নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সব ধরনের অরাজকতার বিরুদ্ধে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজ, ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা।
সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ এবং নারী-শিশুসহ সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আসাদগেটে সড়কের এক পাশ অবরোধ করে রেখেছিল শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের আশ্বাসে তিন ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে সড়ক ছেড়েছেন তারা।
৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম তিতুমীর শিক্ষার্থীদের: তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণসহ ডাকাতি, গুম, খুনের সংখ্যা লাগাতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই অবস্থায় আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা না হলে কঠোর কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা এই হুঁশিয়ারি দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশে চলমান অরাজকতা, ধর্ষণ, ছিনতাই, লুটতরাজের বিরুদ্ধে আমাদের এই মানববন্ধন কর্মসূচি। অনতিবিলম্বে এসব অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের মূল দাবি সরকার যেন এসবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ গুম, খুন এবং ধর্ষণের শিকার না হন।
নাসরিন জাহান নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এখন অনিরাপদ বোধ করছি। আমি চব্বিশের আন্দোলনে ছিলাম, চব্বিশ পরবর্তী সময়ে আমরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে আমরা সম্পূর্ণ এর বিপরীত দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমার মায়ের নিরাপত্তা কোথায়? আমার নিরাপত্তা কোথায়? আমার দেশে আমি স্বাধীনভাবে ঘুরবো, আমার বোন ইচ্ছা হলেই রাত ১২টায় ঘুরতে বের হবে। এই দেশের সরকার তার নিরাপত্তা দেবে। কেন সে এখন সন্ধ্যার পর বাইরে যেতে পারবে না? এটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে।
মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ রাব্বী নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে আমরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছি। জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আমরা এমন একটি সুন্দর রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছি, যেখানে অপরাধ প্রবণতার অবসান ঘটবে। কয়েক দিন ধরে ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, চব্বিশ পরবর্তী এই সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষণের, ছিনতাইসহ সব অরাজকতার কোনো ঠাঁই হবে না। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে কঠোর কর্মসূচির দিকে আমরা যাব। প্রয়োজনে আমরা আবারও চব্বিশের মতো আন্দোলন গড়ে তুলব, তবুও আমরা ধর্ষকের সঙ্গে কোনো আপস করব না।
এর আগে বেলা ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছে চলবে’, ‘আমার বোন কান্না করে, প্রশাসন কি করে’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ইডেন কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ এবং নারী-শিশুসহ সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইডেন কলেজে শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ইডেন কলেজের বকুলতলায় এই কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি সারাদেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। নারী নির্যাতন রোধে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে নারীরা নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন। আমরা চাই, নতুন বাংলাদেশে কেউ যে আর ধর্ষণের শিকার না হন। আমরা চাই, ভাইয়েরা-বোনেরা একসঙ্গে আন্দোলন করবে, রাজপথে থাকবে, দেশ গড়বে।
সুমাইয়া মিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, আইনের শিথিল প্রয়োগ এবং নারী নিরাপত্তার অভাবকে তুলে ধরেছে। আর অপরাধীরা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছে না। যা অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়াচ্ছে।
তাসলিমা আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় নারীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। আবার অনলাইনেও নারীদের হেনস্তা করার প্রবণতা বাড়ছে, যা পরবর্তীতে বড় অপরাধে রূপ নেয়। নতুন বাংলাদেশেও নারীরা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় নির্যাতিত। আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চেয়ার দখল করে বসে আছেন কিন্তু কাজের বেলা শূন্য। তাই আমরা রাস্তায় নেমে এসেছি। অবিলম্বে রাষ্ট্রকে দায়বদ্ধতা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আসাদগেটে সড়কে তিন ঘণ্টা ছাত্র-জনতা: সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আসাদগেটে সড়কের এক পাশ অবরোধ করে রেখেছিল শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের আশ্বাসে তিন ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে সড়ক ছেড়েছেন তারা।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ছাত্র-জনতা আজকে যে বিষয়টি নিয়ে এখানে বসেছিল আমরা তাদের সঙ্গে একই সুর মিলিয়েছি। আমরা ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেব। যেকোনো ধরনের মামলা বা যেকোনো ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদের আমরা এই আশ্বস্ত করেছি। ভবিষ্যতে আমরা একসঙ্গে ধর্ষকের বিরুদ্ধে কাজ করব।
এর আগে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে নিউমার্কেট-মিরপুর সড়কের আসাদগেট এলাকায় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। অবরোধে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ও এলাকার জনতা অংশ নেন। প্রথম দিকে আসাদগেটের পুরো সড়ক অবরোধ করা হয়। পরে তালুকদার ফিলিং স্টেশনের সামনের এক পাশে অবস্থান নেন তারা। এসময় তারা ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও প্রকাশ্যে বিচার দাবি করেন।
এদিকে, একই দাবিতে আজ তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। দুপুরে তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে তারা এ সমাবেশ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণসহ ডাকাতি, গুম, খুনের সংখ্যা লাগাতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই অবস্থায় আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা না হলে কঠোর কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, একই ইস্যুতে ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।