ঢাকা ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ডাকাতি নাকি ভিন্ন কিছু, জাহাজে সাত খুন নিয়ে রহস্য

  • আপডেট সময় : ০৯:১২:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করে রাখা এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাত হত্যাকাণ্ডের পেছনে রহস্যের ইঙ্গিত রয়েছে। শুরুতে বিষয়টি ডাকাতি বলে মনে করলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এটিকে ডাকাতির ঘটনা মনে করছেন না। এখানে ভিন্ন কিছু রয়েছে বলে জানালেন তারা। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিআইডি ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন এমভি আল-বাখেরা জাহাজটি থেকে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ সময় আরও তিন জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজনের মৃত্যু হয়। তবে কারা তাদের হত্যা করেছে, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে একই কায়দায় সবাইকে হত্যা করার ঘটনাটি রহস্যজনক। সহকর্মীদের দেওয়া তথ্যমতে, নিহতরা হলেন জাহাজটির চালক (মাস্টার) কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। নিহত আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহত অপর ব্যক্তির নাম জুয়েল। তাদের সবার বাড়ি নড়াইলে। জুয়েলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জানতে চাইলে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক স্যারের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যেই ওসিসহ ওখানে যাই। গিয়ে দেখলাম, জাহাজের মেঝেতে পড়ে ছিল রক্তাক্ত একটি চাইনিজ কুড়াল। এটি ছিল সারের জাহাজ। অবাক করা বিষয় একটি বস্তাও খোয়া যায়নি। কেউ ডাকাতি করতে এলে তো সার বা জাহাজ কোনও একটি নিয়ে যাবে। কিছুই নেয়নি। আবার জাহাজের কর্মীদের ঘুমন্ত অবস্থায় কোপানো হয়েছে।

অবস্থা দেখে বোঝা যায়, তাদের হত্যার পর পর বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রেখে গেছে একই বিছানায়। সবাই নিজ নিজ কক্ষে একই কায়দায় হত্যার শিকার হওয়ায় কাউকে ডাকাতিতে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আহত অবস্থায় তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ফলে কোনও তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। আহত অপরজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। শ্বাসনালি কেটে ফেলায় তার কাছ থেকেও কোনও তথ্য আমরা নিতে পারিনি। তবে পুরো ঘটনার তদন্ত করছি আমরা। আশা করছি, তদন্তে বেরিয়ে আসবে এর পেছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কিনা। বিষয়টি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তবে এটি ডাকাতি নয়, ভিন্ন কিছু যে তা বোঝাই যাচ্ছে।’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জাহাজের কোনও মালামাল খোয়া যায়নি। সার কী পরিমাণ ছিল, তা মালিকপক্ষ জানালে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সারের বস্তাগুলো সাজানো-গোছানো দেখেছি। সেগুলো ঠিকমতো আছে। প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে, জাহাজ থেকে কিছুই চুরি হয়নি। সাত জনকে হত্যা করা হয়েছে। একজন জীবিত থাকলেও মৃতপ্রায়। কিছু রহস্য তো আছেই। আসলে কী ঘটেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তবে বিষয়টিকে আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বলছি না। মাঝেমধ্যে অনেক জায়গায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা সচেতন ও সতর্ক আছি। তদন্ত করছি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরা যায়। তবে পুলিশের তদন্তের আগে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে নৌপথে নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ এই নৌপথে পণ্যবাহী জাহাজ চলে। যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়, সেটি নিশ্চিত করছি আমরা।’ নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ধারণা করছি রবিবার রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা সোমবার দুপুর ২টার দিকে খবর পেয়েছি। এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রত্যেকের মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জাহাজের পাঁচটি কক্ষে পাঁচ জনের লাশ পেয়েছি আমরা। আরও তিন জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পেয়েছি। পরে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। আট জনই জাহাজটিতে ছিলেন। ধারণা করছি, ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় ও মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।’ ডাকাতি নয়, তাদের টার্গেট ছিল হত্যা উল্লেখ করে সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘জাহাজের মালিকপক্ষ এখানে আসলে আমরা কিছু বিষয় জানতে পারবো। জাহাজে থাকা কোনও মালামাল চুরি হয়নি। ডাকাতি বলে প্রচার হলেও আমার মনে হচ্ছে এটি ডাকাতি নয়। কারণ জাহাজে কয়েক কোটি টাকার সার ছিল। সেগুলো স্পর্শও করেনি তারা। নিহতদের মোবাইলগুলো আমরা পেয়েছি। খুনিরা কিছু নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। খুনিদের টার্গেট ছিল হয়তো হত্যা, অন্য কিছু নয়। তদন্ত সাপেক্ষে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে। আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, এটি ডাকাতি নয়।’ এসব কর্মচারীকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। যদি তারা বাধা দিতেন তাহলে শরীরের অন্য কোথাও আঘাত থাকতো। অথচ সবার লাশ নিজ নিজ কক্ষে বিছানার চাদরে ঢাকা ছিল। সবার মাথায় আঘাত করা হয়েছে, অন্য কোথাও আঘাত দেখা যায়নি। একজনের ছিল গলায় আঘাত। কাজেই এটি কোনোভাবেই ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে না। এজন্য পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিআইডি, পিবিআইসহ পুলিশের সব টিম গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করছে। ফরেনসিকের জন্য যেসব আলামত সংগ্রহ করা দরকার, সব সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

জাহাজে খুন হওয়া ৭ জনের মরদেহ হস্তান্তর, তদন্ত কমিটি
এদিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর মাঝেরচরে জাহাজে খুন হওয়া সাতজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনাটি তদন্তের জন্য কমিটি করেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের বাসস্ট্যান্ড স্বর্ণখোলা রোডে মর্গের পাশে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান নগদ ১০ হাজার টাকা করে নিহত প্রত্যেকের পরিবারের অভিভাবকের হাতে তুলে দেন। এর আগে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মেঘনা নদীতে দুর্ঘটনার কবলে পড়া সার বোঝাই এমভি আল বাখেরা নামক জাহাজ থেকে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। এসময় গুরুতর জখম অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার পর চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে সাতজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হয়। নিহতরা হলেন জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া (৬০), সুকানি আমিনুল মুন্সী (৪০), লস্কর শেখ সবুজ (৩৫), লস্কর মো. মাজেদুল (১৬), লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬), ইঞ্জিনচালক মো. সালাউদ্দিন (৪০) ও বাবুর্চি কাজী রানা (২৪)। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, বিকেলে আমরা নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রধান করে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও জেলা পুলিশের প্রতিনিধি নিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। এ কমিটি আমাদের ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। আজই এ ঘটনায় মামলা হবে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে একজন বাদী হয়ে হাইমচর থানায় মামলা করবেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

ডাকাতি নাকি ভিন্ন কিছু, জাহাজে সাত খুন নিয়ে রহস্য

আপডেট সময় : ০৯:১২:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করে রাখা এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাত হত্যাকাণ্ডের পেছনে রহস্যের ইঙ্গিত রয়েছে। শুরুতে বিষয়টি ডাকাতি বলে মনে করলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এটিকে ডাকাতির ঘটনা মনে করছেন না। এখানে ভিন্ন কিছু রয়েছে বলে জানালেন তারা। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিআইডি ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন এমভি আল-বাখেরা জাহাজটি থেকে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ সময় আরও তিন জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজনের মৃত্যু হয়। তবে কারা তাদের হত্যা করেছে, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে একই কায়দায় সবাইকে হত্যা করার ঘটনাটি রহস্যজনক। সহকর্মীদের দেওয়া তথ্যমতে, নিহতরা হলেন জাহাজটির চালক (মাস্টার) কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। নিহত আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহত অপর ব্যক্তির নাম জুয়েল। তাদের সবার বাড়ি নড়াইলে। জুয়েলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জানতে চাইলে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক স্যারের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যেই ওসিসহ ওখানে যাই। গিয়ে দেখলাম, জাহাজের মেঝেতে পড়ে ছিল রক্তাক্ত একটি চাইনিজ কুড়াল। এটি ছিল সারের জাহাজ। অবাক করা বিষয় একটি বস্তাও খোয়া যায়নি। কেউ ডাকাতি করতে এলে তো সার বা জাহাজ কোনও একটি নিয়ে যাবে। কিছুই নেয়নি। আবার জাহাজের কর্মীদের ঘুমন্ত অবস্থায় কোপানো হয়েছে।

অবস্থা দেখে বোঝা যায়, তাদের হত্যার পর পর বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রেখে গেছে একই বিছানায়। সবাই নিজ নিজ কক্ষে একই কায়দায় হত্যার শিকার হওয়ায় কাউকে ডাকাতিতে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আহত অবস্থায় তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ফলে কোনও তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। আহত অপরজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। শ্বাসনালি কেটে ফেলায় তার কাছ থেকেও কোনও তথ্য আমরা নিতে পারিনি। তবে পুরো ঘটনার তদন্ত করছি আমরা। আশা করছি, তদন্তে বেরিয়ে আসবে এর পেছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কিনা। বিষয়টি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তবে এটি ডাকাতি নয়, ভিন্ন কিছু যে তা বোঝাই যাচ্ছে।’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জাহাজের কোনও মালামাল খোয়া যায়নি। সার কী পরিমাণ ছিল, তা মালিকপক্ষ জানালে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সারের বস্তাগুলো সাজানো-গোছানো দেখেছি। সেগুলো ঠিকমতো আছে। প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে, জাহাজ থেকে কিছুই চুরি হয়নি। সাত জনকে হত্যা করা হয়েছে। একজন জীবিত থাকলেও মৃতপ্রায়। কিছু রহস্য তো আছেই। আসলে কী ঘটেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তবে বিষয়টিকে আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বলছি না। মাঝেমধ্যে অনেক জায়গায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা সচেতন ও সতর্ক আছি। তদন্ত করছি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরা যায়। তবে পুলিশের তদন্তের আগে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে নৌপথে নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ এই নৌপথে পণ্যবাহী জাহাজ চলে। যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়, সেটি নিশ্চিত করছি আমরা।’ নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ধারণা করছি রবিবার রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা সোমবার দুপুর ২টার দিকে খবর পেয়েছি। এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রত্যেকের মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জাহাজের পাঁচটি কক্ষে পাঁচ জনের লাশ পেয়েছি আমরা। আরও তিন জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পেয়েছি। পরে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। আট জনই জাহাজটিতে ছিলেন। ধারণা করছি, ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় ও মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।’ ডাকাতি নয়, তাদের টার্গেট ছিল হত্যা উল্লেখ করে সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘জাহাজের মালিকপক্ষ এখানে আসলে আমরা কিছু বিষয় জানতে পারবো। জাহাজে থাকা কোনও মালামাল চুরি হয়নি। ডাকাতি বলে প্রচার হলেও আমার মনে হচ্ছে এটি ডাকাতি নয়। কারণ জাহাজে কয়েক কোটি টাকার সার ছিল। সেগুলো স্পর্শও করেনি তারা। নিহতদের মোবাইলগুলো আমরা পেয়েছি। খুনিরা কিছু নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। খুনিদের টার্গেট ছিল হয়তো হত্যা, অন্য কিছু নয়। তদন্ত সাপেক্ষে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে। আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, এটি ডাকাতি নয়।’ এসব কর্মচারীকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। যদি তারা বাধা দিতেন তাহলে শরীরের অন্য কোথাও আঘাত থাকতো। অথচ সবার লাশ নিজ নিজ কক্ষে বিছানার চাদরে ঢাকা ছিল। সবার মাথায় আঘাত করা হয়েছে, অন্য কোথাও আঘাত দেখা যায়নি। একজনের ছিল গলায় আঘাত। কাজেই এটি কোনোভাবেই ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে না। এজন্য পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিআইডি, পিবিআইসহ পুলিশের সব টিম গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করছে। ফরেনসিকের জন্য যেসব আলামত সংগ্রহ করা দরকার, সব সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

জাহাজে খুন হওয়া ৭ জনের মরদেহ হস্তান্তর, তদন্ত কমিটি
এদিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর মাঝেরচরে জাহাজে খুন হওয়া সাতজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনাটি তদন্তের জন্য কমিটি করেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের বাসস্ট্যান্ড স্বর্ণখোলা রোডে মর্গের পাশে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান নগদ ১০ হাজার টাকা করে নিহত প্রত্যেকের পরিবারের অভিভাবকের হাতে তুলে দেন। এর আগে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মেঘনা নদীতে দুর্ঘটনার কবলে পড়া সার বোঝাই এমভি আল বাখেরা নামক জাহাজ থেকে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। এসময় গুরুতর জখম অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার পর চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে সাতজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হয়। নিহতরা হলেন জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া (৬০), সুকানি আমিনুল মুন্সী (৪০), লস্কর শেখ সবুজ (৩৫), লস্কর মো. মাজেদুল (১৬), লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬), ইঞ্জিনচালক মো. সালাউদ্দিন (৪০) ও বাবুর্চি কাজী রানা (২৪)। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, বিকেলে আমরা নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রধান করে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও জেলা পুলিশের প্রতিনিধি নিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। এ কমিটি আমাদের ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। আজই এ ঘটনায় মামলা হবে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে একজন বাদী হয়ে হাইমচর থানায় মামলা করবেন।