অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বিমানের টিকিট বিক্রির অর্থের নির্দিষ্ট কমিশনের অংশ রেখে ব্যাংকের মাধ্যমে ডলারে বিদেশি এয়ারলাইনসের কাছে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে অবশিষ্ট টাকা। উভয়পক্ষই এই প্রাপ্য লেনদেন সম্পন্ন করতে রাজি। কিন্তু বাদ সেধেছে ডলার সংকট। গত ১১ মাস ধরে টিকিট বিক্রির প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাঠাতে পারছেন না সেলস এজেন্টরা। কবে এই অর্থ ছাড় হবে, তা এখনও অনিশ্চিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) প্রতিবেদনেও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে ডলার আটকে থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। আইএটিএ গত ডিসেম্বরে জানিয়েছে, বাংলাদেশে বিদেশি বিমানের ২০৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা) আটকে আছে। বেড়েছে টিকিটের দাম। এতে অনেক এয়ারলাইনসের টিকিট মিলছে না। বাংলাদেশে বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিটের টাকাই নয়, জাহাজে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকাও আটকে আছে। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা (আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স)। ডলার-সংকটের কারণে দেন-দরবার করেও এই অর্থ ছাড় করানো যাচ্ছে না। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দুই খাতে। পাশাপাশি যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এই বিমানবন্দর থেকে বিদেশি অন্তত ২০টি বিমান সংস্থা প্রায় ৮০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব বিদেশি বিমান সংস্থার টিকিট বিক্রি হয় স্থানীয় এজেন্টের (জেনারেল সেলস এজেন্ট বা জিএসএ) মাধ্যমে। বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভাড়া পরিশোধের কাজটি হয় দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এমন ৩০টি এজেন্ট আছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে প্রায় ১০০ জাহাজে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। আমদানি কমে যাওয়ায় এখন ৬০-৭০টি জাহাজ চলাচল করে।
বিএসএএ বলছে, পণ্য রপ্তানির ভাড়া দুইভাবে পরিশোধ করা যায়। এক. পণ্য রপ্তানির আগেই ভাড়া পরিশোধ। দুই. বিদেশে পণ্য নেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পণ্য গ্রহণ করে সে দেশে ভাড়া পরিশোধ করে। দুই ক্ষেত্রেই দেশীয় এজেন্ট নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পান। বাকি অর্থ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে (জাহাজের মালিকপক্ষ) পাঠাতে হয়।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য বলছে, ২০২২ সালের প্রথম আট মাসেই পরিবহন করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫০ যাত্রী। চলতি বছর জনশক্তি রপ্তানি বাড়ায় যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বেড়েছে। আবার টার্কিশ, সিঙ্গাপুর ও মালিন্দো এয়ারলাইনস ফ্লাইট আগের চেয়ে কমিয়েছে। এসব মিলিয়ে টিকিটের দাম হু হু করে বাড়ছে। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককের মতো স্বল্পদূরত্বের পথে যেতেও আগের চেয়ে এখন প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এক এজেন্টের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও ৪৫ হাজার টাকায় থাই এয়ারের টিকিট পাওয়া যেত। এখন সেই টিকিটের দাম ৭০ হাজারের বেশি। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহারুল হক ভূঁইয়া বলেন, আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স না পেলে স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমাবে, টিকিটের দাম বাড়াবে। এভাবে চললে ভিসা পেয়েও কেউ কেউ উড়োজাহাজের টিকিট পাবেন না। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্সের কারণে অনেক উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছে বলে শুনেছি। চাহিদা বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই টিকিটের দাম বেড়ে যাবে।’
ডলার সংকটে বিমানের চার হাজার কোটি টাকার কী হবে?
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ