নিজস্ব প্রতিবেদক : রাসেল মোল্লা। পেশায় একজন গাড়িচালক। পেশার আড়ালে রাসেল ডাকাত দলের ‘গোয়েন্দা’ হিসেবে কাজ করত। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ টাকা তুলে বের হলেই দলের সদস্যদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া ছিল তার কাজ। এরপরই ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে (টাকা বহনকারী) অপহরণ করে সর্বস্ব লুটে নিত ডাকাতদলের সদস্যরা।
রাজধানীতে বেশকিছুদিন ধরে এমন একটি চক্র কাজ করছিল। গত সোমবার দিবাগত রাতে র্যাবের একটি দল যাত্রাবাড়ীর ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডিবি পরিচয় দিয়ে ডাকাতচক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- চক্রের হোতা সবুজ খান, মিন্টু পাটোয়ারী, গোয়েন্দা কাজে সহায়তা করা রাসেল মোল্লা, ইকবাল মিয়া, মনিরুল ইসলাম ও খোকন মিয়া। এসময় তিনটি ভুয়া ডিবি জ্যাকেট, দুইটি ওয়াকিটকি সেট, একটি হাতকড়া, একটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ড ফ্লাশ লাইট, পুলিশের মনোগ্রাম সম্বলিত স্টিকার জব্দ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, মতিঝিল ও বাইতুল মোকারমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা নিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করে আসছিল। তারা মূলত ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ও টাকা বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করত। এই কাজের জন্য গ্রেপ্তার রাসেল ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে নির্দিষ্ট একজনকে অনুসরণ করত এবং তার বর্ণনা ও অবস্থান ডাকাতদলের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানিয়ে দিত। মিন্টু পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী তার অন্যান্য সহযোগীরা ডিবি পুলিশের জ্যাকেট সদৃশ্য পোষাক পরা অবস্থায়, হাতে ওয়াকিটকি সেট ও হ্যান্ডকাপ নিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে ভিকটিমকে নিজেদের ডিবি পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিত।’
‘ভিকটিম কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে মাদক কারবারি বা মামলার আসামিসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মারধর করত এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেত। পরবর্তীতে ভিকটিমের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সকল জিনিসপত্র নিয়ে ভিকটিমকে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেত।’
র্যাব বলছে, সবুজ খান ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূলহোতা। ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি যেমন-ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তল ইত্যাদি সরবরাহ করত। ডাকাত দল তার সরবরাহ করা সরঞ্জাম ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করত। এই সবুজ খানের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও পল্টন থানায় একই অপরাধে তিনটি মামলা আছে।
সিএনজি চালক থেকে ডাকাতদলের গোয়েন্দা: র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার রাসেল মোল্লা পেশায় একজন গাড়িচালক। তার পেশার আড়ালে ডাকাত দলের গোয়েন্দা হিসেবেও কাজ করত। ডাকাত সরদার সবুজের আদেশে বিভিন্ন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদেরকে নির্দিষ্ট করে ভিকটিমকে অনুসরণ করে ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়। তখন মিন্টুর দেওয়া তথ্যে রাসেল ভিকটিম কাছে গিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভুক্তভোগীকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত। রাসেলের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এদিকে মিন্টু পাটোয়ারী পেশায় একজন ছদ্মবেশী সিএনজি ও অটোরিকশাচালক। এই পেশার আড়ালে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডাকাতির জন্য তথ্য সংগ্রহ করত। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুবিধাজনক সময় চক্রের অন্য সদস্যরা বাসা, দোকান, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের পথরোধ করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিতো। আর ইকবাল মিয়া ডাকাতির জন্য সবুজের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করত। সে প্রায় তিন বছর ধরে নিজ বাড়ি মাদারীপুর জেলা শিবচর থেকে ঢাকায় এসে ডাকাত দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডিবি পুলিশ সেজে ডাকাতি করে আবার শিবচর চলে যেত। তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় ১টি দস্যুতার মামলা রয়েছে।
ডাকাত দলের ‘গোয়েন্দা’র খবরে ‘ডিবি’ সেজে সর্বস্ব লুট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ