচারী আর অনাচারী হয়ে ওঠা একটা রাজনৈতিক দল।”
পুঁজিবাজারের ‘নতুন কারসাজি’: রিজভী বলেন, “শুরু হয়েছে নতুন করে কারসাজি। আবারও শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। দীর্ঘদিন মার্কেটকে ধরে রাখা ফ্লোর প্রাইস হুট করে তুলে দেওয়া হয়েছে কাউকে কাউকে বিশেষ সুবিধায় শেয়ার ক্রয়ের জন্য। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নেই, কিন্তু লুটপাটের টাকা আছে শেখ হাসিনার উপদেষ্টাসহ আওয়ামী নেতাদের কাছে। “পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিএসইসির এই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্তে আবারও অসংখ্য বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতারণা-ডামি নির্বাচনের পরেই তারা ফ্লোরপ্রাইস তুলে নিয়েছে। বিএসইসির এই সিদ্ধান্তে আমরা তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই এবং অবিলম্বে আগে যে ফ্লোর প্রাইস ছিল তা পুনর্বহালের জোর আহবান জানাচ্ছি।”
১৯৯৬ সাল ও ২০১০ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার ‘কারসাজি করে লক্ষ-কোটি টাকা লোপাট করে’ বলে অভিযোগ করেন রিজভী। অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মীর নেওয়াজ আলী, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ভোটের পর বিএনপির প্রথম কর্মসূচি ‘কালো পতাকা মিছিল’: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দাম, কারবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং ‘অবৈধ সংসদ বাতিলের’ দাবিতে দুই দিন কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি।
গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “আগামী ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার কালো পতাকা মিছিল হবে সকল জেলা সদরে এবং ২৭ তারিখ শনিবার মিছিল হবে সকল মহানগরে।” দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করল বিএনপি। রিজভী বলেন, “দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কালো পতাকা মিছিল হবে।”
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে জিতে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচন সামনে রেখে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিন সংঘর্ষের পর থেকে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। এসব কর্মসূচি চলাকালে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে। ভোটের দিন ও এর আগের দিনও হরতাল ডেকেছিল দলটি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মীর নেওয়াজ আলী, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলামসহ আরও অনেক নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।