নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংকে ডলারসংকটে চরম বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি জিনিসপত্র আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে পারছেন না আমদানিকারকরা। অন্যান্য খাতের সঙ্গে ডলারসংকটের প্রভাব পড়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পেও। ডলারসংকটে বিপাকে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক কোম্পানি আইএফএস টেক্সওয়্যার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকে ঋণপত্র বা এলসি খুলে থাকে। আইএফএস টেক্সওয়্যারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক দুটিতে ঋণপত্র খোলার জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছেন না তারা। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহ উদ্দিন আহমেদ শামীম বলেন, ‘ডলারসংকটে আমদানির উদ্দেশ্যে কোনো ঋণপত্র খোলা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকে ১০০ শতাংশ মার্জিন দিলেও এলসি খুলছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভালো ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করতে গেলে অনেক ধরনের সার্টিফিকেট দরকার পড়ে। সার্টিফিকেট নবায়ন করতে গেলেও ডলারে পেমেন্ট করতে হয়।
‘এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের এক্সেসরিজ বাইরে থেকে আনতে হয়, কিন্তু ডলারসংকটে ব্যাংক আমাদের নিরুৎসাহিত করছে।’ নারায়ণগঞ্জের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ফোর ডিজাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান জানান, তারা যে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করেন, সেখানে ডলারসংকটের জন্য এলসি খুলতে পারছেন না।
তার ভাষ্য, ‘আগে দুই লাখ ডলার চাইলে পাওয়া যেত। এখন এ পরিমাণ চাইলে ব্যাংক ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বেশি ডলার দিচ্ছে না। ব্যাংকগুলো চাহিদার ৫০ শতাংশ ডলারও দিতে পারছে না।’
জানা যায়, রপ্তানিকারকদের বেশির ভাগকেই আমদানিও করতে হয়। এতদিন অনেকেই সেই রপ্তানি আয় দিয়েই আমদানি ব্যয় মেটাতেন, কিন্তু এখন রপ্তানিতেও কালো মেঘের ঘনঘটা। ফলে রপ্তানি আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে, যা সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। নারায়ণগঞ্জের লাইথ গ্রুপ সব ধরনের নিট পণ্য রপ্তানি করে। গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির মোহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা রপ্তানি করি। ফলে আমাদের কাছে ডলার থাকে। আমদানি করার সময় সেই ডলার ব্যয়ের সুযোগ আছে, কিন্তু গত তিন মাস ধরে আমার কোম্পানির ৬০ শতাংশ রপ্তানি কমে গেছে। ‘আগে যেখানে প্রতি মাসে রপ্তানি হতো ১ কোটি ডলার, সেখানে এখন করছি ৪০ লাখ ডলার। ফলে রপ্তানির আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’ এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলারের জোগান দিয়ে এলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারাও হাত গুটিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে এখন নিজেদের ডলার দিয়ে চলতে হচ্ছে, কিন্তু প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে টান পড়ায় সেই সক্ষমতাও হারাতে বসেছে তারা।
একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা পাচ্ছে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ফলে এলসি খোলার জন্য প্রতিদিন আমদানিকারকরা এলেও অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া তা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে একজন ট্রেজারি-প্রধান জানান, গত তিন মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এলসি খোলার জন্য ডলার চাইছে তার ব্যাংক, কিন্তু মিলেছে চাহিদার ১০ শতাংশ।
ডলারসংকটে বিপাকে পোশাক রপ্তানিকারকরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ