ঢাকা ১২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

ডাকাতির স্বর্ণের ‘নিরাপদ মার্কেট’ তাঁতীবাজার

  • আপডেট সময় : ০১:২৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশজুড়ে ডাকাতি হওয়া স্বর্ণ নিরাপদে বিক্রির জন্য তাঁতীবাজারের একটি সিন্ডিকেটকে বেছে নিয়েছে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র। রাজধানীর রাপা প্লাজা ও আশুলিয়ার পৃথক দুটি ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। এই দুই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এদের মধ্যে পাঁচ জন আদালতে স্বর্ণের দোকানে চুরি, বিক্রি এবং পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ডাকাতি করা স্বর্ণ তাঁতীবাজারে আনা হয়। সাম্প্রতিক কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।’
মুক্তা ধর বলেন, ‘ডাকাতির লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার রাজধানীর তাঁতীবাজারে অবৈধভাবে বেচাকেনার সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে সিআইডি’র কাছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে লুন্ঠিত স্বর্ণের অলংকার গলিয়ে স্বর্ণের পাত বানিয়ে মূলত তাঁতীবাজারে অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে।’
সিআইডি জানায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানার নয়ারহাট বাজারে ১৯টি স্বর্ণের দোকানে একযোগে ডাকাতি হয়। সশস্ত্র ডাকাতরা স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং নগদ টাকা নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়।
মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে মধ্যবাড্ডা থেকে শাহানা আক্তার (২৪) নামে এক নারীকে গ্রেফতারের পর তার বাসা থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৪০ টাকা এবং ৩/৪ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে সিআইডি। ১৬ সেপ্টেম্বর ওই নারী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গ্রেফতার করা হয় আরও দুজন। তারা হলেন আল মিরাজ মিন্টু (৩৮) ও কামাল খান (৩৯)। তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আশুলিয়ার নয়ারহাটে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত আনোয়ার হাওলাদার (৩৯), মো. দেলোয়ার হোসেন খলিফা (৩৬), আব্দুর রহিম (৫৫), আল মিরাজ ওরফে মিন্টু (৩৮), কামাল খাঁ (৩৯) ও মো. সাগরকে (৪০) গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের গ্রেফতারের পর সিআইডি নিশ্চিত হয়, চোরাই স্বর্ণ তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সবুজ রায় (৩২) ও আব্দুর রহিম (৩১) ক্রয় করেন। এরপর তাদেরও সিআইডি’র হেফাজতে নেওয়া হয়। গ্রেফতার শাহানা, আনোয়ার, দেলোয়ার, সবুজ রায়, আব্দুর রহিম, আল মিরাজ ওরফে মিন্টু, কামাল খাঁ আশুলিয়ায় ডাকাতির ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকার নয়াবাজার এলাকার আব্দুর রহিমের ভাড়া করা বাসা হতে আশুলিয়ার ডাকাতির ঘটনার লুন্ঠিত ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে সিআইডি। সবুজ রায় ও আব্দুর রহিম গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেন। এ ঘটনায় নেওয়া ১২ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার হয় সবুজ রায়ের নায়বাজারের বাসা থেকে।
মুক্তা ধর বলেন, ‘সবুজ রায় এবং আব্দুর রহিম তাদের জবানবন্দিতে তাঁতীবাজারের খাঁজা করপোরেশন, রাজিয়া বুলিয়ান স্টোর, সুমন বুলিয়ান স্টোর বা স্বর্ণের দোকানের নাম উল্লেখ করেন।’
তিনি বলেন, ‘আশুলিয়া ও রাপা প্লাজায় ডাকাতি মামলার তদন্তে তাঁতীবাজারে অবৈধ ব্যবসার চক্র চিহ্নিত হয় এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের নজরদারিসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ডাকাতির স্বর্ণের ‘নিরাপদ মার্কেট’ তাঁতীবাজার

আপডেট সময় : ০১:২৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশজুড়ে ডাকাতি হওয়া স্বর্ণ নিরাপদে বিক্রির জন্য তাঁতীবাজারের একটি সিন্ডিকেটকে বেছে নিয়েছে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র। রাজধানীর রাপা প্লাজা ও আশুলিয়ার পৃথক দুটি ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। এই দুই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এদের মধ্যে পাঁচ জন আদালতে স্বর্ণের দোকানে চুরি, বিক্রি এবং পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ডাকাতি করা স্বর্ণ তাঁতীবাজারে আনা হয়। সাম্প্রতিক কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।’
মুক্তা ধর বলেন, ‘ডাকাতির লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার রাজধানীর তাঁতীবাজারে অবৈধভাবে বেচাকেনার সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে সিআইডি’র কাছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে লুন্ঠিত স্বর্ণের অলংকার গলিয়ে স্বর্ণের পাত বানিয়ে মূলত তাঁতীবাজারে অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে।’
সিআইডি জানায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানার নয়ারহাট বাজারে ১৯টি স্বর্ণের দোকানে একযোগে ডাকাতি হয়। সশস্ত্র ডাকাতরা স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং নগদ টাকা নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়।
মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে মধ্যবাড্ডা থেকে শাহানা আক্তার (২৪) নামে এক নারীকে গ্রেফতারের পর তার বাসা থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৪০ টাকা এবং ৩/৪ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে সিআইডি। ১৬ সেপ্টেম্বর ওই নারী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গ্রেফতার করা হয় আরও দুজন। তারা হলেন আল মিরাজ মিন্টু (৩৮) ও কামাল খান (৩৯)। তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আশুলিয়ার নয়ারহাটে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত আনোয়ার হাওলাদার (৩৯), মো. দেলোয়ার হোসেন খলিফা (৩৬), আব্দুর রহিম (৫৫), আল মিরাজ ওরফে মিন্টু (৩৮), কামাল খাঁ (৩৯) ও মো. সাগরকে (৪০) গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের গ্রেফতারের পর সিআইডি নিশ্চিত হয়, চোরাই স্বর্ণ তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সবুজ রায় (৩২) ও আব্দুর রহিম (৩১) ক্রয় করেন। এরপর তাদেরও সিআইডি’র হেফাজতে নেওয়া হয়। গ্রেফতার শাহানা, আনোয়ার, দেলোয়ার, সবুজ রায়, আব্দুর রহিম, আল মিরাজ ওরফে মিন্টু, কামাল খাঁ আশুলিয়ায় ডাকাতির ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকার নয়াবাজার এলাকার আব্দুর রহিমের ভাড়া করা বাসা হতে আশুলিয়ার ডাকাতির ঘটনার লুন্ঠিত ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে সিআইডি। সবুজ রায় ও আব্দুর রহিম গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেন। এ ঘটনায় নেওয়া ১২ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার হয় সবুজ রায়ের নায়বাজারের বাসা থেকে।
মুক্তা ধর বলেন, ‘সবুজ রায় এবং আব্দুর রহিম তাদের জবানবন্দিতে তাঁতীবাজারের খাঁজা করপোরেশন, রাজিয়া বুলিয়ান স্টোর, সুমন বুলিয়ান স্টোর বা স্বর্ণের দোকানের নাম উল্লেখ করেন।’
তিনি বলেন, ‘আশুলিয়া ও রাপা প্লাজায় ডাকাতি মামলার তদন্তে তাঁতীবাজারে অবৈধ ব্যবসার চক্র চিহ্নিত হয় এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের নজরদারিসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।